সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

উপ-৫

৬৫

বাড়িটা যেন ক'দিনেই নির্জন একটা ভূতরে বাড়ি হয়ে গেল।এবাড়ির প্রানচঞ্চল তিনটে মানুষ অন্ধ কুঠোরিতে বসে যে যার মত কাঁদছে। এ কান্না যেনো থামাবার কেও নেই।বিধাতা মানুষের সাথে মানুষের কিছু বন্ধনে আবদ্ধ করে দেয় যা কোন নিয়মের তোয়াক্কা করে না। আবার যখন কোন ঝড় বয়ে দেন, তাও যেন কেউ মেনে নিতে চায় না।এই ভাংগা গড়ার খেলায় বিধাতা হয়তো বা জিতে যায়। কিন্ত বুকের মধ্যে কষ্ট গুলো রয়ে যায় কারো কারো জীবনে অনন্তকাল।রমাদি বদরের সামনে এই কদিনে একবারও যায়নি।
তাঁকে আটকানোর কোন পথ তাঁর জানা নাই। সে ভাবল,তার কাছে একটা পথ খোলা আছে। আর তা হলো সামনে কোন ভাল কলেজে একসাথে ভর্তি হওয়া। কিন্ত সমস্যা হলো রমাদের পরিবার অতটা সচ্চল না। আর কতদিনই বা বদরের বাবার উপর নির্ভর করা যাবে। কিন্তু এ বাড়িতে বদরকে ধরে রাখার মতো মায়ের কাছে কোন পথই আর খোলা নেই।
 মা একবার ভাবল যে,বদরের সাথে একবার কথা বললে কেমন হয়। কিন্তু পরমুহুর্তেই এও চিন্তা করল , বদর তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান ।
আর ও একজন মুসলমান। একজন মুসলমানকে ধরে রাখার তার কাছে কোন পথই খোলা নেই।কদিন ধরেই এই তিনটে মানুষের নাওয়া খাওয়া আর চোঁখে কারোরই ঘুম নেই। রাতে রমাদি কিছুই খেল না বদর সামান্য কটা ভাত খেয়েই আবার রুমে চলে গেল।রমাদি গভীর রাতে দেখল যে, মা অচেতন মনে ঘুমিয়ে গেছে। বিছানা ছেড়ে ঘরের দরজা খুলল কিন্ত মায়ের কোন সাড়া পেল না।রমা ধীরপায়ে হেটে চলল বদরের রুমের দিকে। দরজায় টোকা দিতেই বদর বলল,,ঃ কে?
রমা আবারও দরজায় টোকা দিতেই বদর রুমের দরজা খুলতেই দেখল,
ঃ রমা,এত রাতে তু-মি—-?
রমাদির কি করা উচিত তা হয়তো তার জানা নাই। তাই তো রাতের আধারে বদরকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল,
ঃবদর দা আমি তোমার কাছে থাকতে চাই,তুমি যেখানেই যাও,আমিও যাব।আ-মা-য় নেবে না?
বদর বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ রইল, তার পর বলল,ঃ আমি মুসলমান
লণ্ঠনের আলো তখনো পড়ার টেবিলে নিভু নিভু জ্বলছিল, 






৬৬

রমা দেখল, বদরের চোঁখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরছে।ঃতোবুও আ-মি--
এবার চোখের জল মুছতে চেষ্টা করতে করতে বলল,ঃতা কি করে হয়,
,মা ঘুমিয়ে আছে তুমি তারাতারি যাও।অনেকটা সময় অতিবাহিত হলেএ আর কোন কথা না বলে সোজা চলে গেল মায়ের ঘরে। মা তখন ঘুমাচ্ছিল।ঘরে দরজা বন্ধ করতেই রমাদির মায়ের ঘুম ভেংগে যায়। একবার চোঁখ মেলে তাঁকিয়েই আবার ঘুমিয়ে গেল।রমাদি সারারাত দুচোঁখের পাতা এক করতে পারল না। লণ্ঠনের আলো শেষ হয়ে গেলে রমাও একসময় ঘুমিয়ে পরলো।বদরও সে রাতে ঘুমালো না।ভোর হতে না হতেই মা এসে বদর কে ডাকল, বদরের চোখদুটো লাল টকটকে হয়ে আছে, মায়ের সামনে দাঁড়াতেই বলল,,ঃ রতনদের ওখানে অনেকদিন ধরে যাই না, স্নান সেরে নাও।
বদর মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল, মুখে কোন জবাব দিল না।
এরপর রমাদিকে ডেকে তুলতেই বিছানা ছেড়ে দাঁত ব্রাশ করতে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর ফিরে এলে মা তাকেও বলল যে,
ঃতোর রতনকার ওখানে যাব। তারাতারি খেয়ে নে,বদরকে বলেছি।
বদরের নাম বলতেই রমা আঁতকে উঠল।এর ঠিক কিছুক্ষণ পর তারা তিনজনে বের হলো মাঝিবাড়ির দিকে। মা পথে হাটতে হাটতে বদরকে বলল,,
ঃ বিপিন পর হয়ে গেছে, বিপিন হয়তো আর কোনদিনও বাড়ি আসবে না।কদিন পর তুমিও চলে যাবে, মা মেয়ে এবাড়িতে কিভাবে থাকবো ভেবে পাইতেছিলাম না। রতন কে বলতে চাইছি, যে ওদের ওখানে থাকব।
বদর আমি কি ভুল করলাম।
 মায়ের কথার কি জবাব দেবে ভেবে পাইতেছিল না। কারন রমার বাবা বছরে দু তিনবার আসে তাও অল্প কদিনের জন্য।রমার দিকে তাঁকাতেই, সে মাথা নিচু করল, রাতের ঘটনা কেউ জানে না তবু রমাদি তার চোখের দিকে তাঁকাতে লজ্জিত বোধ করতেছিল।মা আবার বলল,
ঃ বদর-- রমাকে কি আরো পড়াবো?
রতন কাকা বাড়িতে ছিল না। রমার জ্যাঠাই খগেন অনেক আগেই সর্গবাস হয়েছেন।রমাদি বাড়িতে প্রবেশ করেই রতনকার রুমে চলে গেল।রুমে গিয়েই রমার মনে হলো, এখান থেকেই সে ভালবাসার বীজ বপণ করেছিল একদিন। আর আজ এইখানেই তাহা শেষ হতে চলছে।বিছানায় বালিশ পাতা ছিল তাহাতে মুখ গুজে উবু হয়ে কাঁদতে লাগল।







৬৭

 চোঁখের সামনে বারবার ভেসে উঠতে লাগল, বদরের সেদিনের সেই পুরোনো স্মতি।  মা জেঠিমার ঘরে গিয়ে দেখল,  জেঠিমা মাটিতে পীড়ি পেতে বসে পান চিবাচ্ছে। তার পাশে বসতেই বদরকে রতনের ঘরে গিয়ে বসতে বলল,বদর ধীর পায়ে এগুতে লাগল রতনকার ঘরের দিকে ।

ঘরে গিয়ে দেখল যে, রমা বালিশে মাথা গুজে কাঁদছে। বদর জানে কেন সে কাঁদছে। তাইতো রমাকে কিছু না বলে টেবিলে চেয়ার পাতা ছিলো তাহাতে বসিয়া পড়িল। এর পর বদর অনেকক্ষণ চুপ রহিল। কেননা, রমা কে বিরক্ত করা তাঁর উচিত হবে না।প্রায় ঘন্টা খানেক পর রমার ছোটকা রতন ঘরে প্রবেশ করেই বদর কে বলল,ঃ বদর কখন এলে?
ঃ এই তো কিছুক্ষণ হলো।
রমা বুঝতে পারে বদর হয়তো অনেক আগে থেকেই এখানে বসে আছে তাইতো মাথা না তুলেই চোঁখের জল মুছতে চেষ্টা করে। তারপর কাকাকে বলল,
ঃ ছোটকা মা এসেছে।
ঃ ঠিক আছে, আগে তোদের খাবার ব্যাবস্থা করি, তারপর জমিয়ে আড্ডা দেব।
রতনকা তারাতারি ছুটে যায় বড়ঘরে।বদর বুঝতে পারে না, সে কি বলে রমাকে শান্তনা দেবে।বদর অনেক আগে থেকেই জানে যে, রমাদের বাড়ি থেকে তাঁকে একদিন বিদায় নিতে হবে। তাইতো সব সময় রমাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করলেও রমাদি কখনো তাহা বোঝার চেষ্টাও করেনি। রমা এরপর ঘর থেকে বের হয়ে মায়ের নিকট চলে যায়। ঘরে আর কোন লোক না থাকায় বদর বিছানায় শুয়ে পড়তেই ঘুমিয়ে গের।বেশ খানিকক্ষণ পর রমাদি এসে দেখল বদর ঘুমুচ্ছে। ওদিকে মা রান্নাঘরে গিয়ে দুপুরের খাবারের জন্য ব্যাতিব্যস্ত হয়ে পড়ে।হিন্দু রায় পরিবারের ছেলেরা এমনিতেই একটু দেরিতে বিয়ে করে থাকেন সে মোতাবেকও রতনের বিয়ের বয়স প্রায় পেরিয়ে যাবার উপক্রম হলেও এখুনো বিয়ে থা করেনি।
রান্নাঘর থেকে ফিরে মা বলল,ঃএই রমা --বদরকে স্নান করতে বল দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে।সে মায়ের সাথে কোন কথা না বলে সোজা চলে গেল ছোটকার ঘরে। মাথায় হাত রাখতেই বদর উঠে বসল, এবং রমাদিকে বলল,
ঃ ছোটকার গামছা দাও, ইন্দিরায় স্নান করব।






৬৮

খাবার খেতে তাদের দুপুর গড়িয়ে যায়। খাওয়া দাওয়া শেষ হলে মা, রতনকে বিস্তারিত খুলে বলে। রমাদি ও বদর তখুন পাশেই চেয়ারে বসা ছিল। বিপিনকে নিয়ে মা কোন কথা বলল না।রতনকা মাথা নিচু করে বসেছিল,একবার শুধু মৃ্ধু কণ্ঠে বদরকে বলল,
ঃ তুমি, একেবারেই চলে যাচ্ছ কি না?
রতনকার কথায় কোন উত্তর মিলল না।কারন, কি বলবে ভেবে পাইতেছিল না।মা তখন মাদুরে ব'সে ছিল, তাঁর দুচোঁখ বেয়ে জল পড়লেও বিপদ মুহুর্তে তিনি কতটা শক্তসমর্থ, তাহা তাঁকে না দেখলে অনুমান করতে পারবেন না ।

(আমার ভাবতে অবাক লাগল যে একটা লজিং থাকা ছেলে তাও আবার মুসলিম, তিনি একটা গোড়া হিন্দু পরিবারে কতটা স্থান করে নিয়েছে)

সেইদিন বিকেলেই তারা তিনজন আবারো বাঘিলের দিকে ফিরছিল।
এখানে সোমবার সাপ্তাহিক হাট বসে। হাটের লোকজন পথে অবিরত চলাচল করতেছিল তাই পথে আর কোন কথা হলো না।বাড়ি ফিরে সে রাতে রমা ও বদর না খেয়েই শুয়ে পড়ল।ঠিক এভাবেই চলে গেল আরো দুটোদিন।

তারপর বদর গ্রামের বাড়ি যেতে চাইল,শেষমেষ মা বাড়ি যেতে বললেন কিন্তু শর্ত দিলেন যে, দুদিনের মধ্যেই তাকে ফিরে আসতে হবে।
বদর বাড়ি রওনা হলো, রমাদি তাঁর পিছনে পিছনে হেটে চলল,।রমাদি কিছুদুর যাবার পর বদর বলল,ঃ রমা তুমি বাড়ি যাও, আমি হয়তোবা কালপরশু আবার ফিরব। মাকে খেয়াল রেখ।
রমাদি ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। চোঁখ দিয়ে জল টলমল করতে ছিল। বদর বুঝতে পারল যে, রমাদি তাকে ছাড়তে চাইছে না।অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর রমাদি বলল,,ঃ আমি কিন্তু তোমার সাথে থাকতে চাই।
ঃ রমা আমি সব বুঝতে পারি,কিন্ত তোমায় বোঝাতে পারছি না।
ঃআমি কিচ্ছু বুঝতে চাই না বদর দা। বদর বেশ খানিকক্ষণ রমার মুখের দিকে তাঁকিয়ে রইল।এর পর বদর সামনের দিকে হেটে চলতে শুরু করল।
বদরকে যতদুর দৃষ্টি পড়ে ততক্ষুন রমাদি রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থেকে অবশেষে বাড়ি চলে গেল।

বদর বাড়ি ফিরে দেখল, তার বাবা গতরাত থেকে কলেরা (ডায়রিয়া) রোগ হয়েছে সারারাত একফোটাও ঘুমায়নি।সকালে ও দুপুরে কিছুই খায়নি। মা বদরকে জানাল যে, নুন পানি (লবন)ছাড়া তিনি কিছুই খেতে চান না।











৬৯


বেশ খানিকক্ষন হলো তিনি ঘুমিয়েছেন।টুনি বাবার মাথায় হাত বোলাইতেছিল।
বদর তার থাকার পুরোনো রুমে গিয়ে দেখল টুনির কাপড় চোপড়ে ঠাসা রুমখানি। কিন্ত বিছানা খানি চকচকে ঝকঝকে।, চৌকিতে (খাট)বসেই বাবার জন্য কি করা যায় ভাবতে লাগল। কারন কলেরা রোগের কোন দাওয়াই নাই।ভেবে কোন কূল না পেয়ে অবশেষে বদর হাক ছাড়ল,,,ঃ টুনি আয় তো এ ঘরে।

সে যাত্রায় বদরের বাবা দুদিনেই কলেরা থেকে মুক্ত হয়ে গেলেন। কিন্ত বদর, রমাদি দের বাড়িতে যেতে পারছিল না কারন, সব সময় বাবাকে দেখভাল করতে করতে বেশ কদিন কেটে গেল।এর মধ্যে ইয়াইজ্জা একবার এসেছিল। তাদের দাপট দিন দিন বেরেই চলতেছিল।ইয়াইজ্জার ঘনঘন যাতায়াতে গ্রামের অনেকেই ফুসে উঠলেও তাদের ভয়ে কেউ কোন কথা প্রর্যন্ত বলতে সাহস পায়নি।
অন্য দিকে আন্দোলন টাংগাইল মহুকুমার আনাচে কানাচে ছরিয়ে পড়েছে।কিছু অঞ্চলে চোর ছ্যাচরাদের ঘরবাড়ি পর্যন্ত আগুন দিয়ে জালিয়ে দিচ্ছে।ইয়াইজ্জাকে কটা দিন এ বাড়িতে আসতে নিষেধ করেছে বদরের বাবা।কারন গ্রামের লোকজন একবার বিপক্ষে গেলে নিজেকে সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে।অবশেষে বদরের বাবার আশংকাই সত্যি হলো।
ডাকবাংলা হাট রোববার, সকাল বেলা হাট বসেছে প্রতি সপ্তাহের ন্যায়। বদরের বাবা সে ঘুম থেকে উঠেই হাটে চলে গে্ছে।এর মধ্যেই বদরদের বাড়ি আক্রমন করেছে কয়েক হাজার ছাত্র জনতা।কিন্তু বদর দেখল, এরা প্রত্যেকেই নিরস্ত্র। বাড়ির মধ্যে তখুন বদর, টুনি আর তার মা তিনজন মাত্র মানুষ।  মা ঘর হতে বের হবার সাহস পাচ্ছিল না। কিন্ত বদরের বোন টুনি দেখল যে তাদের সদর দরজা যাহা ছোন ও সোলা দিয়ে বাধা ছিল। তাহা প্রায় আধভাংগা হয়ে গেছে বাহিরে প্রচুর হইচই শুরু হয়ে গেছে। তাদের মুখে একটাই কথা “ধরে আন ধরে আন ” যা বাড়ির মধ্যে যা যা,,,,
বদর বাড়ি থেকে পালানোর কোন রাস্তা খুজে পাচ্ছিল না। কারন লোকজন বাড়িটি চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। উপায়ন্তর না পেয়ে টুনির মুখের দিকে বদর তাঁকাল। টুনির বয়স কম হলেও বেশ শক্ত সামর্থ্য একটা মেয়ে এবং বুদ্ধিমতীও বলা চলে। বিপদের গন্ধ পেয়েই আবারো ঘরে প্রবেশ করল। বাড়ির বাহিরের বেড়ায় ত্খুন আগুনের লেলিহান শিখা জ্বলতেছিল।








৭০


 এর কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যেই টুনি বের হলো, টুনির দুই হাতে দুটো হাঁসিয়া দা নিয়ে। বা হাতের দা টি বদরের দিকে মেলে ধরতেই বদর ডান হাতের কব্জিতে দা এর বাটটি ধরা মাত্রই টুনি দা–দা-দা ——
বলে একটা চিৎকার দিয়েই সামনের দিকে দৌড়ে এগিয়ে কয়েকজনের দিকে কোপ ঝাড়লেন। আর এর সাথে কোপ তুললেন বদর, মুহুর্তের মধ্যে মাটিতে ঢলে পড়ল বেশ কয়েকজন ছেলে। তাদের কয়েকজনের হাত ও পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ততুক্ষনে।লোকজন দৌড়ে পালাতে থাকলেও টুনি যেন একটা ঝড় বয়ে দিলেন।হাক ছাড়ল,ঃ একটাকেও ছাড়বি না দাদা,একটাও না। মার শুয়োরের বাচ্চা গেরে-মার ।
কিন্ত ততক্ষনে বদরদের তামাম বাড়ি আগুনের লেলিহান শিখায় দাউ দাউ করে জ্বলছে

তাইজ্জা ডাকাতের বাড়ি আক্রমনের খবর, মুহুর্তে তাহা ডাকবাংলার হাটে মুখে মুখে রটে যায় ।বদরের বাবা বেঁহুশের মতন দৌড়াতে থাকে বড়ির দিকে। হাটের লোকজন আগুনের ধোয়া দেখতে পেয়ে শত শত উৎসুক জনতা রওনা দিল বদরদের বাড়ির উদ্দ্যশে।বদরের বাবা বাড়ি পৌছাতে পৌছোতেই শত শত হাটের লোকজনে ভরে যায় বাড়িটি।যে ছাত্র জনতা বাড়িটি আক্রমন করেছিল তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আহত অবস্থায় পড়ে থাকলেও টুনি তাদের দুজনকে কুপিয়ে মেরে কয়েক টুকরো করে ফেলেছে।।এগ্রামের অর্ধেক জনগোষ্ঠী বদরদের আত্বিয়তার বন্ধনে আবদ্ধ। প্রতিবেশি সহ সকলেই হইহই রইরই করছিল।টুনির সারা শরীর রক্তে রক্তিম হয়ে গিয়েছিল। বদরের বাবা বাড়ির বাইরে দাড়িয়েই টুনিকে বুকে জরিয়ে নি
ধরলেন। আর বাঘের মত হুংকার ছুড়লেন,,ঃ বাইচ্চা থাকলে এইহান থেকে সরা,মরারে নদীতে দিয়ে আয়।

হাটের লোকজন ধরাধরি করে আহতদের নিয়ে চলল হাটের দিকে, তাদের কোন পরিচয় মিলল না । কারনএরা দুরদরান্ত থেকে এসেছে, এরা বিভিন্ন স্কুলএ পড়ুয়া ছাত্র।।আর তাইজ্জা বাহিনীর পুরোনো সদস্যরা টুকরো হওয়া দেহ মুহুর্তেই নদীতে ফেলে দিল এবং পোঁড়া বড়িটার সামনে দাড়িয়ে হৈ চৈ করতেছিল। কাউকে রেহাই দেব না। কাউকে রেহাই দেব না। বলে চিৎকার করতেছিল।







৭১

বদরের তখুন কোন হুঁশ ছিল না এবং কি টুনিরও, তাইতো বদরের মায়ের দিকে কারো কোন খেয়াল ছিল না তিনি কোথায় কিভাবে আছেন।বাড়িটি ধংসস্তুপে পরিনত হলেও তখনো থেমে থেমে আগুন জ্বলতে ছিল।উপস্থিত লোকজন বলাবলি করতেছিল এই ঘটনার সাথে জরিত আছেন গ্রামের পুর্ব কোনার আদম বেপারী।কারন তিনি এগ্রামের প্রধাণ হতে চান অনেকদিন ধরেই।এর পর বদরের মায়ের সন্ধান মিলল, তিনি জীবিত আছেন তবে তাঁর শরীরের অনেকাংশ পুড়ে গেছে কারন, তিনি ঘরের মধ্যেই ছিলেন কিন্ত যখন ঘরটিতে আগুন ধরে যায় তখুনো তিনি বের হতে পারেননি কারন বদরের মা ঘরে মাঁচার নিচে লুকিয়ে ছিল। শেষমেশ নিজেকে রক্ষা করতে আগুনের মধ্য দিয়েই দৌড়ে পালাতে চান  
কিন্ত ততক্ষুন তাঁর পরনের শাড়ীতে আগুন ধরে যায়। পাশের দু বাড়ি পর তিনি পরে গিয়ে অচেতন হয়ে পড়েন। আর সে বাড়ির মহিলাগণ অবিরত শরীরে পানি ঢেলে এরপর সারা শরীরে ঘুটে মেশানো কাদার প্রলেপ লাগিয়ে দেন।ওখানে কারো এই মুহুর্তে দেখা করা সম্ভব না। কারন, বদরের মায়ের শরীরে মাটির প্রলেপ ছাড়া তাঁর পরনে আর কোন কাপড় নাই।
তাজ মাতব্বর তখুনও টুনির হাতখানি ধরে দাড়িয়ে, বদর মাটিতে বসে এক দৃষ্টিতে ঊঠোনের দিকে তখন তাঁকিয়ে আছে।উত্তেজিত গ্রামবাসী এবার ছুটে চলল, আদম বেপারীর বাড়ির দদিকে।

উত্তেজিত গ্রামবাসী বাড়িটিতে কাউকে না পেয়ে অবশেষে বাড়িটি আগুন দিয়ে জ্ববালিয়ে দিল।লোকজন ফিরে এসে বদরদের পুঁড়ে যাওয়া বাড়িটির ধংশস্তুপ সরিয়ে ফেলল।কিন্তু বাড়ির আসবাবপত্র পুড়ে যাওয়ার ফলে সেখান থেকে তখনও দুর্গন্ধ বাতাসে বয়ে যেতে লাগল।এর পর বাড়িটির উঠোনে টাংগানো হলো বাদাম (সামিয়ানা)তাবুর মতো করে তৈরি করা হল আপাদত থাকার বাসস্থান।এরপর তাজ মাতব্বর, বদর ও টুনিকে নিয়ে চলল নদীর দিকে। তাদের পিছনে পিছনে হেটে চলল গ্রামের কয়েকশত লোকজন।নদীতে তারা সকলেই গোসল সম্পন্ন করে যে যার মত বাড়ি চলে গেল।
তখন দিনের প্রায় শেষভাগ চলছিল। বাড়িতে ফিরে তাবুতে পাশের বাড়ি থেকে আনা খর পাতালেন এবং তাহাতে মাতব্বর সাহেব শুয়ে পরলেন।অন্য তাবুটিতে টুনিকে বিশ্রাম নিতে দেখা গেল কিন্ত বদর তাবুর নিচে না গিয়ে উঠোনে যেখানে বাদাম টানানো ছিল 






৭২

সেখানে আগুনে অাধ পোড়া একটা চেয়ারে বসে চোঁখ বন্ধ করে রইল।এর কিছুক্ষন পরই মাগরিবের আযান দিল।বদরের বাবা উঠে এলেন অজু সেরে সামিয়ানার নিচে দাড়াতেই গ্রামের বয়স্ক আরো কয়েকজন লোক সমবেত হলেন, এবং তারা একসাথে নামাজ আদায় করতে দাড়িয়ে পড়লেন।বদরের বাবার পিছনে লাইন ধরে।
বদরের বাবা নামাজে দাড়িয়েই উচ্চসরে নামাজ আদায় করতে থাকলেন।এবং মোনাজাত ধরে কেঁদে বুক ভাসিয়ে দিলেন।সালাত সম্পন্ন হলে একে একে অনেক লোকের সমাগমে ভরে গেল বাড়ির উঠোনের আংগিনা।
বদরের বাবা গানেও খুব পারদর্শিতা ছিল। কিন্ত তাঁর অ্রধিকাংশ গানই ছিলো দেহতাত্তিক, কিম্বা লালনের। এই জাতীয় গানই তিনি বেশি গাহিতেন।

তাঁর নিজের ছিল একটা ডাবল রীডের হারমোনিয়াম যাহাতে আংগুলের ছোয়া দেয়া মাত্রই টনটন করে বেজে ঊঠত। বদরের বাবার মাথায় ছিলো ঝাকড়াচুল যাহা গর্দানে একটা বাবড়ির মতো দেখা যেত।
বাবা কদমআলীকে হারমোনিয়াম আনতে বলল, তিনি দেরী না করে সাথে সাথেই তাহা নিয়ে এলেন।বাড়িতে খাবার দাবার কোন ব্যাবস্থা ছিল না কারন, আগুনে সবকিছুই পুড়ে গিয়েছিল।
তাই প্রতিবেশির বাড়িতে গরু জবাই দিয়ে চলছিল বদরের বাবার নির্দেশে রান্নার ব্যাবস্থা।
এর পর একদল লোক মিলে বাড়ির উঠোনে এশার নামাজ আদায় করলেন।
এশার নামাজ শেষ হলেই বদরের বাবা ডাবলরীডের হারমোনিয়ামটিতে বেশখানিক্ষন সারগাম করতেছিল হাইস্পিডে,কিন্তু তাঁর দু’চোঁখে ছিল জলের ধারা।

নারায়ন ঠাকুর লোক মারফত খবর পেয়েে, রমাদের বাড়িতে সে রাত্রেই খকরটা পৌছে দেন।
খবরটি শুনেই রমাদি কান্নায় ভেংগে পড়েন। তাঁর কান্নায় গ্রামের লোকজনে ভরে যায় বাড়িটি। এই গোঁড়া হিন্দু সমাজের লোকজন কেউ আহ্ আহ্ করতে থাকল।অনেকেই রমাদির মাকে জিজ্ঞেস করছিলেন বদর কেমন আছে তাহা জানা গেছে কিনা। কিন্তু রমাদির মা এর কোন সদুত্তর দিতে পারলেন না।
এক সময় যে যার মত বাড়ি চলে গেল। কিন্ত রমার বান্ধবী বীথি হাউ মাউ করে না কাঁদলেও রমার পাশে বসে রইল।সে সময় বীথির চোঁখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তেও দে্খা গেল।রমাদি, বীথি, ও বীথির মা সহ এই চারজন মেয়ে মানুষ বাড়ির উঠোনে বসে সারা রাত জেগে রইল।






৭৩

পরেরদিন সোমবার স্থানীয় যুগনী হাটে লোকজন আসতে লাগল।রমাদি বাড়ির বাহিরে স্কুলটির সামনের রাস্তায় দাড়িয়ে রইল পরিচিত কোন লোকের খোজে। যাহাতে সে জানিতে পারে বদরদা দের বাড়ির লোকজন এখুন কেমন
আছে?
কিন্ত কোনভাবেই তাহা জানা গেল না, শেষমেষ হাটতে হাটতে রওনা হল হাটের দিকে। হাটে গিয়ে দেখলেন লোকজন প্রায় সকলেই তাহা বলাবলি করিতেছেন। বিস্তারিত শুনে দ্রত বাড়ি ফিরলেন। তারপর মাকে বললেন
ঃ মা তারাতারি চলো, বদরদা এর মায়ের অবস্থা ভাল না। তাঁর সারা গতর (শরীর)আগুনে পুড়ে গেছে।
এর পর স্নান সেরে তারা মা ও মেয়ে রওনা হল বদদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
বিকেলের দিকে তারা বদরদের বাড়ি পৌছেলেন।কিন্ত ততক্ষণএ তাদের বাড়িতে স্বজনে ভরে গেছে।বদর বাড়িতে না থাকায় রমাদি তাঁর মাকে কেহ চিনিতে পারিল না।এবংউপস্থিত লোকজন এই অপরুপ সুন্দরী মেয়েটাকে দেখে অনেকেই হা করে মা মেয়েকে দেখতেছিল। অবশেষে একজন বয়স্ক ব্যাক্তি বলিল,ঃকারে খুঁজতাছেন?
রমা বলিল, ঃ বদর দা—

টুনি, এই ভদ্র মহিলাকে চিনিতে না পারিলেও রমাদি কে দেখেই বুকে জরিয়ে ধরলেন।অনেকক্ষন কাঁন্নাকাটির পর নিয়ে চলল মায়ের নিকট। বদরের বাবা ও বদর ঘরবাড়ি পুণনির্মানের জন্য ব্যাতিব্যাস্ত ছিল।।রমাদির মা ও রমাদি দুজনেই বদরের মাকে সেবা যত্ন করতে লাগলেন।

মাত্র কয়েকদিনেই বদরের মা মোটামুটি সুস্থ হয়ে গেল, রমাদি ও তাঁর মা বাড়ি ফিরে গেলেন। কিন্ত বদর বাড়িতেই রয়ে গেল

এদিকে বদর ও রমা মেট্রিকুলেশনের পর ভর্তি হলেন কাগমারি কলেজে এই কলেজেই বাম রাজনীতি তে জরিয়ে গেলেন।রমাদির এই সব বিষয় মোটেই ভাল লাগতো না, প্রতিদিনই বাড়ি ফেরার পথে দুজনের মধ্যে এ নিয়ে ঝগড়া হতে থাকে।বছর খানেক তারা এভাবেই কাটালেন।কিন্ত হঠাৎ করে খবর এলো যে,
যমুনার ভাংগনে বদরদের বাড়ি ভেংগে যাবার উপক্রম প্রায়।বদর দ্রত বাড়ি চলে গেল।গিয়ে দেখল যে গ্রামের সমস্ত বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। সবার শেষে সরানো হলো বদরদের বাড়ি।






৭৪

বদরের বাবা তাজ মাতব্বর যিনি শত একর সম্পত্তির মালিক তাঁর বর্তমান ঠিকানা হলো অন্যের সম্পত্তিতে। কারন ততক্ষনে মৌজার সমস্ত জমি নদীতে গ্রাস করে ফেলেছে।ঘর বাড়ি কোন রকম ভাবে দাড় করালেও সংসারে নেমে এলো অভাবের টানাপোড়ন।
ঘরের খাবার দাবার প্রায় ফুরিয়ে যেতে লাগল, বদর কোনদিকে পা পাড়াবে বুঝতে পারছিল না। রমাদির কথা মাঝে মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ মনে পড়ে।
কিন্ত সেদিকেও মন ঠায় দিচ্ছিল না, কারন সংসারে এখন একটাই সমস্যা আর তা হলো অভাব।বেশ কিছুদিন কেটে গেলেও সংসারে পরিবর্তনের কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল না। বলা চলে এই মুহুর্তে মাতব্বরের পরিবার হলো গ্রামের ঘরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভাবী পরিবারের রুপ পেয়েছে।বদরের লেখা পড়ায় আর ফিরে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কি করবে তাহাও ভেবে পাইতেছিল না। বদরদের এই দুখের দিনে রমাদি হ্ঠাৎ একদিন খুঁজতে খুঁজতে বদরদের বাড়ি এলো,এসে দেখল যে,বদরদের বাড়িতে রান্না পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে।

বদরদের দুখের দিনে ইয়াইজ্জাও কোন খোজ খবর নিচ্ছে না। বলা যায় তিনি যাতায়াত প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে।বদরের বাবা,ঘটনা ক্রমে ইয়াইজ্জাকে আসতে নিষেধ করেছিল কিন্ত তাই বলে বিপদেও এগিয়ে আসবে না তাহা মাতব্বর কোনদিনও ভাবেনি।রমাদি, বদরকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে গেল নদীতে স্নান করবে বলে। নদীতে তখুনও প্রচুর স্রোত বইছে।রমাদি কখনও নদীর জলে স্নান করেনি, নদীর তরংগে স্নানের অর্থ এই নয় যে, শুধু গা গতর ধুয়ে ফেলা। নদী মানুষের মনের গহীণে লুকানো দুঃখ কষ্টও ভুলিয়ে দিয়ে থাকে।নদীতে স্নান সেরে রমাদি ভেজা কাপড়ে রওনা হল বাড়ির দিকে। বাড়ি ফিরে দেখল যে,অনেকদিন পর ইয়াইজ্জা এসে বাবার সাথে কি বিষয়ে কথা বলছে, তাহা জানা গেল না।রমাদি, টুনির ঘরে প্রবেশ করিয়া টুনির পরনের কাপড়র পরিধান করল। টুনি রমাদির চেয়ে একটু বাড়ন্ত হওয়ায় সালোয়ার ও কামিজ বেশ আলখেল্লা হয়ে গেল।ইয়াইজ্জা বদরের বাবার নিকট থেকে বেরিয়েই বদরকে বুকে জরিয়ে ধরলেন।এর পর নিয়ে চললেন বাড়ির বাহিরে,
তারপর ইয়াইজ্জা বলল,
ঃদোস্ত মিয়া চিন্তা কইরেন না, আমি বাইচ্চা আছি। যা করনের করুম নে।
মায় দেখবার চায় আপনারে,






                    ৭৫

বদরের কোন প্রতুত্তর না পেয়ে ইয়াইজ্জা আবারও বলল,
ঃ মাইয়াডা খুব সুন্দর, হ্যারে নিয়াই চলেন মায়ের লগে দ্যাহা কইরা আইবেন।
ঠিক সেই সময়ই বদরের বাবা বাহিরে এলো। এসেই বলল,
ঃ বাজান,যাইয়া ঘুইরা আহো।
বদর সেইদিনই টুনি ও রমাদিকে সাথে নিয়ে চলল অনেকদিন পর দোস্তে-র বাড়ি।ইয়াইজ্জাদের বাড়ি বদরদের বাড়ি থেকে দক্ষিনে কাতুলী ইউনিয়নে। এই খানে ইয়াইজ্জা হলো অলিখিত রাজা।কারন ইয়াইজ্জাকে ভয় পায় না এরকম লোকজন খঁুজে পাওয়া খুবই দুরুহ।ইয়াইজ্জাদের বাড়িত বদর প্রবেশ করা মাত্রই, তাঁর মা বুকে জরিয়ে কাঁদতে লাগলেন। অনেকদিন পর ছেলেকে কাছে পেয়ে মা আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন।ইয়াইজ্জা ঘোড়া সাজাতে লাগলেন বদরদের বাড়ি মালপত্র পাঠানোর জন্য। কারন বদরদের এই দুর্দিনে পাশে থাকাটাই যেনো সে শ্রেয় মনে করলেন। সে রাতেই পৌছে দিলেন চাল, ডাল সহ বেশ কিছু খাবার দাবার।রমাদি ও টুনি কে ইয়াইজ্জার মা বেশ খাতির যত্ন করতে লাগল,ইয়াইজ্জা, বদরকে সেই ছোটবেলার স্মতি ঘুরে ফিরে দেখাতে লাগলেন, এভাবেই কেটে গেল তাদের দু’দিন দুইরাত।

এর পর বদরের বাড়ি ফেরার পালা। বদর, টুনি ও রমা যখন ইয়াইজাদের বাড়ি থেকে বের হলেন ইয়াইজার মা তাদের পিছনে পিছনে হাটতে লাগলো।
প্রায় মাইল খানেক হেটে আসার পর বদর বলল,ঃ মা তুমি বাড়ি যাও গে, ,
আমি আবার একদিন আসুম, তোমারে দেখতে,ইয়াইজার মা তখুন দাঁড়িয়ে বলল,ঃ কবে আইবি বাজান,,,, ,,,
বদরদের বাড়িতে রমাদির কেটে গেল আরও একটি দিন। পরেরদিন বদর রওনা হল রমাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।পথে যেতে যেতে দু’জনার মাঝে যা হলো তার বেশির ভাগ অংশই, নদীতে জমিজমা গ্রাস ও তাদের বাড়িঘর পুঁড়িয়ে দেবার বি্ষয় নিয়ে। ইয়াইজার পাঠানো খাবারে কিছুদিন হয়তো বা ভালবাবেই চলে যাবে বদরদের সংসার। কিন্ত তারপর এ নিয়েও অনেক কথা হলো।কিন্ত এই সংসার উত্তরণের পথ দুজনের কারোরই জানা নাই।

রমাদিদের বাড়িতে প্রবেশ করা মাত্রই মা বদরকে বুকে টেনে নিলেন।
বদরের দুচোঁখে জল টলমল করতে ছিল।মাকে কিছুই বলতে পারল না। ততক্ষনে রমাদি স্নানের জল ইন্দিরা থেকে তুলতে লাগল।






৭৬

রমাদি ও বদর পরদিন কলেজের দিকে রওনা হলো কিন্ত বদরদের সংসারের যে অবস্থা তাহাতে কোন মতেই আর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, বদর তাহা ভালবাবেই বুঝতে পারে।অনেকদিন পর কলেজে গিয়ে বদর দে্খল,ছাত্র ইউনিয়নের, ছাত্র নেতারা অনেকেই এখুন ছাত্রলীগের বড় নেতা হয়ে গেছে।কলেজে শেখ মুজিব, শেখ মুজিব শ্লোগানে ক্যাম্পাস মুখরিত করছে।বদর কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। কারন মানুষের দৈনন্দিন শিক্ষার উন্নয়নের জন্যই এই কলেজে পা দিয়েই তিনি ছাত্রসংঠন, ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দিয়েছিল।কিন্ত বদর দেখল, যাদের কথায় এই পথে পা দিয়েছিল তারা এখুন ছাত্র লীগের বড় নেতা।বদর মনে মনে ভাবল,তবে কি নীতি বাক্য শুধু মানুষ মুখেই বলে।সে মনে মনে ভাবল, এই নোংড়া রাজনীতি সে আর করবে না।

বদরের হাত পা অসাঢ় হয়ে যায় কারন এবার সে কি করবে।ছাত্র ইউনিয়নের আরেক নেতা রফিক তাঁর সাথে আলাপচারিতায় বদর জানতে পারে যে,নেতৃত্ব দুভাগে বিভক্তি হয়ে গেছে।রফিক আরো বলল,
বদরদা হয়তো আমাদের কিছু ভুল ছিল,, কিম্বা আমাদের নেতাদের।
ছাত্র ইউনিয়ন নেতা রফিকের মধ্যে পূর্বের সেই প্রানচঞ্চলতা আর নেই।
রফিক নিজেকে গুটিয়ে নিতে চাচ্ছে। কারণ,ছাত্র ইউনিয়ন তাঁর রক্তের সাথে মিশে গেছে। বদর বুঝতে পারে রফিকের মধ্যে যে চেতনা ছিল তাহা কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে, এই রফিক তেজদীপ্ত কিন্ত সে এই ভাংগন কে অন্যায় মনে করছে। রফিক আর বদরের মধ্যে আলাপ চলতেছিল পামগাছের নিচে যাহা ইট দারা গোলাকৃতি করা ছিল। এর মধ্যেই ছুটে এলো মৈত্রীর আরেক ছাত্রনেতা সিরাজ, বদরের পাশে বসে কুশল বিনিময় সারল।সিরাজ, রফিক কে বোঝানোর চেষ্টা করল যে,
ঃআমরা ছাত্র ইউনিয়নই করব, যদি ভাংগতে ভাংতে সবাইকে হারিয়েও ফেলি তোবুও
বদর কিছু না বুঝেই বলল,,,
ঃ পীর সাহেব কোনদিকে?
সিরাজ বলল,ঃআগের মতোই,,,







৭৭

বদর গ্রামের ছেলে, সাধারনত এই রাজনীতির আদিঅন্ত কিছুই বুঝতে পারল না । এরপর চুপ হয়ে গেল আর মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করতে লাগল। আসল রহস্যটা কি?ওদিকে রমাদি ক্লাস শেষ করে বদরদার দিকে এগিয়ে এলো।রমাদিকে রফিক বসতে বলল, রমাদিও চুপচাপ তাদের পাশে বসল। তাদের আলোচনা কিছুটা বিগ্ন ঘটলেও তাহা যেনো থামল না। রফিক বলল,,,ঃ ভাই,আপাদত আমরা নিরব থাকতে চাই,,,
আপনার মতামত কি?
ঃরফিকএমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে, কারনআমি নেতাদের বুঝতে পারছি না। সাধারন ছাত্রদেরও বিপদে ঠেলে দেয়া যাবে না।
রমাদি কিছু না বুঝলেও এটা বুঝল যে, সহিংসতায় জরাতে যাচ্ছে সারাদেশের ছাত্র রাজনীতি।এক সময় বদর ও রমা বাড়ি ফিরতে উদ্যত হলো। পথে চলতে চলতে বদর দেখল, রমাদিকে খুব চিন্তিত মনে হইতেছে।
বদর রমাদিকে বলল,,
ঃ রমা কোন কিছু ভাবতেছ?
রমা মাথা নেড়ে সম্মত জানাল যে হ্যা, সে কিছু একটা ভাবছে। কিন্ত রমাদি মুখে কিছুই বলল না। বাড়ি ফিরেও রমাদিকে আতংকগ্রস্থ মনে হলো।

সন্ধে ঘনিয়ে এলে রমাদি চলে গেল মন্দিরে সেখান থেকে ফিরে সোজা চলে গেল বদরদার রুমে।বদর তখুন চেয়ারে বসে বইপত্র হাতরাচ্ছিল, এই অসময়ে রমাদিকে দেখে বদর হতভম্ভ হয়ে গেল। এর পর রমাদি খাটের উপর গিয়ে বসে পড়ল। বেশ খানিকক্ষণ পর রমাদি বলল,,ঃবদরদা,তুমি এই ছাত্র রাজনীতি ছেড়ে দাও,,,
বদর, রমাদির মুখের দিকে তাকিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল

বদরের এই তাচ্ছিল্য হাসির অর্থ রমার জানা নাই।কারন বদর মনে মনে ভাবল, যেখানে অর্থের অভাবে পড়ালেখাই বন্ধ হয়ে যাইতেছে, সেখানে আবার রাজনীতি নিয়ে মাথাব্যথা।ঘরে খাবার না থাকলে পুরুষের মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যায়। এই কথাটুকু রমাকে কে বোঝাবে।বদর, রমাদির মুখের দিকে অনেকক্ষন তাঁকিয়ে রইল, তার পর বলল,,ঃ রমা তুমি ঘরে যাও,ওসব নিয়ে তুমি মাথাব্যথা করো না।





৭৮

 মা এরই মধ্যে রুমে প্রবেশ করল। এবং দেখল যে,রমা খু্বই চিন্তিত,  রমার পাশে বসতেই রমাদি বলল,,,
ঃ মা খাবার দেবে? খুব খিদে পেয়েছে,,,
রমাদির মা কথা না বারিয়ে চলে গেল খাবার দিতে।রমাদি ও বদরের খাবার খা্ওয়া দাওয়া শেষ হলে বদর আস্তে আস্তে ফিরে গেল আবার রুমে।
রুমে গিয়ে বিছানার বালিশ মাথার নিচে রেখে শুয়ে শুয়ে রমাদি ও তাঁর মাকে নিয়ে ভাবতে লাগল।রমা প্রচন্ড ভাবে বদরকে ভালবাসে, বদর কতটা রমাদিকে ভালবাসে তাহা মুখে না বললেও বদর নিজেও জানে, রমাদিকে ছেড়ে সে একাকী চলতে পারবে না।কিন্ত বদর অনেক ভাবনা ভেবে শেষমেষ এই সিদ্ধান্ত উপনীত হলো যে, এই বাড়িতে সময় ক্ষেপণ করে আর লাভ নেই, কেননা, এখান থেকে তাঁর বিদায় নেবার সময় শেষ হয়ে গেছে।
কিন্ত রমাদিকে ফেলে সে কিভাবে বিদায় নেবে তাহা বুঝতে পারতেছিল না।
বিপিনদাকে বদরের আজ খুব করে মনে হইতে লাগিল।বিপিনদার জন্যই এই বাড়িতে একদিন ঠাই হয়েছিল । সেই বিপিনকে শেষবার কবে দেখেছিল তাহাও মনে করিতে পাড়িল না।

ক্রমেই রাতের গভীরতা ভাড়তে লাগল। লণ্ঠনের আলো তখুন নিভু নিভু জ্বলতেছিল। বদরের কিচ্ছু ভাল লাগছিল না।

 বিছানা ছেড়ে এবার বদর উঠোনে এসে দাড়াল, বাহিরে তখুন ঝিরঝির বাতাস বহিতেছিল। রমাদি ও তাঁর মা দক্ষিনের বড় ঘরখানিতে ঘুমাইতেছিল।বদর অনেকক্ষন উঠোনে দাড়িয়ে রইল। রমাদের ঘর থেকে কোন সাড়া শব্দ এলো না।এর ঠিক কিছুক্ষন পর রমাদিকে ঘরের দরজা খুলতে দেখা গেল। বদর ধীর পায়ে রুমে ফিরতে উদ্যত হলো,রমাদি বারান্দায় দাড়িয়ে বদরকে রুমে ফিরে যেতে দেখল, কিন্ত রমাদি কোন সাড়া শব্দ না করে বেশখানিকক্ষন দাঁড়িয়ে রইল।বদর রুমে গিয়েই দরজা বন্ধ করে দিল।রমাদি মনে মনে ভাবিত লাগিল,,,
বদরদা কেন উঠোনে একা একা দাঁড়িয়ে ছিল।
সে রাতে রমাদি এই সমীকরণ  মেলাতে না পেড়ে অবশেষে বিছানায় গিয়ে মাথা রাখলেও সারারাত  ঘুমোতে পারল না।সকালে কলেজে যাবার সময় হলেও বদর তখুনো ঘুমিয়ে ছিল,আর তাইতো বদরের রুমের সামনে দাড়িয়ে বলতে লাগল,,,ঃবদরদা,, কলেজ যাবে না। ব-দ-র-দা,,,





৭৯

বদর ঘুম থেকে জেগে রমাদিকে বলল যে, কলেজে যাবে না।আর তাইতো সেদিন রমাদিরও কলেজে যাওয়া হলো না। বদর সারাদিন ঘরের মধ্যেই নিজেকে কাটিয়ে দিলেন।

রমার মনে একটা সংসয় জাগতে লাগল। বদরদা আসলে কি করতে চাইছে।
বদর মনে মনে ভাবাতে লাগল এখানে আর এক মুহুর্তোও থাকবে না।কারন বাড়ি থেকে দুটো পয়সাও আর দেবার মত সাধ্য নেই। রমাদিদের যে সংসার তাহাতে নিজে হয়তো কষ্টো করে কাটিয়ে দিতে পারবে। কিন্ত বাবা এই বয়সে কি ই বা করার মত ক্ষমতা আছে তাঁর।বদর আরো ভাবল, পড়ালেখাটা শেষ করতে পারলে ভাল হতো কিন্ত তাহাও আর সম্ভব না। শেষমেষ ভেবে ঠিক করল যে সকালেই বাড়ি ফিরে যাবে।রাতে খাবার খেতে মা ডাকিতেছিল, বদর কোনরূপ সায় দিয়ে জানাল যে, সে আসছে।রমাদি ও বদর মাদুরে বসে খাবার খেতে লাগল, বদর খাবার খেতে খেতে ভাবল কিভাবে কথাগুলো বলবে মাকে,,তারপর বদরের মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল,,ঃ মা আমি কালই বাড়ি যেতে চাইছি
ঃকেন রে
ঃমা,,বাড়িতে উপার্জনের ব্যাবসথা নাই,,
সেই সাথে বাড়িটাও ভেংগে গেছে।(বদরের চোখদিয়ে জরজর করে জল গরিয়ে পরলেও কথা থামাল না)জানো মা, বাবার সাধ্য নাই কারো নিকট হাত পাতবে।আমি কি করব তা হয়তো জানা নাই, কিন্ত না খেয়ে তো ওদের মারতে দিতে পারি না।

রমাদি কোন কথা না বলে খাবার খাওয়া ছেড়ে দিয়ে উঠে পড়ল।বদর কাসার থালাটিতে ভাত হাতরাচ্ছিল আর একটি ভাতও মুখে পুড়ল না।বদর হাত ধুয়ে রুমে চলে গেল।রমাদি বিছানায় উবু হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে রইল। মায়ের দিকে ফিরেও তাঁকাল না।রমাদির মা জানে,, রমা মনে মনে কষ্ট পাইতেছে। কিন্ত রমাকেও তিনি কিছুই বললেন না।রমা একবার ভাবল, মাকে সে বোঝাবে যে কোন ভাবে বদর কে এখানে আরও কিছুদিন রাখা যায় কিনা।কিন্ত সে সাহসটুকুও পেল না কারন, রমাদি নিজেও জানে, তাঁর মা কতটা বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। মা রমাদির কাণ্ড দেখে নিজেও ভাবতে লাগলেন। বদরদের জন্য নিজেরা কিছু একটা করা যায় কিনা । কিন্ত অনেক ভেবেও কোন কিছু স্থির করতে পারছে না। কারন রমার বাবা অনেকদিন হলো বাড়ি আসে না।তাঁর কাছে পরামর্শ নিয়েই হয়তো কিছু একটা করা যেতে পারে।




৮০

শেষমেষ রমার মা স্থির করলেন যে,সকালে এব্যাপারে বদরের সাথেও আলাপ আলোচনা করা যেতে পারে।রাতগভীর হলে রমা বিছানা ছেড়ে উঠে বসল এবং কয়েকবার মাকে ডাকলো যে, মা তুমি ঘুমিয়ে গেছ কিনা।কিন্ত মায়ের কোন সারাশব্দ না পেয়ে লণ্ঠনের আলো জ্বালিয়ে দিলেন। রমাদির প্রচুর পিপাসা বোধ করায় পিতলের গ্লাস খানিতে জল ভরতে লাগল।জল খেতে খেতে ভাবলেন, বদর কি গতকালের মত আজো উঠোনে দাড়িয়ে রয়েছেন নাকি ঘুমিয়ে পরেছে । জলপান করা হয়ে গেলে রমাদি ঘরের দরজা খুলতে লাগলেন, মায়ের ততক্ষুনে ঘুম ভেংগে যায়, কিন্ত রমাদির দিকে ফিরে তাঁকাল না। রমার মা ভাবতে লাগল,,বোধজয় বাহিরে যাবার প্রয়োজন হয়েছে তাইতো রমাদিকে কিছুই বলল না।কিন্ত যখন অনেক সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও  রমা ঘরে ফিরছিল না। তখুন তিনি বিছিনা থেকে উঠে পরলেন। 
চোখ মুছতে মুছতে দারজাখানিতে রমাদির মা দাড়িয়ে দেখল।

রমা বারান্দায় দাড়িয়ে বদরের রুমের দিকে একদৃষ্টিতে তাঁকিয়ে রয়েছে
রমাদির মা বলে ঊঠল,,ঃরমা কি করস ওখানে?
রমা কোন প্রতুত্তর না দেয়ায় দিতীয়ববার আবার বললঃরমা রাইত অনেক হইছে, আয় ঘরে আয়, কি ভাবতাছিস?
রমার মুখ থেকে সেবারও কোন কথা বেরুল না।রমাদি তখুনো বারান্দাযুক্ত খামধরে দাড়িয়ে ছিল, মা বারান্দা গিয়ে রমার কাঁদে হাত রাখল,
আর ঠিক তখনই রমা পিছন দিকে  মায়ের শরীরে উপর ভারসাম্যহীন ভাবে পরে যেতে লাগল, রমার মা রমাদিকে ধরে রাখতে পারল না। মা,,
রমা -রমা - রমা বলে চিৎকার দিয়ে উঠল। রমাদির মায়ের চিৎকার শুনেই বদর বিছানা থেকে লাফিয়ে কোনরকম ভাবে দরজা খুলেই দৌড়ে বারান্দাযুক্ত হইল।বদর দেখল রমা মাটি প'রে আছে।কিন্ত মুখ দিয়ে শুধু গেংগানো শব্দ পাওয়া যাইতেছে।আর তখনই দুজনে মিলে নিয়ে গেল ঘরের খাটিয়াতে। মা জল ছিটিয়ে দিয়ে রমাকে ধরে কয়েকবার ঝাকুনি দিল।
রমার গোংগানো থেমে গেলেও বোঝা যাচ্চিল যে, তাঁর মধ্যে কোন হুশ নেই।
অতঃপর বদর তাঁর দুইগালে ডান হাতটি স্পর্শ করে 
রমা রমা করে ডাকতে লাগল,
রমা চোখ মেলে তাঁকাতেই বদর নিজের ঠোটখানি কামরে ধরল,রমাদি এক দৃষ্টিতে বদরের দিকে তাঁকিয়ে ।রমাদির মা তখন মাথায় হাত বোলাইতে লাগলেন।

,





মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

রমাদি ১০

স্কুলে নিয়মিত এই পোশাকই পরে।বিপিন রীতিনীতিও সব শিখিয়ে দিল।বিপিনের বোন রমাও পাঠ্যে হিন্দুধর্ম শিক্ষা-র যেকোন বিষয় না বুঝলে, তা আলোচনার মাধ্যমে সহযোগীতা করতে থাকে আজকাল বদর, বিপিনের কাজ কর্মেও সহযোগীতা করে। রমার মা,বদরের এই আচার ব্যাবহারে নিজেও গর্বিত। শুরু থেকেই বিপিনের মাকে, বদর মা বলেই ডাকে।গোঁরা সমাজের লোকগুলোও তার আচার ব্যাবহারে সব কিছু ভুলে যায়।অল্পদিনেই স্কুলেও শিক্ষক থেকে শুরু করে সবার প্রিয় পাত্রে পরিনত হলএই ছেলেটি।প্রতিদিন বিকেলে বদর এখন স্কুল মাঠে ফুটবল খেলে হিন্দু ছেলেদের সাথে। রমার বান্ধবী বিথী প্রায় প্রতিদিনই দুই একবার রমাদের বাড়িতে আসে। আজও বদর এই সময় মাঠে ফটবল খেলিতেছে, এই ফাঁকে বিথী বদরের রুমে যায়, গিয়েই রমাকে বলে ঃএই রমা আমি বদরদার ঘরে রমা তখন ওদের বড় ঘরখানাতে ছিল, একদৌড়ে এসেই দেখে বদরের রুমে বিথী শুয়ে আছে ঃ বিথী তুই বদর দার বিছানায়! ঃ বদর নাই তাই ঃ দাদা দেখলে বকবে ঃ দাদাও নাই হি-হি-হি—হি অনেকক্ষন হাসাহাসি করে দুজনে।এক পর্যায় বিথী বলল, ঃবদরের বাবা,তোকে অনেক ভারি একটা মালা দিছে--তাই না? ঃ ওইটা মায়ের কাছে-যদি হারিয়ে যায়।চল তোকে দে্খাব এরপর,দুজনেই বদরের রুম থেকে বের হল, রম

রুদ্র ম আল-আমিন এর কবিতা, যন্ত্রণা

               " যন্ত্রণা "           রুদ্র ম আল-আমিন নিজেকে  নিজের মতন              বিসর্জন দিয়ে।                        আজি বেচে আছি                 এ -ওর ধার দেনা দিয়ে। কন্ঠনালী ছিদ্র আমার                               রপ্ত করেছি           ঝোড়ো হাওয়া উরতে চলা। আর্যছিলাম পালছেড়েছি              থাকতে দিসনি তোদের সাথে, তাই বলে কি হারিয়ে গেছি                সবার থেকে। বলছি কথা মোদের তরে বলছি নাকো ভুলে যেতে                                   যাচ্ছি তবে যাই। রাখবি মনে,, সকল যাতন রইবে প্রানে কাঁদবি তবে                 দিচ্ছি তোরে বর হাসবো আমি কাঁদবে তর, আপন যত, কার বা আপন কে করিল? বলতে পারিস?         নিখিল ভারত, রইল পরে কার বা তরে।

রমাদি ০৪

স্কুল ছুটি হয়েছে অনেকক্ষন কিন্ত তবুও হেডমাষ্টার মশাই চেয়ারে হেলান দিয়ে চোঁখ বন্ধ করে বসে আছেন। দপ্তরী নীলু বাহিরে বসে অপেক্ষা করছে কখন স্যার বের হবে।শেষমেশ প্রতিক্ষার প্রহর কাটলো, মাষ্টার মশাই বের হলেন, দপ্তরী পাশে দাঁড়িয়ে অফিস কক্ষ তালাও দিলেন, চাবি হাতে দিতেই দেখলেন , চোঁখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরতেছে।দপ্তরী ভাবল কিছু একটা বলি, আবার ভাবল না থাক। তবু আগ বাড়িয়েই বলল, ঃ বিপিনকে পাঠাবেন স্যার?ওর বোন রমা আর বদর, একই ক্লাসে পড়ে!  বিপিনকে ডেকে আনবো?বিপিনের ছোট বোন রমা একটু ব্যতিক্রমী,কিন্ত ওই একমাত্র বদরের সাথে কথা বলে।  নীলুর ধারনা বিপিনকে বদরদের বাড়ি পাঠালেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। নীলুর বকবকানি শোনার পর হেড মাষ্টার সাব কি যেন ভাবল, তার পরই নিলুকে বলল, ঃযাও ডেকে নিয়ে আসো!  নিলু দেরী না করে দ্রুত চলে গেলেন বিপিনদের বাড়ি। মাষ্টার মশাই ততক্ষণ স্কুল বারান্দায় পা- চারি করছিল।যেহেতু স্কুল এর পাশেই বিপিনদের বাড়ি, সেহেতু নীলুর খুব বেশী দেরী হল না বিপিনকে ডেকে আনতে।  বিপিন, স্যারের সামনে দাঁড়িয়ে নমস্কার করতেই স্যার বলল, ঃবদরদের বাড়ি চেন? ঃ স্যার, শুনেছি মাইল দশেক পশ্চিমে ঃতুমি কাল সকালে ওদের ওখানে একটু য