সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গাঙশালিক ২

গাঙশালিক--১৭

পরদিন হইতেই সাবিত্রী ছেলের বিবাহর জন্য ব্যাস্ত হইয়া পরিল। ঘরদ্বোর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করিয়া পরদিন হইতে ধোয়া মোছা  কাপড় চোপড় দৌত করার কাছে নেমে পরল। নিতাই বাপ দাদার একমাত্র উত্তরাধিকার হওয়ায় এই ঋষিপল্লীতে তাহার আপন কেহ নাই।

সমাজের কালচার মানুষ সহজে ছাড়িতে পারে না।যদিও এরা সনাতন ধর্ম পালন করে তবু ঋষিপল্লীর একটা নিজস্ব সংস্কৃতি রহিয়াছে । এই সংস্কৃতির এর আদি অন্ত খুঁজলে ঋষিগণ হিন্দুদের প্রধান মনে হইবে। যেহেতু সনাতন ্রধর্মালম্বীদের পন্ডিতগণ জাতপাত বলিয়া এদের খাটো করিয়া রাখিয়াছে সেই হেতু আমরা তাহা লইয়া বিশ্লেষন করিতে চাহি না। তবে এদের এই নিজস্ব সংস্কৃতি বংশপরোশপর মেনে আসিতেছে। তাহার মধ্যে বাল্যবিবাহ রেয়াজ র্রীতিতে পরিগনিত। এদের প্রধান পেশা পায়ের জুতো মেরামত করা। লেকে ইহাদের মুচি বলিয়া সম্ভোদন করিয়া থাকে। 
নিতাইসহ ঋষিপল্লীর সকলেই অধ্যবধি এই পেশায় নিয়োজিত। গোপালের বাড়িতে যদিও ছেলের বিয়ে তবু সে রোজকার ন্যায় আজো কাজের জন্য খুব ভোরবেলা কাঠের বাক্স কাঁধে নিয়েই বাহির হইয়াছ। যাইবার পর বাসুদেব আসিল কৃষ্ণ তখন বাড়ি ছিল না। কৃষ্ণর চেয়ে বাসু বেশ লম্বা চওড়া দেখতে একটু স্বাস্থ্যকর বটে। তাহাকে দেখিয়া অনুমাণ করা যায় না যে সে কৃষ্ণর সমবয়সী। মাসীর সহিত কি বিষয় নিয়ে গল্প করিতেছিল তা জানা গেল না কিন্ত কৃষ্ণ বাড়ি ফিরিয়া দেখিল,মায়ের সহিত বেশ হাসাহাসি করিতেছে। বাড়িতে প্রবেশ করা মাত্রই সাবিত্রী বলিল,
ঃএ্যাহন থিকা কাজকাম কিছু করবি। বউ আইলি পয়সা নাগবে তো তর। কয়দিনে বাপের কাছে রাইতে রাইতে বেবাক হিকপি।
বাসু কহিলঃ 
আমার হাতে কাম কাইজ করবি?
বাসুর সহিত কথা বলতে মন চাইল না। মাকে কহিল,
ঃ অ আমারে খারাপ খারাপ কথা কয়, অর লগে কামে যামু না। বাপের কাইমই হিকমু। তুই তারে কইস,আমারে হিকাইতে
সাবিত্রী চুপচাপ রহিল কিন্ত বাসু কহিল,
ঃতরে কেই কামকাইজ দিবো , যদি মানসের জুতা নষ্ট অয় 

        ১৭



ঃমারলি আমার মারবো তাতে তর কি?
সাবিত্রী কহিল
ঃ ওর নগে তুই রাগ দেহাস ক্যা?  আইজ বাদে কাইল বিয়া, তুই সবকিছু হিকপি কি কইরা, অয় যা জানে তাই তরে কইছে। বাসু! দুইজনে একনগে থাকপি, অয় তর ছোট অয় কিছু কইলে আমারে কইবি,তারপর দেহেমনি।

কৃষ্ণর ওসবকিছু বুঝিবার বয়স হয়নি। কিন্ত সে ভাবিল, মা তাহার পক্ষে কথা কহিতেছ ণা। তাইতো সে চুপ রহিল, 
কৃষ্ণর বিবাহ এটা প্রথমত তাহার নিকট ছিল আনন্দ উল্লাসের বিষয়। কিন্ত এখন ক্রমেই তাহা তাহাকে ভাবিয়া তুলিতেছে। সে ছোট থেকে দেখেছে, এখানে যে বাড়িতে বিবাহ হয়, সেখানে ঢোল ঢঙগর  মাইক বাঁজাইয়া খুশিতে ভরে উঠে। সে মনে মনে ভাবিয়াছিল,তাহাদের বাড়ি বিয়ে ইচ্ছে মত বাজি পটকা ফুটাইবে। রং কালি মেখে রাবন হুনুমান সাঁজিবে, তারপর হুংকার ছাড়িবে সীতাকে কাপড় ধরিয়া টানাটানি করিবে, শেষে ধুমধাম করিয়া বড়রা আলোচনা করিবে, বন্ধুদের নিয়ে ঘাটে স্নান করিয়া গায়ের রং তুলিতে যাইবে, 
সেখানেও কত ডুবোচরি খেলিবে, তারপর মা বকিতে বকিতে অস্থির হইব, চোখদুটো লাল টকটকে হইলে তবেই স্নান করা শেষ হইবে। 
কিন্ত কৃষ্ণর সেই সব মনোবাসনার কোনটাই লক্ষন দেখা পাইতেছে না। বরং উল্টোপাল্টা সব বিশ্রী বিশ্রী কথা তাহাই শুনিতেছে। সে মনে মনে চুপ ছিল যে, মা ওসব শুনলে বকবে। বাসুর সহিত মিশতে দেবে না, আজকাল হরেক রকম ভাবনা তাহাকে আরো একাকী করিয়া তুলিছে। 
 মায়ের উপর তাহার মনে মনে খুব একা একাি রাগ করে। কারন,  সে ভাবে বাসুদের সহিত মিসতে দেবে না। লোকজন ওসব কথা বললে নিষেধ করবে। সারাদিন হৈ চৈ করবে কিন্ত তার কোনটাই হইতেছে না।
কিন্ত বাসুকে এত ভালবাসা তাহার ছোট্র মাথায় কিছই ধরিল না। তাই তো মা তাহার সহিত একসাথে চলতে বললেও তাহার মন সায় দিচ্ছিল না। মুখে কিছুই না কহিলেও মাথা নাড়িল যে মায়ের কথা মানিয়া চলিবে। বাসুদেব বেশখানিকক্ষন চুপ থাকিয়া শেষ মেষ কহিল,


             ১৮

মাসী আমি যাই গ্যা পরে আবার আসমুনি

বাসু চলিয়া গেল মাথার উপর তখন খাড়া রোদ। চৈতী সসাসে এ সসময় যদিও উঠোনে থাকা খুবই ক্লিন্তকর। তাই তো ঘরে যাইবার চাহিরে তাহার মা কহিল,
ঃঘরে যাইস না। দেখতছোস না ঘর লেপছি। স্নান কইরা ঘরে যাইবি।
ঃআইচ্ছা
খা খা খা রোদে কৃষ্ণ বেশিসময় দাড়াইল না। নতুন প্যান্টা আজকার সব সময় পরিয়া থাকে। 
দুপ্ুরের আগেই গোপাল বাড়ি ফিরিল, সাবিত্রী সন্মুখে দাড়াইয়া জানিতে চাহিল, এত তারাতারি আিক্যা কেন আসিলো
ঃদশ টেকা পাইছি তাই ভাবলুম আর দেরী করুম না। আর কেসনের জন্য বাঁশ কেনোন লাগব। খায়াই নদীর পাড়ে যামু দেহি দুইডা বাঁশ কেনোন যায় কি না।
ঃপাহা বাঁশ কেনো 
সাবিত্রী তেমন কিছুর আর কহিহ না। দুপুরে ভাত খাইবার পর গোপাল কৃষ্ণ কে সাথে নিয়ে গেল বেতিল নদীরপাড়ে বাঁশ কিনিবার জনৌ। বাড়ি থেকে তিন কিলো দুরে, ওখানে যাইবার েকটাই সমান্তরাল রাস্তা। তবে রাস্তা খানিতে গরুরগাড়ী যাতায়াত করে। কাচা রাস্তায় গুরুগাড়ী চলাচলে খানাখন্দে ভরপুর। তাহারা বাপছেলে পাশাপাশি কিছুদুর যাইতেই গোপাল প্রচন্ড গরমে হাপাইয়া উঠিল। কুষ্ন কহিল,
ঃবাবা ধীরে যাও, আমি গরমে ঘাইমা যাইতেছি।
্ঃতারাতারি না গেলে হেরে পামু না,,,
তুই ধীরে ধীরে হাইটা আয়, গামছা নিবি, ওইডা দিয়া মুখ মোছ।
ঃতাইরি দেও
গামছা কৃষ্ণর হাতে দিয়াই অনেকটা দৌড়ানোর মত করিয়া চরিতে লাগিল। মিনিট পাসাতেক এর মধ্যে বাবা ছেলে দুজন বেশ দুরত্বে চরিয়া গেল।
কৃষ্ণ পাহাড়ের মত উচু নিচু সমান্তরাল পথটি ধরিয়া চলিলেও তাহার মধ্যে নানান ভাবনায় ভর করিয়া ধীরেপায়ে পথ চলিতে লাগিল 
প্রায় মাঝামাঝি পথ অত্রিকোম করিয়া চলিৈছে। মেঠো পথটার দুধরে আবাদী জমি। রাস্তাটির বামপাশে চরের মত নিম্নান্চল কিন্ত ডান পাশে উচু সমতল ভুমি। কিন্ত চেৈত্র মাসের শেষদিকে তাইতো দুইধারেই এখন ফাকা। গ্রাম বলতে সামনের ঐ পুর্বপাশের গ


                  ১৯

গ্রামটি চোঁখে পরে। গোপাল আর কৃষ্ণ তাহারা এতটাই দুরত্বে আছে যে কেহ কাহাকেই আর দুর হতে দেখা সম্ভব না। কিন্ত মাত্র আধাক্রোশ হাটিয়ায়াই এই কিশোর ছেলেটার পা আর চলিতেছিল না। কিন্ত গরমের মধ্যে বসিবার মত তেমন কোন গাছগাছালিও নাই, তবে দশ মিনিটের মত সামনের দিকে এগুলে একটা হিজলগা্ছ আছে। কৃষ্ণ তাহা আগে থেকেই জানে। কারন, গাঁয়ের এই মেঠোপথ তাহার নখদর্পণে। রাস্তায় কথা কহিবার মত তেমন কোন লোক পাইল না, দুএকজনের সহিত যদিও দেখা সাক্ষাৎ মিলিল তাও তাহারা অপরিচিত। সে মনো মনে ভাবিল হিজলতলায় যাইয়া নিজে বিশ্রাম করিবে। তারপর সে সামনের দিকে আগাবে। কিন্ত হিজলতলার কাছাকাছি যাইতেই চোঁখে পরিল তিনচারটে তার সমবয়সী ছেলে কিছু একটা ধরাধরি করিয়া হিজলগাছের কাছাকাছি আসিতেছে। কৃষ্ণ প্রথমে বিষয়টি গুরুত্ব দিল না। কিন্ত পরমুহুর্তে সে ভাবিল হয়তো কোন মরা ফেলিয়া যাইতে পারে।
দুর থেকে তাহা আন্দাজ করিয়াই এইবার সে দৌড় দিতে শুরু করল। হাফাইতে হাফাইতে সে খুব জোরে ছুটল। তারপর তাহাদের কাছাকাছি যাইতেই একটি ছেলে বলিল,
ঃওই মুচি বাচ্চা , একলা চামরা ছিলাইতে পারবি?
কৃষ্ণ তাহাদের দিকে না তাঁকাইয়াই ঘামে ভেজা শরীর খানি দিকে একবার তাঁকাইল, পরমুহুর্তে সে কোমরে বাঁধা পুরোনো কাপড়ে জরানো পাঁচইন্চির মত ছুরিখানা বাহির করিয়া মরা বকরি খানার ডানপায়ের গোনালীতে ছুরি চালাইল, 
পাঠক,
ঋষিপল্লির ছেলে গুলো বিদ্যাশিক্ষা বলিতে ইহারা মরা  পোানীর চামরা অতি অল্প বয়সেই ছাড়ানো শিখিয়া ফেলে কারন, এটা বাচ্চাদের প্রাথমিক ট্রেনিং এর মত। ছাগল ভেরা কোথাও মরিলে তিন চারছরের বাচ্চা থেকে কিশোর বয়সের সকলেই তাহা ছাড়ানোর পর বিক্রির টাকা ভাগবাটোয়ারা করিয়া থাকে। আরো আশ্চরযের বিষয়টি হলো মুচিপরিবারের ছোটবড় সকলেই একখানি চাকু রাখিতে অভ্যাস্ত। কারন মৃতপ্রানী দেহ।যতজন ছুইবে  চামরা বিক্রি

              ২০


কৃষ্ণ খুব দ্রততার সহিত চামরা ছাড়াইতে ব্যাস্ত হইয়া পরিল। উৎসুক ছেলেগুলো তাহা কিছুক্ষন দেখিবার পর তাহারা চলিয়া গেল। কিন্ত সে তাড়াহুরো করিতে লাগিল এই ভেবে যে যদি কেহ আসিয়া দে্খে ফেলে তবে তাহাকেও ভাগ দিতে হইবে। কারন মুচিদের সমাজের এটাই রীতিনীতি।
যাহা হোক আনুমানিক কুড়ি মিনিটের মধ্যেই মৃতপ্রাণীটির ছাল ছাড়ানো হইয়া গেল। একা এই কাজটি করিতে নিতান্তপক্ষে ক্লান্ত হয়ে পরেছিল। যদিও মাথার উপর এখন আর খাড়া রোদ নাই। কৃষ্ণ চামরাটি লইয়া একবার ভাবিল বাড়িতে চলিয়া যাইবে আবার ভাবিল বাবার জন্য অপেক্ষ করিবে। তারপর অনেককাল সেইখানে বসিয়া রহিল। 
কৃষ্ণ অবশেষে অপেক্ষা করিতে লাগল তাহার বাবার ফেরার জন্য। প্রায় ঘন্টাখানেক পর দুরে কোথাও আযানের শব্দ কানে ভেসে এলো।  সে মনে মনে ভাবিল আচ্ছা তাহারা কানের মধ্যে হাত রেখে আযান দেয় কেন? মাকে সে রোজ সকাল সন্ধা ঘন্টা উলুধ্বনি, শাঁখ বাজাইতে দেখে তাহা লই্রযাও সনে মনে বিস্তর গবেষনা করিতে লাগিল। কিন্ত মাথার উপর একমাত্র এই হিজলগাছটি ছাড়া জনসানবের চিহ্ নাই। হঠাৎই মনে হইল সা সা সা করিয়া এসে কি যেন হিজল গাছে বসিছে।কৃষ্ণর গা গানি ঝাকি মেরে বরফের মত হইতেই উপরের দিকে চোঁখে মেলল দেখিল বেশ কয়েকটা শকুন হিজলের মগডালে। চামরাটা যদিও তখন তাহার সামনে তবু ইতচ্তত হইল। শকুন চামরায় মুখ লাগাইবে না তো। কিন্ত দুমিনিট পর দেখিল, যে মৃত ছাগলটির নারীভুরি লইয়া একেেঅপরে টানাটানি করিছে। তখন একা মনে মনে খুব হাসিতে লাগিল। কারন সে মনে মনে ভাবিল তার সমবয়সী ছেলেদের মতনওরাও ঝগড়াটে তাহা না হইলে মরা ছগলের অত টুকরো থাকিতে কেন তারা সামান্নননারীভুরি লিয়া টানাটানি করে। দেখিতে তেখিতে আরো অনেক শকুন সেখানে উপস্থিতি হইল। এও ভাবিল ঠিকনযে তারা আমাদের মতই, গন্ধ শুকে শুকতে চলে আসে। কিছুকতাইতো সে এবার চামরার উপর বসিয়া পরিল 


             ২১


কিন্ত চামরার উপর বসা মাত্রই সে দেখিল তাহার বাবা বাঁশ কাঁধে লইয়া আসিতেছে।  তখন ডান পা নিচে চামরাটা রেখে উঠে দাড়াইল, কাছাকাছি আসতে যদিও খুব বেশী দেরী হইল না। কিন্ত গোপাল দির থেকেই চেচিয়ে উঠল, 
ঃতারাতারি আয় পেছনে ধর 
ঃবাবা ছাগীর চাম
মুহুর্তে গোপালের মুখখানা হাসিতে ভরিয়া উঠিল। 
গোপালের মনে এতক্ষণ ধরে পুষে রাখা রাগ মুহুর্তে মাটি হইয়া গেল। কৃষ্ণর পায়ের নিবট ধপাস করিয়া দুটি বাশ ফেলিতেই শকুনগুলো উড়াউড়ি করিয়া একটি দুরে বসিল। গোপাল সৃত ছাগলের চামরাটি ছড়াইয়া বেশ কয়েকবার তা দেখিতে লাগিল। তারপর তা ভাজ করিয়া করিয়া কৃষ্ণ কে কহিল,
ঃদেইহা দেইহা কাম করবি, 
এই বলিয়াই ছোটমোটো সাইহের দুটো বাঁশ আবার কা্ধে চাপিল গোপালকে কহিল,
ঃকান্দে গামছা দিয়া দে
ঃদিতাছি এই ধরো
ঃএইবার আমার আগে আগে যাইবি
হাটতে হাটতে কহিল
ঃজানোস ওইডার দাম কত দি্বো,কম কইরা অইলিও পনের টাহা।তোর মায় খুব খুশি অবো
ঃবাবা আমারে বেইচ্চা দুইড্যা টেহা দিয়ো,,
ঃআইচ্ছা দিমুনি,, এই ট্যাহা দিয়া তর বউ সতীর জন্য একখান শাড়ী কিনমু তর মায় জিগাইলে এই কতা কইস
ঃমার জন্য কিনবা না
ঃপূজায় কিনমু কয়দিন আগে কিনছি না অইডায় বিয়ায় পইরা যাবো, অহন এত শাড়ি কেনোন যাবো না
ঃআমার লেইগ্যা ঘর বানাইবা, আমি কয়দিন তোংগো ঘরেই থাকমু
নিতাই খিলখিল করিয়া হাসিতে লাগল।কৃষ্ণ যদিও এি হাসির অর্থ কিছুই বুঝিল না তবু কহিল,
ঃবাজান হাসতেছো বাঁশ ওয়ালা কিছুই কইছে।
ঃতর কথা হুইনা আসতাছি
ঃনতুন ঘরে বউ নিয়া থাকবি,  তয় সতী তর চায়েও চালাক, তগো বেশ মানাইবো 
ঃ সত্রীর মাও নাই তাইরি খায় কি, ভাত রান্দে কেডা
অয় যুদি আংগো বাইতে আইসে ওর বাপে একলা ডরাইব না।
ঃহেয় তো বুইড়া। মানুষ ডরাইবো না
তয় খায়োন দান কষ্ট করবো।
গোপাল ছেলের সহিত কথা বলতে বলত বটতলায় বটগাছ টার নিকট দাড়াইয়া কহিল 
বৃষ্যা  ও ওইডা মা্রথা থেকে নাম



                 ২২


গোপাল সকালে ঘুম থেকে উঠেই বাঁশ দুটো কেটে টুকরো টুকরো করে করে ফেলল ঘর বানানোর জন্য ।কৃষ্ণও বাবার কাজে সহযোগীতা করতে লাগল।
হাত দেরেক লোহার শাবল দিয়ে গর্তের কাজ শেষ করিতেই দুপুর গরিয়ে গেল। ছয়হাত বাই আটহাতের মত একটা চারকোনা ঘর। মোটামুটিভাবে বাঁশের তালাই দিয়া চাল বানাইতে খুব বেশী দেরী হইল না। সাবিত্রী সারাদিন ধরিয়া বাপ ছেলের কাজ করিতে দেখলেও সে সময় দিতে পারেনি। কেননা বিবাহ মানেই সবকিছু চকচকে ঝকঝকে হওয়া দরকার। একটা নতুন স্বপ্নের দ্বারপ্রান্তে এই মুচি পরিবারটি। জাতকুলে যদিও এরা নিম্নবর্ণের কিন্ত সনাতন নিয়মপ্রথা সকলের জন্য একই। সন্ধের সময় ঠাকুর আসিল, বিবাহের কেনা কাটা কতটা করেছে তাহা একনজর দেখিবার জন্য। ঠাকুর ছেলেপক্ষের বিয়েতে  যা যা কিনতে হয় তাহা একটি ফর্দ করে দিল। সে গোঁসাইর নিকট মন্ত্রসিদ্ধ করার অনুমতিও দিল।
কৃষ্ণর সমস্ত স্বপ্নগুলো এখন ভোতা হয়ে গেছে।আজকাল খাওয়া দাওয়াও ভূলে গেছে। কারো সাথে মিশতেও মন চায় না। কদিন ধরেই অনেকটা একাকী চলাফেরা করে। বাবার সাথেও তেমন একটা কথা বলে না। মাঝে মধ্যে সতীর কথাও ভাবে, সে মনে মনে চিন্তা করে, সতী কি এবাড়িতে তাহার বাবাকে ফেলে একলা থাকতে পারবে?  

দেখতে দেখতে বিবাহের আয়োজন সম্পন্ন হইল। গোপালের কেনা কাটা করিবার মতন আর কিছুই  বাকি নাই। দুদিন পর বিয়ে, তাইতো আজ রামু এলো দুপুরকালে,রামু একাই এসেছে তার বউ আর  ছেলেমেয়ে শশুরবাড়ি। সতীদের ঘর থেকে সাত কিম্বা আটটা ঘর পরে রামুর শশুরবাড়ি। সেজন্য,রামুর বউ আর ছেলেমেয়ে তাহারা সেখানে আগে থেকেই অবস্থান নিয়েছে। কৃষ্ণ আর রামু মামা ভাগনে, তাইতো কৃষ্ণ ভাবিল সে মামার সহিত খোলামেলা কিছু কথা জানিবে। কিন্ত কিভাবে জিজ্ঞাস করিবে তা ভেবে পাইতেছিল না।  কিন্ত পরেরদিন যখন রামু কৃষ্ণকে বাজারে নিয়ে গেল, কৃষ্ণ সংকল্প করিল, 
               

                 ২৩


মুচি পরিবারে কারো ঘরে বিবাহ মানে প্রতিটি ঝুপড়ীতে লাগামহীন আনন্দের সংবাদ। বড়দের কাছে এ দিনটি হল ভদকার মহোৎসব। দেশী মদ যেহেতু কেনার সামর্থ্য কাহারো নাই তাইতো এরা দু একঘর পরপর গরমভাত পচানোর জন্য তাতে জল ঢেলে দেয় এর পর মাটির হাড়িটির মুখ বন্ধ করে রাখে।  ভোজের দিন সকালে পচানো ভাতে চিনি সোডা দিয়ে আগুনে সিদ্ধ করার পর ইহা রীতিমতো খাওয়ার উপযোগী করে তোলে। একটা ঝাঝালো তারপর অনুষ্ঠান চলাকালীন সময় নেশায় বুদ হয়ে যায় পুরো ঝুপড়ীর লোকজন।  
 
রামু বাজার থেকে চিনি সোডা কিনে কৃষ্ণর হাতে দিল।কৃষ্ণ গতকাল থেকেই মনে মনে একটা ভাবনায় ভুগিতেছিল। আর তাহা হইল, বিবাহ মানুষ কেন করে তাহার মামুর নিকট জিগাইবে। কিন্ত বাজারে প্রচুর লোকের সমাগমে তাহা মনের মধ্যে বাবরবার ঘুরপাক খাচ্ছে। রামু ভাগনেকে হাত ধরে নিয়ে চলল ভট্টর মিষ্টির দোকানে। সে দোকানে প্রবেশ করলেও কৃষ্ণ দোকানের সামনেই দাড়াইল। গামলার মধ্যে রস গোল্লা আর জিলাপীর সমাহার, কিন্ত তাহাতে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করিবার জন্য সেখানে শয় শয়ে বসিয়াছে।
রামুকে দেখেই ভট্ট কহিল,
ঃসন্দেশ না জিলাপী দিমু?
ঃভাগনের বিয়া কইলাম তগো দোহানের মিষ্টি মুখ করাই। দে বড় দেইহা দুইডা চমচম দে---
কৃষ্ণ ভিতরে আয়
ঃমামু ইহিনে বল্লা তুমি বাইন্ধা দ্যাও
ঃভট্ট তাইলি বান্ধাই দে
ঃকোনহানে বিয়া ঠিক কোরছা?দিবো কি?এইডা গোপালের পোলা না? 
ঃহ ওরে চিনবার পারলা,আমারে চিনছো কি?
ঃচিনমুনা কেন তোমগো বাইত গেছিলাম,গোপালের বিয়ায়, ওইহানেই তো আছুন,,,,
ঃহ-হ-হ,, আমগো কি যাওনের যাগা আছে?  ভগমান নিচা ঘরে পাঠাইছে না,,
ঃএই ডা নিয়ে দুঃখু করোন লাগে না। বেহাই আর কিছু দিমু কি?
ঃ কয়ডা বাতাসা দে বাইত যহন নিয়া যাইবোই।
ঃবিশ ট্যাহা দ্যাও
তা বেহা যাইবেন কিসে?
ঃওর বাপেরে কইছি তিনডা গরুর গাড়ী নিতে, ত্রিশ চল্রিশজন অইব।
রামু বিশ টাকার 



২৪


আজ কৃষ্ণর বিয়ে খগেন,নিতাই,হরি,ক্ষ্যাপা,কানাই  প্রত্যেকেরই ব্যাস্ততায় ভরপুর।এরা পল্লীর পন্চায়েতের সদস্য।মৃত ব্যাক্তির সৎকার ছাড়াও বিবাহ,সামাজিক রীতিনীতি, পূজাপার্বণে দায়িত্ব পালন করে থাকে।
বৈশাখের শুরুতে সাধারনত ঝড় বাদল একটু বেশী পরিমানে হয়ে থাকে। যদিও ঝড়ের লক্ষন নাই কিন্ত বলা যায় না যখন তখন আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যেতে পারে। 
 রামৃ বাজার থেকে সকালে ফিরেই বসেছে চুলার পাড়ে।গতকাল রামুর বোন সাবিত্রী প্রায় দশসের চালের মত গরম ভাত রেধে তাতে জল ঢেলে মাটির হাড়িতে মুখ বন্ধ করে রেখেছিল।
সেই হাড়ি দুটো চুলায় ঝাল করে তার বাস্প ধরার জন্য রেখেছে আরেকটা হাড়ি। দুটো হাড়ির ছিদ্র করে টিনের পাইপ লাগানো হয়েছে। সেই পাইপ  বেয়ে ফোটায় ফোটায় বাস্প জলে পরিনত করতে দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে। 
একাজে রামু বেশ পারদর্শী খগেনও পারদর্শী। তবে রামু আগে চোলাই মদ বিক্রি করত, সেই সুবাধে মদ বানানো বেশ ভাল শিখেছিল।






২৫



দুপুরের আগেই তিনটে গরুর গাড়ী হাজির হইল ঋষিপল্লীর সামনের রাস্তায়। ছোটছোট ছেলেমেয়েরা যদিও তাদের পরনে কোন কাপড়চোপড় নাই তবু তারা মনের আনন্দে নাচানাচি করিতে লাগল।গারোয়ান তাহাতের কোন মতেই গরুর গাড়ীতে উঠতে দিচ্ছিল না। ওদিকে কৃষ্ণকে ধুতিপান্জাবী পরায়ে রীতিমতো বর বানিয়ে লোকজন তামাশায় মত্ত হয়ে পরেছে। অল্পক্ষনের মধ্যে বরযাত্রী সমেত হাজির হইল গরুর গাড়ীর নিকট। রামুর সাথে সাবিত্রী দুরে দাড়াইয়া কথা বলতে দেখা গেলেও সেই দিকে কারো দৃষ্টিগোচর নাই।গোপাল ছেলের হাত ধরে দাড়িয়ে অপেক্ষা করিতেছে বরযাত্রী সকলেই গরুরুগাড়ীর নিকট আসিয়াছে কিনা তাহা লক্ষ করিতেছে। গরুরুগাড়ী তিনটে পূর্বদিকের রাস্তায় দাড়ানো। গোষাই অনুমতি দেবার পরই ধরাধরি করিয়া কৃষ্ণকে তাহাতে উঠানো হইল। প্রথম গাড়িটিতে গোপাল,রামু,কৃষ্ণ ও পন্চায়েতের লোকজন উঠল আর বাদবাকি দুটো গাড়িতে ঠাসাঠাসি করে বসল।গারোয়ান পীড়াপীড়ি করিলেও তাহার দিকে নজর দিল না কেউ।সাবিত্রী গরুর গাড়িটি রওনা দিলে পেছনে পাছনে হাটতে লাগল। বটতলা বাজার পার হইবার পর গোপালর তাহাকে বাড়িে ফিরিয়া যাইবার জন্য বেশ কয়েক বার বলার পর সে পেছনের দিকে পা বাড়াইল।

কাঁচারাস্তায় ক্যাচচ ক্যাচ ক্যাচ শব্দে গাড়ি তিনটে সামনে দদিকে আগাতে থাকলেও তাহাতে বসিয়া থাকা থুব জটিল হইয়া গেল। কেননা গরুর গাড়ি চলাচলে কোথাও কোথাও উচু নিচু আর খানাখন্দে ভরপুর। 

পাঠক,
যে সূত্রেই হোক, আমি সেই অনুষ্ঠেয় বিবাহে উপস্থিত ছিলাম। আমি স্বচোক্ষে দেখেছি নিম্নবর্ণের লোকদের কি দুঃখ দুর্দশা। 

মনে হইতেছিল যে হয়তো দুএকজন তাহা থেকে পরে মরিয়া যাইব। তাহাদের বহরে দুজন বয়স্কা মহিলা ছাড়াও পাঁচজন বিবাহিতা মহিলা ছিল। যাদের বয়স আনুমানিক আঠারো থেকে বিষ কিম্বা একুশ এরকম হবে। যদিও তাহাদের চেহারার মধ্যে কোন জৌলুষ নাই। তাইতো তাহাদেরকেও বেটাছেলে 


২৬

মনে হইতেছিল।
সন্ধের ঠিক কিছুকাল আগে তাহাদের গরুরুগাড়ী তিনটে কৈজুরী হাটেপৌছাইল। কৈজুরি হাট থেকে কৈজুরীগোপালপুর ঋষিপল্লী মাত্র পাঁচমিনিটের পথ। শুক্রবার এখানে প্রতি সপ্তাহের ন্যায় হাট বসি্য়াছে। এই কৈজুরীর হাট জাল আর জেলেদের সবচেয়ে প্রিয় হাট কেননা মাছ ধরবার হাতে বোনা জাল ও জালের কাঠি মত দুর্লভ বস্তু এখানে পাওয়া যায়। 
এখন হাটখানি বেশ সরগরম। হাটের মাঝামাঝি দিয়ে রাস্তা হওয়ায় লোকজন তাহাদের অনেকেই একনজর দেখিল। কিন্ত মুচি পরিবারের লোকজন দেখিয়া কেহ আর সেইদিকে ফিরিয়াও তাঁকাইল না।
ধুলোবালি আর খানাখন্দের  রাস্তায় গরুরগাড়ীতে মাত্র দশমাইল পথ অতিক্রম করিতেই বরযাত্রীদের প্রত্যেকেরই চেহারা দুলোয় ঢেকে গিয়েছিল। এদের দেখে মনে হইতেছিল যেন এরা মাঠেঘাটে কেবল কাজ করিয়া ফিরিতেছে। যে কয়জন মহিলা এই যাত্রাপথের সারথি ছিল তাহাদের দুর অনুমান করা যাইতেছিল না যে নর না নারী।
কোনমতে হাট অতিক্রম করিবার পর রামু বরযাত্রীদের সকলে গরুরুগাড়ী থেকে নামতে আদেশ করলেন। তারপর তাহাদের বলিলেন যে কাঠের  সাঁকোর  নিচে জলে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে পরিষ্কার হওয়ার জন্য।বলা মাত্রই হৈচৈ করিয়া সেইজলে নামিয়া পরিল। বহরে থাকা এই সাতজন মহিলাও জলের ধারে গিয়ে পৌছাইল। 
বৈশাখ মাসে সূর্য অস্তগত হইলেই অন্ধকারে তখনও চারপাশ ঢেকে যায়নি।
ইতিমধ্যেই এই ত্রিশজন পুরুষের মধ্যে দশ পনেরো জন উলঙ্গ হইয়া অনায়াসে স্নান করিতেছিল। বাকী অর্ধেক উল্টোদিকে খালের পাড়ে বসিয়া ভাং খাইতে ব্যাস্ত হইয়া গেছে। বহরে থাকা মহিলারা জানে যে জলের মধ্য নেমে থাকা লোকগুলোর পরনে কোন কাপড়চোপড় নাই। তাইতো তাহারা সেদিকে দৃষ্টিগোচর না করিয়া প্রত্যেকই নিজেরা নিজেদের শাড়ীর আঁচলের একটা অংশ জলে ভিজাইয়া তাহা দিয়ে অনায়াসে গা মুছিতে লাগিল। 
আমি আশ্চার্য়্য হইলাম এই ভাবিয়ি যে, তাহারা প্রায় সকলেই অর্ধনগ্ন

২৭

তাহারা প্রায়। সকলেই অর্ধনগ্ন হইয়া জলে থাকিলেও কেহ কাহারো দিকে ফিরেও তাঁকাইল না। এটাই হইল সংস্কৃতি, মানুষ জন্মগত ভাবে নিজেদের গোত্রে যা কিছু শেখে তাহা নিয়ে  তাহাদের কোন মাথাব্যাথা থাকে না।কারন ওই গোত্রর লোকজন ইহাকেই সঠিক মনে করে। কিন্ত সভ্যসমাজের লোকজন এরকম কিছু হঠাৎ দেখিলে প্রথমত তাহার নিকট অশ্লীলতা মনে হইবে। কিন্ত যদি প্রত্যেককেই নিজেদের ভাল মন্দ বিচার করিতে পারিতো তবে হয়তো আজ ঋষিপল্লীর লোকজনের আধুনিক সভ্যতা ছোয়া ঘরে পৌছানোর বাকি থাকিত না। 
  যাহা হোক, অর্ধস্নান করাে বরযাত্রীগণ খালের পাড়ে থাকিলেও গারোয়ান তাহাদের গাড়ি নিয়ে ইতিমধ্যই সম্ভত পৌছে গেছে নিতাইদের মুচিবাড়ির সামনে।
বৈশাখের এমন সন্ধাবেলা গুমোট আবহাওয়া থাকিলেও সকলেই স্নান করিবার পর পায়ে হেটে রওনা হইল ঋষিপল্লীর দিকে। অন্ধাকারে কয়েক মিনিট হাটিতেই নিতাইয়ের বাড়ি পৌছাইল। 
মুচি পরিবারের বয়স্ক লোকজনেরা অনেকেই অনেকের সহিত করমর্দন করিল।যেহেতু রামুর শ্বশুরবাড়ি নিতাইয়ের ঘর থেকে তিনটে ঘর পরে তাইতো কৃষ্ণর হাত ধরিয়া নিয়ে চলল সেদিকে। নিজেদের পন্চায়েতের সদস্যগণ এখানকার পন্চায়েতের সহিত মিলিয়া তাহারা আগে থেকেই পাতা মাধুরে বসে দুই পল্লীর খোঁজখবর লইয়া কথা চালাচালি চলিতে লাগিল। কিন্ত কতক্ষণে কৃষ্ণকে দেখিবার জন্য বস্তির মেয়েছেলেগুলো তাহাদের এমনভাবে ঘিরিয়া ধরিল যে রামুর শশুরবাড়ি অবধি পৌছাতেই পারিতেছিল না।যেহেতু রামুকে সবাই চেনে তাইতো তাহাকে কেহ বিরক্ত না করিলেও কৃষ্ণকে অন্ধাকারে দুর থেকেই ঠাট্রামসকারা করিতে লাগিল।
কৃষ্ণর কানে তাহা ঝনঝনিয়ে বাজলেও মুখে টু শব্দ পর্যস্ত করিল না। ভির ঠেলে সামনে এগুতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হইলে রামু সকলের উদ্যেশ্যে কহিল,
ঃআগে বাইত যাইতে দে তারপর তগোর যতো কতা আছে কইস। ভাইগনা আমার বোহা না।
লোকজন  চুপ হইলে রামুর বউ 

২৮

বিয়ে বাড়ি মানেই একটা হৈ হুল্লোড় তা মুচি পরিবার হোক বা গৃহস্থ। এর নিয়ম যেন সব একই।তবে এরা আদিবাসী সম্প্রদায় এদের নিজস্ব কিছু নিয়মনীতিও আছে। যদিও এরা সনাতন ধর্মালম্বী। তবে জাতপাত লইয়া বিস্তর ফারাক আছে।
ঝুপড়ীগুলোতে কেরোসিনের কুপির নিভু নিভু আলো জ্বলতে থাকলেও বরযাত্রীদের বসার স্থলে আলোর কোন লক্ষন দেখা গেল না। টর্চলাইটের আলো এলোপাথারী জ্বলজ্বল করতেছিল। এরপর পুরোনো একটা হ্যাজাক আনা হইল। তাহাতে পল্লীর লোকজন কেরোসিন ঢেলে আলো জ্বালানোর চেৃষ্টা করিতে লাগিল।কিন্ত অনেকক্ষণ কেটে গেলেও তাহাতে আলোর লক্ষন দেখা গেল না। 
কৃষ্ণ তার মামীর হাত ধরে বসে আছে। রামু ছুটে গেল হ্যাজাকেরর নিকট। দেখল নিতাই আর গোপার দা বারান্দায় বসে বিড়ি খাইতেছে। সতী হয়তো তখন ঘরের মধ্যেই আছে। রামু হ্যাজাক লাইটের নিকট দাড়াতেই হ্যাজাকেরর মালিক রগুনাথ উপস্থিত হইল। রগু জানত যে হ্যাজাকের ফুল পরিবর্তন করতে হবে। অথচ এদের কিছুই জানায়নি। কারন ফুলের দাম দশ টাকা আর লাইট ভাড়া ত্রিশ টাকা। চল্রিশ টাকা একত্রে চাইলে দেবে না। তাইতো এসেই বলল, নিতাই দা কোনহানে?
রামু বলিবার আগেই কে যেন বলে উঠল, নতুন বেহাইর সাথে আছে।
:দশ টাকা কেডা দিবো?
রামু তাৎক্ষনিক বলল যে এই টাকা সে দেবে কিন্ত তারাতারি ওটা করার আদেশ দিল 
রগুদা রামুকে দেখেই বলে উঠল, তর ভাইগনা বিৃযা
ঃহহহহ
রগু খুব দ্রুত ফুলখানা লাগাইয়া আলো জ্বালাইতেই রামু দেখিল, নিতাইদার পাশে তার বউ দাড়াইয়া আছে। নিজের চোঁখকে বিশ্বাস করতে পারিতেছিলনা তাইতো পরনের ধুতি খানা দিয়ে চোঁখ ৃভাল করে পরিস্কার করে আড়চোঁখে আরো একবার দেখল।
লোকজনের কোলাহল যদিও থেমে গেল কিন্ত রামু মনে মনে হাজারো প্রস্নবানে জর্জরিত হইলে কাহাকে কিছু বলিবার সাহস পাইল না। মনে মনে ভাবিল যাক মেয়ের বিয়েতে অন্ততপক্ষে নিতাই আর বৌদির মিলন তো হলো।

২৯

রামু নিতাইদার মুখোমুখি হতেই বৌদি বলল
ঃ দাদা 
দাদা বলতেই রামু হো হো হো করে হেসে উঠল। নিতাই রামুকে হাসতে দেখে মাথা নিচু করল কারন সে বুঝতে পেরেছে রামুর এ হাসির অর্থ কি। 

সংসারে রাগ দুঃখ অভিমান কম বেশি সকলের মধ্যেই বিদ্যমান। কিন্ত বিবাহ বন্ধন এমন এক বাস্তবতা যা ইচ্ছে করলেই একজন আরেকজনকে ছাড়া যায় না। রাধা যখন নিতাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল তখন সতী দুধের বাচ্চা, মাত্র দু বছর বয়স নিতাই তখন দিনের পর দিন অসুস্থ।
মানুষের শরীরে এমন এক যন্ত্র যে একবার নষ্ট হয়ে গেলে তার পাশে আর কেউ থাকতে চায় না নিতাইর সে বোবা কান্না আমার চোখে চোখে ভাসে রাধার প্রস্থান আমি সহজভাবে নিতে পারছিলাম না
নিতাই দিনের পর দিন জ্বর।রাধার অল্প বয়সে এমন ব্যথা ছিল বুঝতে পারলাম না যে এক মুহুর্তে নিতাইকে সে ছেড়ে চলে গেল বাচ্চাটার দিকে তার তখন কোন মায়া দেখাল না।সেদিন উঠোনে মরার মত পড়ে ছিল নিতাই
হাতদুটো আসার তা দিয়ে রাধার পা জরিয়ে ধরার চেষ্টা করছিলো আমার চোখে ভাসে আমি সেদিনটির কথা কোনদিন ভুলতে পারব না

রাধা কোন মতে হাসি সামলে নিলেও মুখে হাসির টোল পরতেছিল। তাইত, সে দিকে না তাঁকাইয়াই গোপালকে কহিল
ঃ দাদা তারাতারি উঠো, লোকজনকে খায়োনের ব্যাবস্থা কর, নিতাই দা বৌদি কবে আইছে?
ঃসতীর বিয়া আর কি দুরে থাকা পারে? আইজই আইছে
ঃবৌদি এতবছর পর আবার নিতাইরে মনে অইলো
ঃমায় কইলো যা--নইলে কি আহি 


৩০


নিতাইর এর কষ্টের দিনগুলো কেটে গেছে
তার সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে  কষ্ট করতে হয়েছে দিনের-পর-দিন  দুধের বাচ্চাকে লালন-পালন করা তার পক্ষে কতটা কষ্ট সাধ্য ব্যাপার ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করার মত শক্তি আমার জানা নাই।
বৌদি চলে যাওয়ার পর তার সুস্থতার জন্য পল্লীর লোকজন এদের টাকাপয়সা চসুস্থ হয়ে যায়। মাসখানেকের মধ্যেই  সুস্থ হলেও চাঁদার টাকায় বাচ্চার আর নিজের ওষুধপত্র চলতে থাকল প্রায় আরো মাসখানেক
নিতাই যদিও আজ স্বাবলম্বী কিন্তু এই মুচি পরিবারের প্রতিটি পরিবারের কথা তার চিরদিন মনে থাকবে আর সেজন্যই সতীর বিবাহ ঠিক হইবার সময় সে চুপচাপ ছিল যাহাতে এখানকার মুচিপরিবারের কেউ কষ্ট না পায়
রামুর উপর তার প্রচন্ড আস্থা আছে কারন রামু দীর্ঘদিনের বন্ধু। একদিন নিতাই রামক নিয়ে এসে এই পল্লীতে বিবাহ দিয়েছিল।আর সেও বন্ধুর মান রেখেছে তাইতো নিতাই জানে রাম তার মেয়েকে জলে ডুবিয়ে দেবে না তাইতো তার উপর আস্থা রেখেই গোপালকে কথা দিয়েছে। 
বৌদির আগমন যদিও সহজভাবে মেনে নিয়েছিল কিন্তু তার মনে মনে একটা হিংসে জেগে আছে
রামুর ইচ্ছে ছিল বৌদির সাথে কোনদিন দেখা হলেও তার সাথে আর দ্বিতীয়বার কথা বলার কিন্তু আজ বিবাহের দিন তাইতো আর কথা না বলে থাকা গেল না
মানুষ মানুষের জন্য কিন্তু এ কথাটি ভুল উল্টো মন হয় যখন কাছের মানুষ দূরে চলে যায় এবং বিবাহবিচ্ছেদ ছিন্ন হওয়ার পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে যায়।
নিতাইর আজ মুখে হাসি নেই কিন্তু

৩১


বৌদি আমাকে টেনে নিয়ে গেল ঘরের মধ্যে সতী এ বাচ্চা মেয়েটার ঘরের মেঝেতে জড়োসড়ো হয়ে বসে বসে ছিল 
কেরোসিনের কপিতে ওর চেহারাটা জ্বলজ্বল করে জ্বলছিল 
মুচি পরিবারের বাচ্চা তিনটে মেয়েও সেখানে ঝিল। আমি বুঝতে পারলাম যে সত্যিই ওদের সাথে কথা বলছিলে কিন্তু আমাকে দেখতে চুপ হয়ে গেল।অল্প বয়সী মেয়েটি বিভাগ সম্পর্কে তার ধারণা নাই কিন্তু আমি জানি মুচি পরিবারের এইসব রাজনীতিতে আর দেখতে দেখতে অব্যস্থ হয়ে গেছে
এরা বিবাহের অর্থ না জানালেও খুব অল্প বয়সেই বিবাহের পেতে বসেছে আর দেরি করে না
মা দুর্গার মত সাজানো হয়েছে ওকে।নাকে নথ গলার রুপোর মালা,গতরে হলুদ শাড়ি
মোটামুটি কন্যা সাজানো ঠিকঠাক ছিল।
আমি বললাম বৌদি মোটামুটি সব ঠিকঠাক আছেখাওয়া-দাওয়া তাড়াতাড়ি সারতে হবে লগ্ন সময় নাহলে বেরিয়ে যাবে
কৃষ্ণের মামীর কাছে বৌদি যাবে?
তোমার নেতাদেরকে নিয়ে যাও আমি পরে আসতাছি
আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে এই কথাই 
ভয় পাওয়ার কিছু নাই আমি তো আছিই সাথী
আমি খুব বেশি কথা বলার চেষ্টা করলাম না ওর সাথে
ঘর থেকে এক পা এগোতে নিতাইদা আমার দিকে চোঁখ রাখল।
গোপাল তাকে বললাম গোপালদা খেতে যাবে না সবার তো বসে পড়েছে ওখানে
রিতা আমাকে বলল তুই ওখানে যাও ওদের সাথে খেয়ে দেয়ে নে আমি আর গোপালদা একসাথে খাব এখন রাজু দেখবেনা

রামু তেমন কিছুই আর বলল না।  খাওয়া দাওয়ার জন্য লোকজন সামিয়ানার নিচে বসে আছে। কৃষ্ণ বসেছে পন্চায়েতের লোকজনের মাঝে। রামু এগিয়ে যেতেই কৃষ্ণর মুখে হাসি ফুটল। হ্যাজাকের আলোতে  পোকামাকড়ে ভরপুর এমনিতেই মুচি পরিবারের পল্লীতে দীর্ঘদিন দুর্গন্ধ নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মধ্যে তাদের খাওয়া-দাওয়া সম্পন্ন করা হলো খাওয়া-দাওয়া সম্পন্ন হওয়ার পর লোকজন পান চিবোতে চিবোতে পল্লীর বাইরে চলে গেলেন
খাওয়া-দাওয়া সম্পন্ন হওয়ার পর রামকৃষ্ণ নেতাদের ঘরে চলে গেলেন।
রামু লক্ষ্য করল যে নেতার গোপালদা ওখানে এখনো পিঁড়িতে বসে আছেন
রামগোপাল দেখে কহিল 

দাদা খাবেন না
ঠাকুর আছে দেরি করা যাবে না লগ্ন সময় এসেছে আমি আর একটু পরে খাব

নিতাই বলল সতীর মা ওখানে আছে তুই যা
গোপালদা তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া করে আমি ঘরের মধ্যে আছি


৩২

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

রমাদি ১০

স্কুলে নিয়মিত এই পোশাকই পরে।বিপিন রীতিনীতিও সব শিখিয়ে দিল।বিপিনের বোন রমাও পাঠ্যে হিন্দুধর্ম শিক্ষা-র যেকোন বিষয় না বুঝলে, তা আলোচনার মাধ্যমে সহযোগীতা করতে থাকে আজকাল বদর, বিপিনের কাজ কর্মেও সহযোগীতা করে। রমার মা,বদরের এই আচার ব্যাবহারে নিজেও গর্বিত। শুরু থেকেই বিপিনের মাকে, বদর মা বলেই ডাকে।গোঁরা সমাজের লোকগুলোও তার আচার ব্যাবহারে সব কিছু ভুলে যায়।অল্পদিনেই স্কুলেও শিক্ষক থেকে শুরু করে সবার প্রিয় পাত্রে পরিনত হলএই ছেলেটি।প্রতিদিন বিকেলে বদর এখন স্কুল মাঠে ফুটবল খেলে হিন্দু ছেলেদের সাথে। রমার বান্ধবী বিথী প্রায় প্রতিদিনই দুই একবার রমাদের বাড়িতে আসে। আজও বদর এই সময় মাঠে ফটবল খেলিতেছে, এই ফাঁকে বিথী বদরের রুমে যায়, গিয়েই রমাকে বলে ঃএই রমা আমি বদরদার ঘরে রমা তখন ওদের বড় ঘরখানাতে ছিল, একদৌড়ে এসেই দেখে বদরের রুমে বিথী শুয়ে আছে ঃ বিথী তুই বদর দার বিছানায়! ঃ বদর নাই তাই ঃ দাদা দেখলে বকবে ঃ দাদাও নাই হি-হি-হি—হি অনেকক্ষন হাসাহাসি করে দুজনে।এক পর্যায় বিথী বলল, ঃবদরের বাবা,তোকে অনেক ভারি একটা মালা দিছে--তাই না? ঃ ওইটা মায়ের কাছে-যদি হারিয়ে যায়।চল তোকে দে্খাব এরপর,দুজনেই বদরের রুম থেকে বের হল, রম

রুদ্র ম আল-আমিন এর কবিতা, যন্ত্রণা

               " যন্ত্রণা "           রুদ্র ম আল-আমিন নিজেকে  নিজের মতন              বিসর্জন দিয়ে।                        আজি বেচে আছি                 এ -ওর ধার দেনা দিয়ে। কন্ঠনালী ছিদ্র আমার                               রপ্ত করেছি           ঝোড়ো হাওয়া উরতে চলা। আর্যছিলাম পালছেড়েছি              থাকতে দিসনি তোদের সাথে, তাই বলে কি হারিয়ে গেছি                সবার থেকে। বলছি কথা মোদের তরে বলছি নাকো ভুলে যেতে                                   যাচ্ছি তবে যাই। রাখবি মনে,, সকল যাতন রইবে প্রানে কাঁদবি তবে                 দিচ্ছি তোরে বর হাসবো আমি কাঁদবে তর, আপন যত, কার বা আপন কে করিল? বলতে পারিস?         নিখিল ভারত, রইল পরে কার বা তরে।

রমাদি ০৪

স্কুল ছুটি হয়েছে অনেকক্ষন কিন্ত তবুও হেডমাষ্টার মশাই চেয়ারে হেলান দিয়ে চোঁখ বন্ধ করে বসে আছেন। দপ্তরী নীলু বাহিরে বসে অপেক্ষা করছে কখন স্যার বের হবে।শেষমেশ প্রতিক্ষার প্রহর কাটলো, মাষ্টার মশাই বের হলেন, দপ্তরী পাশে দাঁড়িয়ে অফিস কক্ষ তালাও দিলেন, চাবি হাতে দিতেই দেখলেন , চোঁখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরতেছে।দপ্তরী ভাবল কিছু একটা বলি, আবার ভাবল না থাক। তবু আগ বাড়িয়েই বলল, ঃ বিপিনকে পাঠাবেন স্যার?ওর বোন রমা আর বদর, একই ক্লাসে পড়ে!  বিপিনকে ডেকে আনবো?বিপিনের ছোট বোন রমা একটু ব্যতিক্রমী,কিন্ত ওই একমাত্র বদরের সাথে কথা বলে।  নীলুর ধারনা বিপিনকে বদরদের বাড়ি পাঠালেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। নীলুর বকবকানি শোনার পর হেড মাষ্টার সাব কি যেন ভাবল, তার পরই নিলুকে বলল, ঃযাও ডেকে নিয়ে আসো!  নিলু দেরী না করে দ্রুত চলে গেলেন বিপিনদের বাড়ি। মাষ্টার মশাই ততক্ষণ স্কুল বারান্দায় পা- চারি করছিল।যেহেতু স্কুল এর পাশেই বিপিনদের বাড়ি, সেহেতু নীলুর খুব বেশী দেরী হল না বিপিনকে ডেকে আনতে।  বিপিন, স্যারের সামনে দাঁড়িয়ে নমস্কার করতেই স্যার বলল, ঃবদরদের বাড়ি চেন? ঃ স্যার, শুনেছি মাইল দশেক পশ্চিমে ঃতুমি কাল সকালে ওদের ওখানে একটু য