সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা নদীবিধৌত গ্রাম বারবয়লা। এখানকার এক দস্যু পরিবারে বেড়ে ওঠা দুরন্ত এক কিশোর বদর আলী। গ্রামের স্কুল থেকে মাইনর শেষে তার বাবা তাঁকে ভর্তি করিয়ে দেয় বাড়ি থেকে দশ মাইল দূরে। টাংগাইল জেলায় অবস্থিত বাঘিল কে কে উচ্চ বিদ্যালয়। কিন্ত এই পাঠশালাটি নির্মানের পর থেকেই অধ্যবধি সমস্ত ছাত্রছাত্রীই হিন্দু ধর্মালম্বী। কারণ, জানা যায় যে,অনেক বছর আগে এখানে একবার হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা হয়েছিল। ফলে ঐসময় গ্রামের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য হিন্দু ও মুসলমানগণ নির্মান করেছিল আলাদা আলাদা স্কুল।
যেহেতু বিদ্যালয়টি হিন্দু ছেলেমেয়েদর জন্য, ফলে বদরের জন্যও পাঠ্যে তালিকায় আছে হিন্দুধর্ম শিক্ষা। ধর্মপাঠ্যে, দেব দেবীর কথা বলা হয়েছে,কিন্ত বদর বুঝতে পারে না দেবদেবীই বা কি?
পন্ডিত মশাই শ্রেণিতেই বা কি পড়ায়?সহপাঠীদের কারো নিকট কোনকিছু জিজ্ঞাসা করার মত সাহস পায় না এই অল্পভাষী ছেলেটি। কেননা, বদর জানে,সে একজন মুসলমান। আর মুসলমানের সাথে কথা বলা প্রথমদিনই বারণ করেছে এইস্কুলে পড়ালেখা করা প্রতিটি ছাত্র ছাত্রীর বাবা মা।
শ্রেণি ও বিদ্যালয়টিতে একা একা কেটে যায় বেশ কয়েকদিন ।কিন্ত তাঁর ইহা মোটেও ভাল লাগে না । এই কিশোর ছেলেটির একাকীত্ব এখানে নিজেকে মোটেও মানিয়ে নিতে পারছে না। সে মনে মনে ভাবতে থাকে বাড়ী গিয়ে বাবাকে সবকিছু খুলে বলবে।অবশেষে মনে মনে বাড়ি যাইবার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলল,পরেরদিন বইখাতা জায়গিরদারেরর বাড়ি রেখে ছুটে চলল গ্রামের বাড়ি।দুপুরবেলা বদরকে ঊঠোনে দেখেই মায়ের কাঁন্না আর ধরে রাখতে পারলো না। মা দু'হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
ঃ কি কইরা আইলি এ-পথ?-এই টুনি দ্যাখ তর দাদা আইছে।
বদর ফ্যালফ্যাল করে তাঁকিয়ে আছে মায়ের চোঁখের দিকে, তার চোঁখে জল টলমল করিতেছিল।কিন্ত,মাকে কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চলে গেল সোজা তাঁর থাকার সেই পুরোনো রুমে।বদর অনেকটা পথ পায়ে হেটে ক্লান্ত ছিল।তাই সে'রাত্রে বাবার সাথে দেখা না করেই তারাতারি ঘুমিয়ে পরলো।সকালে ঘুম থেকে উঠেই ছুটে যায় নদীর দ্বারে, দুপুরের দিকে বাড়ি এলো। কিন্ত খাওয়াা দাওয়া যেন একেবারেই ভূলে গিয়েছে।
১
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন