সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

উপ-৬

৮১

রমা চোখ মেলে তাঁকাতেই  ঠোটখানি কামরে ধরল,রমাদি এক দৃষ্টিতে  তাঁকিয়ে রইল।মা তখুন মাথায় হাত বোলাইতে ছিল। বদর যখন দেখল যে, রমাদি মোটামুটি এখুন ঠিক আছে আর অসুবিধে নেই তখন তার রুমে ফিরতে চাইল। কিন্ত মা তখুনও যেতে দিল না। পড়ার টেবিল থেকে চেয়ার খানি টেনে রমাদির মাথার শিয়রে বসে রইল।রাত যখন প্রায় শেষ হয়ে এলো তখুন রমাদি বিছানা ছেড়ে উঠতে চাইল, মা বদরকে বলল তাঁকে বাহিরে নিয়ে যেতে।

 বদর কোন কথা না বলে তাকে বিছানা থেকে হাত ধরে টেনে তুলল,
খাটিয়া থেকে নেমে বদরের কাঁদে হাত রাখল। এর পর  রমাদিকে নিয়ে চলল ্উঠোনের দিকে। মা সারারাত জাগার ফলে বিছানায় চোঁখ বন্ধ করে ঝিমাইতে ছিল।রমা  ইন্দিরার দিকে যেতে চাইল কারন তাহার প্রসাবের প্রচুর বেগ পাইতেছিল।তাহা বুঝতে পেরে ইন্দিরার কাছাকাছি গিয়ে বলল,ঃ রমা আমি উঠোনে দাড়াই
ঃ না তুমি এখানেই থাকো
ঃ আমি থাকব হু হু হু
ঃ না তুমি যাবে না
ঃ কি বলছো এসব তোমার মাথা ঠিক আছে?
ঃএক পা নড়বে না,, চুপচাপ দাড়িয়ে থাকো।

মানুষের আদিম প্রবৃত্তি হলো কারো না করো উপর আস্থা অর্জন করা।
আর তাহা থেকেই মানব মানবী অদ্যাবধি প্রর্যন্ত আমরা লক্ষ করছি যে,
যৌবনপ্রাপ্ত হলেই সকলেই সঙ্গী নির্বাচনের জন্য জীবনের একটা সময় অতিবাহিত করিয়া থাকে।
রমাদি এই আঠারো বছর ছুইছুই মেয়েটি যদিও বদরের সহজাত ধর্মাবলম্বী নয়, তবুও সে অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে ।কিন্ত বদর  দেখল,যে রমাদি তাঁর শরীরের নিম্নাংশের পরিধেয় কাপড় খুলে ফেলিতেছে তবু তাহার হাতখানি ছাড়িবার কোন লেশমাত্র নাই তখন  নির্বাক হয়ে মুখটি ঘুরিয়ে নিয়ে চোখদুটো বন্ধ করল। কারন পুর্ব আকাশ অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল।তার একটা হাত রমাদি ধরিয়া থাকার ফলে ডান হাতটি দিয়ে কান চেপে ধরলেও বিশ্রী একটা শব্দ রেরুচ্ছিল সেই সাথে বিশ্রী গন্ধও।
রমাদির শরীরখানি এক মুহুর্তে খারাপ হয়ে যাওয়ায় কোনরূপ পরিধেয় কাপড়খানা দিয়ে ঢেকে বদরের দিকে তাঁকাতেই দেখল,চোঁখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।এর পর সন্মুখে দাঁড়িয়ে দুইহাত দিয়ে বদরকে জরিয়ে ধরতেই বদরের চোখ দিয়ে জল এসে গেল।




                     ৮২


মুখে কিছু না বললেও বদর তাঁর ডান হাতটি কাঁধের উপর রেখে চোঁখের দিকে তাঁকিয়েই বলল,
ঃ মা দেখে ফেলবে চলো
ঃ তুমি কথা দাও, আমাকে ফেলে কোথাও যাবে না।
ঃ এখন ছাড়ো মা দেখে ফেলবে?
 রমা ছেড়ে দাও,জানাজানি হলে কেলেংকারি হয়ে যাবে।
ঃআমি ভয় পাই না,,,
ঃ কিন্ত আমি!
বদর ও রমার মধ্যে ফিসফিস করে কথা হইতেছিল কিন্ত বদর প্রচন্ড ভয়ও পাইতে লাগল।এর পর রমাদি যখন বদরের শরীর থেকে হাত ফিরিয়ে নিল। তখন তাঁকিয়ে বলল,
ঃ আমার ইচ্ছে আছে,আমি কাছেই রাখব তুমি ভয় পেও না। এবার চলো

রমাদি একটা সাচ্ছন্দ তুপ্তির হাসি হেসে পুরো পৃথিবীকে জানান দিল যে, সে সমুদ্র জয় করে ফেলেছে।তাঁর নিজের বোঝা বহিবার মতন কাউকে সে পেয়ে গেছে।সে আর একা নয়, ঘরে ফিরতে ফিরতে মনে মনে ভাবল,মৃত্যু যদি হয় তাহা যেনো বদরের বুকেই হয়।রমাদিকে ঘরে পৌছে দিয়েইবলল,
ঃ মা আমি গেলাম,,,
 মা অনেকটা তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিল, তেমন কিছু বলল না।তখন রমাদি নিজেকে  লজ্জিত বোধ করতে লাগল।বদরের দিকে তাঁকাল না।
বদর ঘর থেকে বাহিরে এসে দেখল,বীথির মা উঠোনের কাছাকাছি চলে এসেছে। বদরকে দেখেই বলল
ঃ তোমাগো কিছু কি অইছে?
ঃ মাসিমা তেমন কিছুই না, কিন্ত মা তো ঘুমোচ্ছে।
ঃ তাইলে পরে আহুম নি।
বদর মাথা নেড়ে বীথির মাকে বিদায় করে দিল, রুমে ফিরে রমার কথা ভাবতেই বদর মনে মনে হাসতে লাগল।






                            ৮৩

 সকালের দিকে ঘুমোনোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হল।রমাদিকে পূর্বে কোনদিন এতটা লাজ লজ্জাহীনা সে দেখেনি। রমার শরীরের একটা ঘ্রাণ তাহার শরীরে অনবরত বহিতে লাগিল।
কেবলই মনে হইল, রমা এখনও তাহার শরীরের সাথে লেপ্টে আছে।

নারীর শরীরের ছোঁয়া যে কোন পুরুষের মধ্যে একটা পরিবর্তনের জানান দিয়ে থাকে। তাহার মনেও তার ব্যাতিক্রম ঘটিল না।
 মনে মনে ইহাও ভাবিল,সে নিজে একজন মুসলমান কিন্ত তাহাকে একান্ত আপন করিয়া পাইতে গেলে অনেকটা বাঁধা বিপত্তির সন্মুখিন হইতে হবে।এই পাহাঢ় সমেত বাঁধা পেরিয়ে  আগলে রাখার ধৈর্য তাহার কুলোবে কিনা ।কিন্ত এও ভাবিল যে, রমাদি এই পথের সারথী হয়ে সেও বা কতটা পথ অতিক্রম করিতে পারিবে।সনাতনধর্ম বিষয়ে তার মধ্যে প্রচুর জ্ঞান অন্তনিহিত রয়েছে। সে বা কি করে খণ্ডাবে এই সাধনা, তাহা নিয়েও চিন্তিত কম হইল না।

ওদিকে রমাদি বিছানায় শুয়ে শুয়ে একটা মধুর হাসি হাসলেও। সে জানে, বদর কতটা সৎ ও সাহসী একজন পুরুষ, তাহার মধ্যে পুরুষের গুণাবলীর কোন কিছুই অভাব নেই। ধবধবে ফর্সা না হলেও তিনি যে একজন সুপুরুষ তাহা বলিবার অবকাশ রাখে না।কারন, গত প্রায় সাত বৎসর অতিবাহিত হতে চললেও এই পাড়াগাঁয়ের অনেক উঠতি মেয়েরা তাহার গায়ে গতরে পড়িতে চাহিলেও সে অধ্যবধি পর্যন্ত কারো দিকে ফিরেও তাঁকায়নি। ইহা  খুব ভালবাবেই উপলদ্ধি করিয়াছে।এবং বীথি শত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হইয়াছে। তাইতো তাহার সে সুখের ধন, মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিল যে, কোন
মতেই তাহা হাত ছাড়া হইতে দেবে না।এবং নিজেকে সারা জনমের তরে তাহার কাছেই কাটাইবে বলিয়া ভাবিল।

কিন্ত রমাদি এত কি্ছু ভাবনার পরেও মনে মনে ভয় পাইতে লাগিল।







                               ৮৪

কারণ,তিনি ভাগবান কে অন্তর থেকে তাহার আনুগত্য করেন।ভগমানের কৃপা থেকে বঞ্চিত হইলে তাহাকে একদিন নরক বাস হইতে হইবে। কিন্ত সনাতন ধর্মের রাধাকৃষ্ণের যুগল প্রেমের কাহিনীও তাঁর বেশ ভাল মতই জানা ।কিন্ত ধর্ম বিচ্চুতি দিয়ে অন্য ধর্মে পা রাখলে তাহাতে সমাজ মানিয়া লইতে চায় না।এই উভয় সংকটে পরিয়া রমাদি সারাদিন ঘরে নিজেকে আবদ্ধ রাখিল।বদর দুপুরে খাবার খেতে এ ঘরে আসলো কিন্ত  তাহার মুখোমুখি হইল না।তবে প্রচুর বই পত্র পড়ে এই টুকু জানা আছে যে,
প্রেম মানুষের সুকুমার বৃত্তি। প্রেম বলতে শুধু নারী পুরুষের ভিতরকার যৌনাচারই বুঝায় না। মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য প্রেমময় বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার করেছেন। স্বামী বিবেকানন্দ জীবে প্রেমকে ঈশ্বরের সেবা বলেছেন। ইহাও জানে যে, হিন্দু ধর্ম মতে, নারী পুরুষের প্রেম বৈধ।

তার মধ্যে ধার্মিকতার একটা প্রভাব লক্ষ করা যায়।স্নায়বিক থেকে ধর্ম বিভাজন তাহার পছন্দ না হলেও বদরের জন্য তাহার মন সপে দিয়াছে।
আর এর শেষ পরিনতি যাহাই হোক না কেন, রমাদি সারাদিন ভেবে এই সিদ্ধান্তগ্রহণ করল,বদরকে তিনি আপনার করিয়া লইবেন।
ইহাতে যদি তাহাকে জাতীকূল বিসর্জন দিতে হয় তাহাতে তিনি কার্পণ্য বোধ করিবে না।
ইহাও ভাবিল যে, কবি কাজী নজরুলের জীবনে একাধিক নারীর আগমন ঘটিয়াছে,তাঁহার পরও প্রমিলা সেনগুপ্তা তাহাকে তিনি পতি হিসেবে নির্বাচন করিয়া বেশ সুখী হইয়াছেন।
সনাতন ধর্ম যেহেতু প্রমিলা দেবীর ক্ষেত্রে কোন বাঁধা হয়ে দাড়ায়নি, তবে আর ভয় পাইবার কোন হেতু মনে করিল না।। স্থির করিল আজ থেকে বদরের দেখভাল করিবার দায়িত্ব বুঝিয়া লইবেন।কেননা তাহাকে আর দুরে দুরে রাখিবে না।
সেই সাথে তাহাদের বাড়ির জন্য, মাকে বলিয়া কিছু নগদ অর্থ প্র্দান করিবে।








                                ৮৫

রমাদি নিজেদের সংসারটা খুব ভালো করিয়াই জানে যে,বাবা মা তাহার বিবাহের জন্য পূর্ব থেকেই অনেক গুলো সোনার গহনা বানিয়ে রেখেছেন। মনে মনে ভাবিল,সেগুলোর আর প্রয়োজন নাই, কারন বদরের মধ্যে লোভ বা লালসা বলতে সে কিচ্ছু দে্খেনি।

 সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে একাকি মনে হইতেছিল, ততক্ষনে সন্ধা ঘনিয়ে গেল। মা তখুন শাখ বাজাইতেছিল,,
সেই সময় বি্ছানা ছাড়িয়া ধীর পায় বারান্দায় আসিল।বদরের সাথে চোখাচোখি হতেই মিটিমিটি হাসতে লাগল।মায়ের উলু ধবনি দেয়া হয়ে গেলে বলিল,ঃ প'রে যাস নে আবার।
রমাদি মায়ের কথা শুনিলেও সেদিকে দৃষ্টিপাত করিল না।অনেকক্ষন উঠোনে হাটা চলা করিয়া মাকে বোঝাইতে চাহিল যে,সে পুরোপুরিভাবে সুস্থ হইয়া গিয়াছে।এরপর মায়ের কাজেও হাত বাড়াইতে লাগিল, মা নিষেধ
করিলেও তাহা মানিতে চাহিল না।রাতের খাবার খাওয়া হয়ে গেলে 
মায়ের উপস্থিতিতেই কহিলঃবদর দা দাড়াও,,
ঃকেন?
ঃ সারাদিন ঘুমিয়ে ছিলাম, তাই তোমার রুমে ব'সে গল্প করব।
মা তেমন কিছুই বলিল না।

টেবিলে পাতা চেয়ার খানি টানিয়া মুখোমুখি বসিলে বদর কি্ছুটা ইতচ্ছত হইল।বলিল,,ঃরমা তুমি দিন দিন বদলে যাচ্ছ।
ভ্রু কুচকে একটা সু্খের মিষ্টি হাসি হেসে নিল, কিন্ত সেই হাসির কোন সারাশব্দ পাওয়া গেলনা। পরমুহুর্তে বলিলঃ বদরদা আমার হাতখানি একটু ধ-রো- না- - -।


রমাদির আগমন তিনি সহজভাবে মেনে নিতে পারছিল না।বরং, ইহা ভাবিয়া অবাক হইল যে, রমাদির এই পরিবর্তন খুব শীগ্রই তাহাদের দুজনকেই চিতায় দাহ্ করিবার উপক্রম হইবে। 
কারন,এই বাঘিলের গোঁড়া হিন্দু সমাজ তথা তাহার মা কোনদিনও ইহা মানিয়া লইতে চাহিবে না।হাতখানি ধরিতে চাহিল না। অবশেষে রমাদি অনেক পীড়াপীড়ি করিতে লাগিল। কিন্ত যখন কোন মতেই সায় দিল না তখন রমাদি চেয়ার থেকে উঠে ঘরের দারজায় খিল (ছিটকানি) লাগিয়ে দিল। তাহাতে বাঁধা দিতে উদ্যত হলে এই বলিয়া ভয় দেখাইল যে,সে চিৎকার করিয়া গ্রামের সবাইকে বলিবে যে,বদরদা তাহাকে জোরপূর্বক শ্লীলতাহানি করিয়াছেন। এরপর নিজে আত্মহনন করিবে।

ইহা শুনিয়াই সে হাসিতে লাগিল, যেন তাহার সে হাসি থামিল না।রমাদি ঠিক সেই সময় জরিয়ে ধরে তাহার বুকে মাথা রাখিল।
বদর ঠায় দাড়িয়ে অনুভব করিল যে, রমার সমস্ত শরীর তাহার উপর ঢেলে দিয়েছে। তার দিকে তাঁকিয়ে আরও দেখল,রমার দুচোঁখ বেয়ে জল গড়িয়ে তাহার বক্ষদেশ ভিজিয়া যাইতেছে।
বদর  বুঝিতে পারিল সে কিছু  বলিতে চায়। তাহা তাঁহার মনোযোগ সহকারে স্রবণ করা দরকার।তারপর  বলিল,,
ঃ তুমি যাহা চাও তাহাই পাবে এবার ছাড়ো
ঃ সত্য বলছো
ঃ তোমার বদর দা,কখনও মিথ্যা বলে না

সে ইহা ভাল করিয়াই জানে, বদরদা কোনদিনও মিথ্যা আশ্বাস দেবে না। কারন সেই ছোটবেলা থেকে এক সাথে বড় হওয়া অবধি কোনদিনও তাহার কথার নড়চড় হয়নি।একদিকে চোঁখে জল, অন্য দিকে মুখখানা তখন হাসিতে ভরে গেল। এরপর বদর তাহার চোখের জল হাত দিয়ে মুছে দিল।






                       ৮৬
বদরের বক্ষদেশ থেকে মাথা সরায়ে  বলিল,,ঃআমাকে ভালবাসিবে তো?
ঃ সন্দেহ হয়
ঃ আমার বদর -দাকে---তা কি করে হয়।
ঃ এবার দরজা খোলো মা আসতে পারে।
ঃ খুলছি বাবু,কিন্ত --------
ঃআবার কি?
ঃআমার সিথিতে তুমি চুম্বন দাও।
হাসতে হাসতে বলিল,
ঃ রমা-তাহা কি সম্ভব!
ঃ বদর দা- আজ থেকে তুমিই আমার বর, আমায় খুশি করবে না?

রমাদির এই বিমুর্ত প্রতিক যাহা ভাষায় প্রকাশ করিবার মত আমার সাধ্য নাই। শেষমেষ তাহাই করিতে উদ্যত হইল যাহা নিজের জন্য লজ্জাকর।ইহতে  বাধা হয়ে অবশেষে, তার দুহাত দিয়ে মাথাখানি ধরিয়া তাহার কপালের ঠিক মাঝ বরাবর চুম্বনসিক্ত করিতেই।উঠোন থেকে ভেসে এলো রমার বাবার কণ্ঠস্বর।
ঃরমা- মেষো মশাই --এবার কি হবে?



দরজা খুলেই মেষো কে নমস্কার করিয়া তাহার হাতখানি থেকে পাটের থলিটি এবার নিজের হাতে লইলেন। রমাদি বাবাকে জরিয়ে ধরে, কাঁদতে লাগল।
 তারপর গভীর রাত পর্যন্ত মেষো মশাইয়ের সাথে পারিবারিক থেকে শুরু করিয়া পড়ালেখা ও দেশের বর্তমান বিষয়বস্তু লইয়া আলাপ আলোচনা করিতে লাগিল। মা এসব বিষয়ে কোন কথা আগবাড়িয়ে বলিল না।।রমাদি একবার শুধু বাবাকে বলিল,,ঃ তুমি ক'দিন থাকবে?
ঃ কাল পরশু
এরপর তাহাদের কথা বিঘ্ন ঘটিল।




                               ৮৭

রমাদির বাবা একজন ভদ্রচিত্তের মানুষ।তিনি অপ্রয়োজনীয় কোন কথা সাধারনত বলে না। রমাদি ভাবল,বাবাকে বলিবে যেবদরদের সংসারের জন্য কিছু একটা করতে পারবে কি না।কিন্ত তাহা মুখে বলিতে সাহস পেল না। 

সকালে মা ঘুম থেকে ডেকে রমাদির বাবার নিকট আসতে বলল।নিজে অনেকটা বিচলিত হয়ে পড়ল, এত সকালে মেষো কেন ডাকে । তাহা লইয়া বিস্তর গবেষনা করিয়াও নিজের মধ্যে কোন উত্তর খুঁজিয়া পাইল না।শেষমেষ ভাবিল,তবে কি রমাদি,মেষোকে উল্টোপাল্টা কিছু বলেছে, যে তার জন্য মেষো তাহাকে ডাকিতেছে।তাহার মধ্যে কিছুটা ভয় পরিলক্ষিত হইতে দে্খা গেল।অতপর
বদর নিজেকে স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করতে করতে মেষোর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
অবুঝ শিশুর মতো মাথা নিচু করে দাঁড়াতেই মেষো  বলিল
ঃআজই তোমাদের বাড়ি যাব। তারাতারি স্নান সেরে নাও।
 রমাদি বাবাকে বলিল,
ঃ বাবা তুমি যাবে,কেন?
ঃ এট তোমার জানার দরকার নাই।পরে যেনে নিও
রমাদি দ্রুতগতিতে  ঘর থেকে বাহির হইয়া মায়ের নিকট দাঁড়াল। এবং মায়ের কাছে বিষধ জানিতে চাহিল।
মায়ের মুখ থেকেও উত্তর না  পেয়ে  রাগান্বিত হয়ে বলল,
ঃ আমি যাব না:
ঃতর বাবাকে বল
মেষো ও মা কেন তাহাদের বাড়ি যেতে চায়।তাহা বুঝিতে পারিল না। তবে ভিতরে ভিতরে একটা সংকোচ বোধ করিতে লাগিল। মেষো যেহেতু রমাকে বলিল না সেই হেতু সেও আর কোন প্রশ্ন করিল না।







                                 ৮৮
তাহাদের বাড়ির উদ্দেশে সকলেই রওনা হইবার পর মনে মনে ভাবিল, বাবার কাছে মেষো হয়তো আরজি পেশ করিবে।কিন্ত ইহা লইয়া বিস্তর চিন্তা করিয়াও ভেবে পাইল না। রমাদিকেও বেশ চিন্তিত মনে হইল। বেলা যখন মাথার উপর খাড়া হইবার উপক্রম। ঠিক সেই সময় দুর থেকেই তাহাদের বাড়ি দেখা যাইতেছিল। মা অনেকটা পথ হাটিয়া  ক্লান্তিকর বোধ করিতে লাগিল। মেষো মায়ের হাত ধরে পথ চলিতেছিল।রমাদিও বদরের পায়ের সাথে পা মিলিয়ে হাটতে ছিল। রমাদি চিন্তাযুক্ত হইলেও তাহার মধ্যে একটা আনন্দও বহিতে ছিল।সেই সাথে ইহাও স্থির করিয়া রাখিল ব্যাতিক্রমী কিছু ঘটিলে চিরদিনের জন্য বদরদের বাড়িই থাকিবে। এবং প্রয়োজনে বাবা মায়ের সাথেও সম্পর্ক ছিন্ন করিতে দ্বিধা করিবে না।তাহারা  হাজারো চিন্তা মাথায় লইয়া  বদরদের বাড়ির সামনে গিয়ে পৌছাল।

 বাবা সেসময় নদী থেকে বাড়ি ফিরতেছিল, তাহার হাতে জাল দিয়ে ধরা, একখানা হাত দুই বোয়াল মাছ ছিল এবং তাৎক্ষণিক বদর তাহা হাতে লইল। এরপর সকলে কুশল বিনিময় করিয়া বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করিল।দুপুরবেলা খাবার দাবার সম্পন্ন হলে দক্ষিনের ঘরে বাবা ও মেষো  দুজনে মিলে গল্প করিতেছিল। রমাদি ও বদর সেখানে উপস্থিতি ঘটিলে, রমাদির বাবা তাহাদিগকে বলিল
ঃজরুরী বিষয়ে কথা বলিতেছি তোমরা এই খান থেকে যেতে পারো
দুজনেই কিছুটা লজ্জিত হইল তারপর দুজনেই ঘর থেকে বাহির হইয়া গেল।এরপর বাড়ির বাহিরে কলাগাছের নিচে খর পাতা ছিল, রমাদি ও বদর সেখানেই বসল। 




                              ৮৯

অনেকক্ষন পর রমাদি বলিল,
ঃ বাবা কি বলিতেছে?
ঃ ন্যাকামি করো না। বাবার সামনে কি করে দাড়াবো তাহাই ভাবছি।
ঃ আমি কিচ্ছু জানি না 
ঃ আমি মিথ্যে মোটেও পছন্দ করি না
ঃ তোমায় দিব্যি করে বলিতেছি।

দেখল রমাদিও এটা নিয়ে বেশ চিন্তিত। এর পর রমা প্রশ্ন করিল
ঃ মা বাবা  এই খানে কেন এলো?

 যখন আরও জানতে পারল যে তাহারা আজি বাড়ি ফিরিতেছে।
তবে বদর যাচ্ছে না, একথা শুনিয়া তাহার মাথায় একটা বাজ পড়িল।
মাকে বারংবার জিজ্ঞাসু করিতে লাগিল। তাহার মা উত্তর করিল যে, দুচারদিন পর বদর ফিরিবে। কিন্ত রমাদি তাহা বিস্বাস করিল না।
সে মনে মনে ভাবিল, বাবা হয়তো তাহাদের ছাড়াছাড়ি করিয়া ফেলিতেছে। টুনির কাছে জানিতে চাহিলে সেও বাবার উপর দিয়ে গরিয়ে দিলেন।এরপর ।রমাদি লাজ লজ্জাহীনা মেয়ের মতন বাবার সামনে গিয়ে বলিতে লাগিল,
ঃ বাজান বদরদাকে সাথে নিয়ে যাই
কথাটা বলামাত্রই বদরের বাবা হেসে বলল ঃদুইডা দিন থাইক
রমাদি তাৎক্ষনিক বলিল,,ঃবাজান আমিও থাকি
ঃআমি তো থাকবারই কইলাম তোমার বাপেরে,, হ্যায় থাকবো না।
ঃকিন্ত আমি থাকবো
রমাদি মনে মনে ভাবিল বদরের সাথে হয়তো চির বিচ্ছেদ ঘটিতেছে। তাইতো সে  জোর করিতে চাহিতেছিল  যেন তাহাকে কেহ বিচ্ছেদ করিতে না পারে।বাবা তখন মেষোকে ডাকিয়া বলিলেন যে রমা মা থাক। দুদিন পর বদরের সাথে যাইবে।  বাবা বলার পর, মেষো না করিতে পারিল না।




                        ৯০

 এরপর, একটা ঘোড়ার গাড়ি ঠিক করিয়া দিলেন রমার মা ও মেষোকে পৌছে দেবার জন্য।ঘোড়ার গাড়িটি বেশ জোরেই ছুটে চলছিল কিন্র এবরেথেবড়ে পথ হওয়ায় তাহার মধ্যে বসিয়া থাকা যাইতেছিল না।
রমাদির বাবা রমাদির মাকে জরিয়ে ধরে রাখল যেন ঘোড়ার গাড়ি ্থেকে ছিটকে প'রে না যায়।

এ দিকে রমাদি রয়ে গেল বাড়িতে। টুনির পাশে রাতে যখন শোবার বিছানায় হাজির হলো। তখন  টুনির নিকট আবারো জানিতে চাহিল বাবা মা কেন এসে্ছিল?
টুনি জানাল যে মেষো মশাই তাহার বাবাকে অনেকগুলো টাকা দিতে এসেছিল কিন্ত বাবা নিতে চাই্ছিল না শেষমেষ তাহা মা্য়ের হাতে দি্য়েছেন।
 টুনির মুখে একথা শোনার পর কিছুক্ষন নিরব থাকিয়া টুনিকে বলিল ঃআমি কেন রয়ে গেলাম জানো
ঃ ক্যামনে জানুম দিদি।
ঃ এবাড়িতে আমাকে রাখবে? তোমার বদরদার কাছে? তোমাদের কাছে?
ঃ তা কি অয় দিদি। তোমাগের জাত আলাদা। দাদা জানে?

রমাদি বেশ বুঝিতে পারিল, টুনির ব্য়স কম হলেও সে খুব ধ্রুর্ত, অল্পতেই সব কিছু বুঝিতে পারে। তাহার মধ্যে শিক্ষা দিক্ষা কম হলেও জ্ঞানের কোন কমতি নেই।


 মা টুনিকে বলিল,বদরের জন্য কাচারি ঘরে বিছানাপত্র ঠিক করিয়া দিতে।টুনির ঘরেই বদরের শোবার জন্য কাথা বালিশ রাখা ছিল, টুনি তাহা হাতে লইতেই রমাদি সেগুলো হস্তগত করিল। এর পর বলিল
ঃকাচারি ঘরে আমি যাই তুমি এখানেই থাকো।
টুনি নিষেধ করিলেওি তাহা মানিল না। এরপর সন্তর্পণে কাচারি ঘরে প্রবেশ করিতেই বদর হাক ছাড়িলঃএই টু-নি,,,
টুনি তাহার ঘরের দরজা হইতে সাড়া দিলঃ আসছি দাদা
টুনি খুব তারাতারি কাচারি ঘরে পৌছাল এবং গিয়ে দেখল,রমাদি বিছানাপত্তর ঠিক করিতেছে। বদর  বলিল,,
ঃ রমাকে কেন পাঠাইলি?
টুনি তখুন চুপ রহিল। রমাদি বলিল
ঃআমি নিজে থেকেই এসেছি
সে ভেবেছিল  তাহার আগমনে বেশ খুশি হইবে। কিন্তু হিতে বিপরীত হয়ে গেল। দ্রুত ঘর থেকে বাহির হয়ে যায়, টুনির ঘরে বসে রমাদি মন খারাপ করে বসিয়া রহিল। এর পর রমাদি না ঘুমিয়ে সারারাত জেগে রইল।সকালে টুনির সাথে নদীতে স্নান করিয়া ফিরিতেছিল,, 
ঃআমি যদি জাত না মানি তবে আমাকে থাকতে দেবে?
ঃ দিদি তোমাগো কতা বুঝি না ?দাদাকে পছন্দ?
ঃ তোমার দাদা আমাকে পছন্দ করে না,, আমাকে সাহায্য করবে?
ঃ ক্যামনে করুম?
ঃআমি যাহা করতে বলি
ঃবাবায়  জানলে আস্ত রাখবো না
ঃ তুমি ব'লে দিলে তো তিনি জানবেই?
ঃ তা কি কই্ছি দিদি
ঃ আমার কথা শুনবে তো?
ঃহু,,,,, দিদি 
রমাদি আর কোন কথা বাড়াইলো না। 





                               ৯১

বাড়ি ফিরে মায়ের পরনের একখানা শাড়ি চাহিল, টুনি জানিতে চাহিল মায়ের শাড়ি দিয়ে কি করবে পরিশেষে জানাইল যে, তিনি শাড়িটি পরিবেন।টুনির বিবাহের জন্য একখানা লালপেড়ে শাড়ি টুনির মা ফেরিওয়ালার নিকট থেকে কিনিয়াছিলেন তাহা টুনির হাতে দিলো,টুনি যখন শাড়িটি রমাদির হাতে দিচ্ছিল তখন রমাদি বলিল যে তাহাকে তাহা পরিয়ে দিতে হবে।রমাদিকে শাড়িখানা যখন পরাইতে লাগিল তখন টুনি হিংসে জ্বলে উঠল। কারন গায়ে তাঁর বয়সী অনেক মেয়েকেই বিয়েবাদলে শাড়ি পরিয়েছেন কিন্ত রমাদির এই ধবধবে শরীর টিতে তিনি যাহা দেখিতে পাইলেন তাহা হয়তো কাগজে কলমে লিখিয়া শেষ করা যাইবে না।
তবে কিঞ্চিৎ পরিমান না লিখিলেও পাঠকগণ হয়তো বুঝিতে কষ্ট হইবে।
এটা চরাঞ্চল হওয়ায় আধুনিকের ছোয়ার কোন বালাই নাই, তাহা হয়তো আপনারা বুঝিয়া থাকিবেন।

তবে আষ্চর্য জনক ব্যাপার হলো এখানে অল্প বয়সী মেয়েরা তথা বয়স্কা মহিলাগণও এই সাড়ে দশহাত শাড়িতে কোন প্রকার সায়া ও ব্লাউজ পরার প্রচলন নাই বললেই চলে। একমাত্র বিয়ে শাদিতেই ইহা গায়ে গতরে চাপনো হয় মাত্র। ইহার ফলে রমাদির ভাগ্যে তাহা জুটিল না।তবে এই শাড়ি পরা মহিলাগণ শহুরে মেয়েদের মতন করিয়া না প'রে, একটু আলাদা ভাবে গায়ে গতরে চাপিয়া থাকেন।তথাপি ইহাদের শরীরের অনেকটা অংশ ঢাকা থাকিলেও হঠাৎ কেহ প্রথমবার দেখিলে মনে হতে পারে, যেন বাহির থেকে তাহার শরীরের পুরোটাই দেখা যাইতে্ছে । কিন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা ইহাকে শরীর আবৃত মনে করিয়া থাকেন। এবং ইহাই তাহাদের দৈনন্দিন পোষাকে রুপান্তরিত হইয়া যাওয়ায় সেভাবেই পরিধান করে থাকেন।

গ্রামাঞ্চলে এই ধরনের শাড়িপরা মহিলাগণের সংখ্যাই বেশী।শাড়িটি যেভাবে রমাদির গায়ে চাপানো হলো এখানে অনেকেই সেটিকে বাংলাশাড়ি পরা্ --বলিয়া থাকেন।তবে রমাদিকে যখন শাড়ি পড়াইতেছিল টুনি দেখিল, রমাদি বোধহয় এই মাত্র তিনি যৌবনে পদার্পণ করিয়াছেন কারন, তাহার শরীরের নিম্নাংশ থেকে উর্ধাংশ পর্যন্ত কোথাও কোন রেখাপাতের চিহ্ নেই। এবং বলা চলে যে, অসূর্যস্পশ্যা 





                             ৯২

একজন পূর্ণ রমনীর শরীরের সবগুলো গুণাবলী রমাদির মধ্যে রহিয়াছে। বলা বাহুল্য এই মুহুর্তে যদি কোন পুরুষ  হঠাৎ দেখিয়া ফেলেন তবে তাহার কাণ্ডজ্ঞানহীন মাতালের স্বভাব ফুটিয়া উঠিতে আর দেরী হইবে না।শাড়িখানা পড়ানো হয়ে গেলেই রমাদি বলিল,,
ঃ তোমার দাদাকে একটু ডেকে আনো।
টুনি বুঝিতে পারিল, রমাদি বোধহয় দাদাকে দেখাইতে চাইছে তাহাকে কেমন দেখাইতেছে। কিন্ত টুনি ভাবিল,এখুন যদি রমাদি কে দাদা দেখিয়া ফেলেন তবে কি দাদা নিজেকে ধরিয়া রাখিতে পারিবেন। তাইতো টুনি একটু ইতস্তত করিল। কিন্ত রমাদি আবারো যখন আপত্তি করিল তখুন টুনি কাচারি ঘরের সামনে থেকে দাদাকে বলিল যে দিদি তাহাকে ডাকিতেছে।বদর দেখিল যে, টুনি দেরি না করিয়া চলে গেল মায়ের কাছে।টুনির প্রখরবুদ্ধিমত্তায় বদর ভাবিতেও পারিল না , রমাদি কেন তাহাকে ডাকিতেছে।এর পর টুনির ঘরে গিয়ে দাড়াইতেই একটা বজ্রপাতের আলোকরস্মি দেখিতে পাইল। এবং শরীরখানা যেনো থরথর করিয়া কাপিয়া উঠিতে লাগিল, কি শুনিবে আর কিইবা বলিবে ভেবে পাইল না। কারন এতটা নগ্নতায় পূর্বে কখুনোই তিনি দেখেননি।
পাঠক,
(টুনি ঘর থেকে বাহির হইবার পর রমাদি তাহার শরীরের উর্ধাংশ থেকে শাড়িটুকু সরিয়ে মাটিতে ছেড়ে দিয়েছিল)বদর রমাদির সামনে দাড়িয়ে যখুন চোখদুটো বন্ধ করিল।ঠিক সেই সময় রমাদি বদরের পায়ের নিকট বসিয়া,
বদরের পায়ের ধুলো মাথায় লইতে উদ্যত হইলে,, বদর এবার চোখ খুলিয়া বলিলঃ রমাদি এটা কি করিতেছ?
ঃ স্বামীর পদধূলি নিচ্ছি।
রমাদি বেশকয়েক বার তাহার পায়ে হাত দিয়ে পর পর তাহার নিজের মাথায় হাত বোলাইতে লাগিল।এরপর রমাদি যখন মুখোমুখি দাড়াইল, তখন রমাদির কোমরের দিকে হাতখানি বাড়াইতেই রমাদি এবার চোখদুটি বন্ধ করিল,রমাদি ভাবিল,বদর হয়তো তাহাকে শ্প্র্ষ করিবে কিন্তরমাদি অনুভব করিল যে শাড়ির আঁচল খানি ধরে তাহার শরীরে তাহা জড়ায়ে দিতেছে।
তখুন চোখ খুলিয়া বদরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থাকতে দেখা গেলেও তাহার ওষ্ঠদয় তখুন কাঁপিতেছিল।তখুন বদর তাহার ললাটে চুম্বনশিক্ত করিলে রমাদি অনেকটা অনুভুতি প্রবন হইয়া গেল।






                       ৯৩

রমাদি মনে মনে ভাবিল যে তাহার চিন্তাকুল যবনিকাপাত ঘটিয়া গেছে।
কারন তাহার মধ্যেকার একটা অমানিশার ঘোর অন্ধকার তাৎক্ষনিক কাটিয়া গেল।
এবং ইহা আবারো প্রমাণ হইল যে, তিনি তাহাকে সত্য সত্যই ভালবাসিয়াছে। তাহা না হইলে এমত অবস্থায় নিজেকে সামলে নিতেন না।রমাদি 
 আত্বতৃপ্তি এই যে,তাহার স্বযত্নে বিলিয়ে দেয়া ধন এতটুকুও হেরফের হইল না। শেষমেষ একটা মুচকি হাসি হাসিয়া আহ্লাদের সুরে বলিল, তাহাকে সারা গাঁ ঘুরাইয়া দেখাইতে হইবে।এবং ভয় দেখাইল যে তাহা না হইলে তাহাকে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে মাকে ডাকিতে থাকিবেন।
শেষমেষ রাজি হইয়া গেলকিন্ত বদর বাদসাধিল এই যে এই পরনের শাড়িখানায় তাহার সাথে কেমনে বাড়ির বাহির হইবে।পাড়াগাঁয়ের লোকজনই বা কি বলিবে।কারন রমাদির পরনের হলুদে লালপেড়ে শাড়ি সাধারনত বিবাহেই পরানো হয়।রমাদিকে কোনমতেই বোঝাইতে পারিল না শেষঅবধি রমাদির বেহায়াপনাই ঠিক রহিল।তাহারা ঘর থেকে যখন দুজনেই বের হয়ে মায়ের নিকট দাড়াল মা একটা অট্রহাসিতে ভরে গেলেন।রমাদিও তখুন হাসিতেছিল।বদর এই হাসির কোন মাথাম্ডু বুঝিল না। এরপর  মায়ের পদধূলি লইলেন টুনি তখুন বলিয়া উঠিল,ঃদিদিকে আসিরবাদ দ্যাও
মা মাথায় হাত দিতেই টুনি বলিল,,
ঃ দাদা মাকে সেলাম কর।
অনেকটা লজ্জিত হইলেও তাহা চাপিয়া রাখিবার জন্য তাৎক্ষনিক বলিয়া উঠিলঃ আমার থাপ্পর খাবি।
থাপ্পরের কথা বলা মাত্রই টুনি সেখান থেকে দৌড়ে পালাল। মা একবার বদরের দিকে আরেকবার রমার দিকে দৃষ্টি দিতেই প্রানটা যেন তাহার জুরিয়ে গেল।  রমাদির শরীরে জরানো কাপড়ে আবৃত ধবধবে দেহখানি ঢাকা থাকিলেও একজন মাঝবয়েসী মহিলার যাহা যাহা দেখিবারতাহা তিনি দে্খিতে দ্বিধাহীন করিলেন না।






                     ৯৪

মনে মনে ভাবিল,তাহাজ্জুদের নামায পড়িয়া কৃপা করিবেন যেনো বদরের জন্য এই রকম একটা বউ খুজিয়া পান।
মা ইহা জানে যে, রমাদের জাত আলাদা।তাহাকে নিয়ে কোন খোয়াব দেখা ঠিক হবে না।তবে রমা যদি মুসলমান হইত তাহা হইলে হয়তো মেয়ের বাবা রাজি না থাকিলেও জোর পূর্বক রমাদিকে এ বাড়িতেই রেখে দিতেন।
ইহা তাহার চক্ষু চাহনিতে বোঝা যাইতেছিল।যাহা হোক সকালের খাবার খেতে বসিয়া  বাবা  এই সাজসজ্জায় দেখিয়াও না দেখার ভান করিয়া খাবার খাওয়া সম্পন্ন করিল।

এরপর রমাদি যখুন বদরের সহিত বাড়ির বাহিরে বের হলেন তখুনও একবার  বাবা আড়চোখে চাহিলেও আর সেইদিকে ফিরে তাকাইলেন না।
রমাদি ও বদর যখন তাহাদের বাড়ি থেকে উত্তরের দিকে হেটে চলতেছিল তখুন গ্রামের মহিলা ও পুরুষগণও অনেকেই বাড়ির ভেতর থেকেই উকিমেরে তাহাদের দে্খিতে লাগিল।


অতপর, গ্রামের সীমানা ছাড়িয়া ফাঁকা মাঠটি পেরুবারকালে
 রমাদি পথিমধ্যে দাড়াইল।এতক্ষণে জিজ্ঞেস করিল তাহারা কোথায় যাইতেছে। বদর উত্তর করিল যে, সামনের যে গ্রামটি দেখা যাইতেছে সেখানে তাহার ফুুঁপুর বাড়ি।এই ফুঁপিই তাহাকে ছোটবেলায় কোলে পিঠে করিয়া মানুষ করিয়াছে।। কিন্ত তাহাদের সে বাড়িতে এখুন যাতায়াত নাই বললেই চলে।রমাদি কহিল,পীষিমার কোন ছেলে মেয়ে আছে কিনা?হাত ধরে টানতে টানতে বলিল যে,তাহার টুনির বয়সী একটা মেয়েও রহিয়াছে।ওর নাম জয়া,
সে জানিতে চাহিল, জয়া দেখতে কেমন?
জয়ার নামটি বলতেই হাসতে লাগলঃ তুমি হাসছো?
জয়ার স্মতি বদর কোনদিনও ভুলতে পারিবে না। কারন, ছোটবেলায় স্কুলে পড়িবার সময় জয়াই ছিল তাহার খেলার সাথাী। খেলার সাথী বলিলে হয়তো ভুল হইতে পারে, 






                   ৯৫

কারন,প্রতিটি মানুষের জীবনে এমন কিছু ঘটনা লুকায়িত থাকে যাহা তাহাকে চিরকাল মনে রাখিতে বাধ্য করে।কখুনো কখুনো পিছনের স্মতি কাহারো জীবনে তা-রা করিয়াও বেরায়।
পাঠক,
জয়া হলো বদরের আত্মার নাম। এই জয়া সে বয়সেই বদরকে বর বানিয়ে ফেলেছিল পরিবারের সকলের মাঝে।
কিন্তু তাহার সেই অল্প বয়সের প্রেম টিকতে পারেনি সময়ের স্রোতে।বদর যখন  বললজয়া তাহার বাল্য বন্ধু, মুহুর্তেই রমাদির মুখখানি ফ্যাকাসে হইয়া গেল।মেয়ে মানুষগুলো স্বভাবত এরকমই হয় তাহা না হলে এরা একে অপরকে কেনই বা সহ্য করতে পারে না। ভাগ্যিস বদর রমাদির মু্খের দিকে তাকায়নি।
ঃ জয়া এখুন কোথায় আছে জানো?ওর বিয়ে হয়েছে কি?
ঃ সম্ভত ও বাড়িতেই আছে?
ঃ জয়ার বর, আপাদত নেই।
ঃ কেন বিয়ে করেনি?
ঃকরেছিল দুদিন সেখানে ছিল কিন্তু টিকতে পারেনি।
ঃকেন? 
ঃউু---বাপরে- তুমি তো উকিল হয়ে গেছ।তুমি সেখানটা গেলেই জানতে পারবে।
ঃআগে থেকেই জেনে যাই,,তোমার ছেলেবেলার জয়া কেন দুরে রইল,
রমা আবেগতারিত হইয়া গিয়াছে। ঠিক সেইসময় প্রসংগ বদলাতে চাইছিল কিন্তু রমাদির একটার পর একটা প্রশ্ন তাহাকে কিছুটা বিচলিত করিয়া ফেলিতে লাগিল।প্রচন্ড রোদ মাথার উপর, তারাতারি চলো। 
কিন্ত রমাদি জোরে জোরে হাটিলেও জয়া কে নিয়ে কৌতুহলের কমতি রহিল না।শে্ষমেষ তাহারা যখন জয়াদের বাড়ি পৌছাল।তখন ফুপি তাহার পরিচয় জানিতে পারিয়া বেশ খাতির যত্ন করিতে লাগিল।অনেকদিন পর বদরকে কাছে পেয়ে বাড়ির সকলের কথাও জানিতে চাহিল।





                   ৯৬

 রমাদি দেখিল, ফুপির কথাবলার মধ্যেও একটা দুরত্ব রহিয়াছে।অবশেষে মাটির হাড়িতে রাখা পানি পিতলের গ্লাসে ভরিতে লাগিল, মাঁচা থেকে গুড় ও মুড়ি (খই) বাহির করিয়া আনিল যাহাতে এই পথ হাটিয়া আসার ফলে কিছুটা ক্লান্তি দুর হয়।
যাহা হোক অনেকক্ষন সময় অতিবাহিত হইলেও যখন জয়ার কোন দেখা মিলিল না ।রমাদি তখুন বদরের দিকে চোখাচুখি করিয়া বোঝাইতে চহিল জয়াকে দেখছি না কেন? তাহার শাহাদৎ আঙ্গুল তুলিয়া নিজের মুখখানায় মেলে ধরল এবংরমাদিকে বোঝাইল যে তুমি চুপ করিয়া অনুমান করিতে থাকো।


এবংরমাদিকে বোঝাইল যে তুমি চুপ করিয়া অনুমান করিতে থাকো।

জয়া লাবণ্যময়ী এই হাস্যজ্জল মেয়েটি বাঁওড়ে (বিল) থেকে গোসল করিয়া
বাড়ি ফিরতেই দেখিল,বদরের সহিত একজন সুন্দরী তন্বী নারী পাশাপাশি বসিয়া আছে। মা সেখানে উপস্থিত ছিল বলিয়া তাহাদের মুখের দিকে হা করিয়া তাঁকিয়ে থাকলেও কোন কথা জিজ্ঞেস করিতে সাহস পেল না। তবে তাহার ঠোটের নিচের অংশটি কামড়ে ধরে বদরের মুখের দিকে লোলুপ দৃষ্টিপটে চেয়ে রইল।বদর বুঝতে পারিল, জয়া তাহার মুখের ভাষা হারিয়ে স্মতিভ্রম হইয়া গিয়াঝে।বদর বলিল,,
ঃ জয়া তুই কেমন আছিস?
জয়া তখুন কোন কথা বলিল না,বদর আবারও কহিল,
ঃ জয়া ---রমাকে চিনতে পারলি,,?
রমাদি কিছুক্ষনের জন্য নিজের বিবেক বোধটুকুও হারিয়ে ফেলল।জয়ার চাহনি রমাদির অন্তরে হু হু করে কেঁদে উঠল।জয়া নির্বাক কণ্ঠই বলে দিচ্ছে মানবে মানবীর প্রেম মুখে উচ্চারিত হইলেই উহা ভালবাসায় রুপান্তরিত হইয়া যায় না।তাহার জন্য অনধিকাল অবধি অপেক্ষার প্রহর গুনিতে গুনিতে নিঃশেষ হইয়া গেলেও প্রকৃত ভালবাসা ধরার মাঝে বিচরণ করিতেই থাকে।জয়ার সেই নির্মল প্রতিচ্ছবি রমাদিকে আরো একবার ভাবিতে বাধ্য করিল।এরপর রন্ধনশালায় গিয়ে জয়া গায়ের ভেজা কাপড়খানি খুলে একখানা প্রিন্টখচিত শাড়ি গায়ে চাপিয়ে ফিরিয়া আসিয়াই  বলিল,,
ঃদিদি --তুমি দেখতে ভারি সুন্দর, 
ঃতুমিও,,
জয়া মলিন মুখে কোন কথাই বাড়াল না। 

,

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

রমাদি ১০

স্কুলে নিয়মিত এই পোশাকই পরে।বিপিন রীতিনীতিও সব শিখিয়ে দিল।বিপিনের বোন রমাও পাঠ্যে হিন্দুধর্ম শিক্ষা-র যেকোন বিষয় না বুঝলে, তা আলোচনার মাধ্যমে সহযোগীতা করতে থাকে আজকাল বদর, বিপিনের কাজ কর্মেও সহযোগীতা করে। রমার মা,বদরের এই আচার ব্যাবহারে নিজেও গর্বিত। শুরু থেকেই বিপিনের মাকে, বদর মা বলেই ডাকে।গোঁরা সমাজের লোকগুলোও তার আচার ব্যাবহারে সব কিছু ভুলে যায়।অল্পদিনেই স্কুলেও শিক্ষক থেকে শুরু করে সবার প্রিয় পাত্রে পরিনত হলএই ছেলেটি।প্রতিদিন বিকেলে বদর এখন স্কুল মাঠে ফুটবল খেলে হিন্দু ছেলেদের সাথে। রমার বান্ধবী বিথী প্রায় প্রতিদিনই দুই একবার রমাদের বাড়িতে আসে। আজও বদর এই সময় মাঠে ফটবল খেলিতেছে, এই ফাঁকে বিথী বদরের রুমে যায়, গিয়েই রমাকে বলে ঃএই রমা আমি বদরদার ঘরে রমা তখন ওদের বড় ঘরখানাতে ছিল, একদৌড়ে এসেই দেখে বদরের রুমে বিথী শুয়ে আছে ঃ বিথী তুই বদর দার বিছানায়! ঃ বদর নাই তাই ঃ দাদা দেখলে বকবে ঃ দাদাও নাই হি-হি-হি—হি অনেকক্ষন হাসাহাসি করে দুজনে।এক পর্যায় বিথী বলল, ঃবদরের বাবা,তোকে অনেক ভারি একটা মালা দিছে--তাই না? ঃ ওইটা মায়ের কাছে-যদি হারিয়ে যায়।চল তোকে দে্খাব এরপর,দুজনেই বদরের রুম থেকে বের হল, রম

রুদ্র ম আল-আমিন এর কবিতা, যন্ত্রণা

               " যন্ত্রণা "           রুদ্র ম আল-আমিন নিজেকে  নিজের মতন              বিসর্জন দিয়ে।                        আজি বেচে আছি                 এ -ওর ধার দেনা দিয়ে। কন্ঠনালী ছিদ্র আমার                               রপ্ত করেছি           ঝোড়ো হাওয়া উরতে চলা। আর্যছিলাম পালছেড়েছি              থাকতে দিসনি তোদের সাথে, তাই বলে কি হারিয়ে গেছি                সবার থেকে। বলছি কথা মোদের তরে বলছি নাকো ভুলে যেতে                                   যাচ্ছি তবে যাই। রাখবি মনে,, সকল যাতন রইবে প্রানে কাঁদবি তবে                 দিচ্ছি তোরে বর হাসবো আমি কাঁদবে তর, আপন যত, কার বা আপন কে করিল? বলতে পারিস?         নিখিল ভারত, রইল পরে কার বা তরে।

রমাদি ০৪

স্কুল ছুটি হয়েছে অনেকক্ষন কিন্ত তবুও হেডমাষ্টার মশাই চেয়ারে হেলান দিয়ে চোঁখ বন্ধ করে বসে আছেন। দপ্তরী নীলু বাহিরে বসে অপেক্ষা করছে কখন স্যার বের হবে।শেষমেশ প্রতিক্ষার প্রহর কাটলো, মাষ্টার মশাই বের হলেন, দপ্তরী পাশে দাঁড়িয়ে অফিস কক্ষ তালাও দিলেন, চাবি হাতে দিতেই দেখলেন , চোঁখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরতেছে।দপ্তরী ভাবল কিছু একটা বলি, আবার ভাবল না থাক। তবু আগ বাড়িয়েই বলল, ঃ বিপিনকে পাঠাবেন স্যার?ওর বোন রমা আর বদর, একই ক্লাসে পড়ে!  বিপিনকে ডেকে আনবো?বিপিনের ছোট বোন রমা একটু ব্যতিক্রমী,কিন্ত ওই একমাত্র বদরের সাথে কথা বলে।  নীলুর ধারনা বিপিনকে বদরদের বাড়ি পাঠালেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। নীলুর বকবকানি শোনার পর হেড মাষ্টার সাব কি যেন ভাবল, তার পরই নিলুকে বলল, ঃযাও ডেকে নিয়ে আসো!  নিলু দেরী না করে দ্রুত চলে গেলেন বিপিনদের বাড়ি। মাষ্টার মশাই ততক্ষণ স্কুল বারান্দায় পা- চারি করছিল।যেহেতু স্কুল এর পাশেই বিপিনদের বাড়ি, সেহেতু নীলুর খুব বেশী দেরী হল না বিপিনকে ডেকে আনতে।  বিপিন, স্যারের সামনে দাঁড়িয়ে নমস্কার করতেই স্যার বলল, ঃবদরদের বাড়ি চেন? ঃ স্যার, শুনেছি মাইল দশেক পশ্চিমে ঃতুমি কাল সকালে ওদের ওখানে একটু য