দিন দুই অতিবাহিত হইবার পর দেখা গেল বাবা আজ রাতে খুব তারাতারী বাড়ী ফিরেছে।সাধারনত এসময় তিনি বাড়ি ফেরেন না।রাত গভীরে বাড়ি ফেরা তার অনেক পুরোনো অভ্যাস।হ্যারিকেন এর আলোতে খাবার খাওয়ার জন্য খেজুরপাতার মাদুরে বসতেই বাবা বলল,
ঃনদীর পাড়ে বইসা থাকস ক্যান?কে'র সাথে কথা কস না, জায়গীরদার তরে কিছু কইছে?ঠিকমতো খায়োন দেয়?তরে কি কিছু কয়?
মা জানে বাবার সামনে আমি খুব কম কথা বলি, তাইতো তাঁকে কিছুই বলার সাহস পাইতেছিলাম না। মাথা নিচু করে ভাত নাকেমুখে গিলতেছিলাম, হঠাৎ-ই মা বলে উঠল
ঃকয়দিনে ওর মুখটা কেমনে হুকায়ছে দেখছেন?
ঃকাইন্ছার বাচ্চা আমার পোলাডারে দেইহা রাহে না, ওর কল্লা ডা নামায়া দিমু
বদর বুঝতে পারে এখন বাবার সাথে কথা বলা যাবে না। কারন বাবা ভীষন রেগে আছে।আজ রাতেও বাবার সহিত মনের কথা খুলে বলার সাহস হল না।অবশেষে মাথা নিচু করে চুপচাপ ভাত খেয়ে রুমে ফিরল।বদরের বাবা তেমন কিছুই আর জিজ্ঞেস করল না তাঁকে।
তাইজুদ্দিন অল্প শিক্ষিত একজন মানুষ, কিন্তু যেমন উদার ঠিক তেমনি তিনি কঠোর। প্রায় সাত ফুট উচ্চতার সুঠাম দেহের অধিকারী এই কালো মানুষটা আসলে একজন দস্যুসর্দার।তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলবে এরকম মানূষ দশক্রোশ এর মধ্যে খুঁজে পাওয়া কঠিন।ঠিক, এরকম একটা ভয়ভীতির জন্য হিন্দু স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দিতে বাধ্য হয়েছিল, শিক্ষক ও কমিটিবৃন্দ।
গোঁরা হিন্দু সমাজের চাপে প্রধান শিক্ষক মহোদয় প্রথমে কয়েকদিন স্কুলে অনুপস্থিত থেকেছেন।সমাজের নিম্ন আয়ের মানূষ গুলোও এই অবিচারের বিরুদ্ধে ফুঁসে ঊঠেছে। পন্ডিত মহোদয় মুখে কুলুপ সেটে বসে আছেন, তার আর কি-বা করার আছে।হঠাৎ-ই স্কুলে বদরের অনুপস্থিতি, আর এই সুযোগে ছাত্ররা বলাবলি করিতে লাগিল,বদর পালাইছে।বিপিনের ক্লাসমেট জয়রাম, বিপিনকে বললঃ জানোস বদর পালাইছে!
জয়রামের কথা বিপিন অতটা গুরুত্ব দিল না, বিপিন দশম শ্রেনীর ক্যাপটেন। ছাত্রও ভালো,প্রধান শিক্ষক বিপিনকে নিজের ছেলের মতই মনে করে। ছাত্রদের যেকোন বিষয়ে জানার প্রয়োজন হলে,বিপিনকেই জিজ্ঞেসা করে থাকে।বদর কে নিয়ে শেষ পর্যন্ত আজ শিক্ষকবৃন্দও আলোচনায় জড়িয়ে গেল।
২
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন