সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

উপ-৭

৯১




 জয়াদের বাড়ির পূর্ব পাশে একটি বিশাল বওলা গাছ, বদর তাহার নিচে  দাঁড়াইয়া দক্ষিণের হাওয়ায় শরীর জুরাইতে ছিল।জয়া কহিল,
ঃ  দাদা এই বাড়িতে আইসে না, তুমি বুজি সাথে নিয়ে এলে? দাদা আমার কথা কয় ?

জয়ার মা সে সময় চুলোয় লাকড়ি ঠেলছিল, হয়তো তিনি কিছু একটা রান্নাা করিতেছে। মনে মনে ভাবিল, এই সুযোগে তাঁর সহিত খোলামেলা আলোচনা করা যেতে পারে। যদিও তাহাদের দুজনার এই প্রথম দর্শন।তথাপি  ইনিয়ে বিনিয়ে শেষমেশ  জানিতে চাহিল,
ঃবদর তোমার ছেলেবেলার সাথী কিন্ত তোমার সাথে যোগাযোগ নাই কেন?
ঃ দাদাকে জিগাইও এই উত্তরটা পেয়ে যাবে।দাদাকে তুমি পছন্দ করে?


রমাদি  বুঝিতে পারিল,জয়ার মুখ থেকে এই রহস্যের জট খুলিবে না। তাই তো জয়াকে প্রসংগ পাল্টে বলিলঃ বদরদা একা বসে আছে চলো আমরাও যাই।

জয়া  ইতস্তত করিল। একবার মায়ের মুখের দিকে তাঁকাল, পরমুহুর্তে  যাইতে উদ্যত হইল। ঠিক সেই সময় বদর বওলা গাছের নিচে মাচালে বসিয়া ছেলেবেলার স্মৃতি মনে করিয়া একা একা হাসতে ছিলো।  তাহারা উপস্থিত হইতেই  মুখের হাসি পেটের মধ্যে প্রবেশ করিল।রমাদি মাচালে বসিলেও জয়া উদাস দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে রইল। কিস্ত সে বসিলো না । রমাদির মনে হইতে লাগিল, তাহার মনটা যেন অন্য কোনখানে পরিয়া রহিয়াছে।এরপর বদর কহিল,,,
ঃজয়া এবার সংসারী হ---।ভাগ্যকে মেনে নিতে হয়রে, আমরা কেউ বলতে পারি না আগামিকাল কি হবে?


রমাদি মনে মনে হাজারো প্রশ্নবাণে জর্জরিত হইতে লাগিল।তাহারা তিনজন সেখানে দীর্ঘসময় অতিবাহিত করিলেও জয়ার মুখ থেকে কোন টু শব্দও বাহির হইল না । বদরও অনেকটা নিরবতা পালন করিল।
 রমাদি, জয়া ও বদর এদের  মন মানুষীকতা দেখিয়া মনে হইল, যেন ইহাদের কারো সাথে কোন পরিচয় পর্যন্ত নাই।রমাদির বিচলিত হইল, কি এমন রহস্য লুকায়িত রহিয়াছে, যাহা তাহাদের মাঝে, তাহাদের সম্পর্ককে চির বিচ্ছেদ করিতে বাধ্য করিয়াছে।আর
সেই অল্প বয়সে কিই বা ঘটিতে পারে তাহা লইয়া মনে মনে বিস্তর গবেষনা করিয়াও কোন প্রকার কুলকিনারা খুজিয়া পাইল না।জয়ার সামনে এ নিয়ে কোন প্রশ্ন করিতেও সাহস পেল না।








৯২

 অতপর  তাহারা বাড়ি ফিরিবার জন্য জয়াদের বাড়ি থেকে বাহির হইল কিন্ত ফুপির মধ্যে একটা হতাশার ছাপ পরিলক্ষিত হইতে দেখা গেল। জয়াও সেসময় নির্বাক কণ্ঠে মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে রইল। বাড়ি ফিরিবার কালে পথিমধ্যে রমাদি কহিল,
ঃ বদর দা দাড়াও

দাঁড়াতেই তাহার হাতটি ধরিয়া জানিতে চাহিল,
ঃ জয়াকে তুমি কি আজও পছন্দ কর?
ঃ ইহা কি ধরনের প্রশ্ন রমা?
ঃ জয়ার কথা কেন আমাকে এতদিনে জানতে পালাম না।যে জয়া নামে কেউ একজন ছিল তোমার মাঝে?
ঃ রমা চুপ কর, আমি এসব শুনিতে চাই না। যদি তোমার কিছু জানার থাকে তবে মাকে জিজ্ঞেস করিও উত্তর পেয়ে যাব।
ঃ তুমি বল,আমি তোমার মুখেই শুনতে চাই
ঃ আমি তোমাকে বলিতে পারবো না। ঃকেন?
ঃ এই প্রশ্নের, কোন উত্তর আমার কাছে জানা নাই। আর কিছু,,,

রমা মুখভার করিয়া পিছু পিছু হাটতে লাগল।বাড়ি ফিরে টুনির মুখোমুখি হতেই  জানিতে চাহিল, তাহারা কোথায় কোথায় গিয়েছিল।  জয়াদের বাড়ির কথা বলতেই টুনির মুখখানি মলিন হইয়া গেল। এবং সেই সাথে রমাদিকে নিষেধ করিল, বাবা যেন কোনমতে জানিতে না পারে।
রমাদির মনে হইল, জয়া নাম যেন এ বাড়িতে একটা অভিশাপের নাম।  রাতে শোবার ঘরে, টুনির সহিত গল্প করিতে করিতে শেষমেষ আবারো জানিতে চাহিল, জয়াকে নিয়ে কি এমন গল্প লুকিয়ে আছে, ইহা তাকে বলিতেই হইবে। টুনির নিষেধ মানিতে চাহিল না, এরপর টুনি বলিতে লাগিল,,

ঃআমি খুব ছোট তাও যা জানা কইতাইছি দিদি
 পারিবারিক দ্বন্দ্ব জমি নিয়া। জয়ার সাথে বদরদার খুব ভালো সম্পর্ক । কিন্ত হঠাৎই  ওর দাদা খুন অইল। ফুপা (জয়ারবাবা)ভাবল,এই খুন বাবা করছে।কিন্ত বাবা তখন আসামে গেছিল। তাই বাবাকে কিছু করতে পারল
না কিন্ত বিপদে পরল দাদা। 

ওরা কেস করল কইলো জয়াকে দাদা নষ্ট করছে পালায়ে গেল ইয়াইজ্জাদের বাড়ি।তার কয়দিন পর গ্রাম্য সালিসে বাবা পাঁচ বিঘের জমির বদলে দশ বিঘা দিল।





৯৩

তারপর দাদার ঠিকানা তোমাদের বাড়ি।কিন্ত সম্পর্কটা আর জোড়া লাগেনাই ।রমাদি বুঝতে পারে এই সম্পর্ক আর জোড়া লাগবে না। আর লাগলেও হয়তো বা আরো বহুবছর তাদের দুই পরিবারকে অপেক্ষা করতে হবে।
আপনারাও ইহা মনে রাখিবেন যে যদি কাহারো পরিবারে মামলা মোকাদ্দমায় জরিয়ে যায়, তবে বাদী ও বিবাদীর পরিবার খুব কমই মিলিত হইতে দেখা যায়।
কিন্ত রমাদি ভয় পাইল এই ভাবিয়া যে, বদরের বাবা তাহার কিশোর বয়সে জয়ার সাথে বিবাহ দিলেই সমস্যা মিটাইয়া যাইত কিন্ত তাহা না করিয়া উল্টো দশ বিঘা জমি হারিয়েছে তবু ছেলের মাথা কাটেননি।এবার তিনি যদি জানিতে পারেন রমাকে বদর ভালবাসে, তাহা হলে বদরের বাবা কি করিবেন তাহা ভাবিয়া পাইল না।টুনি ততক্ষনে ঘুমের দেশে হারিয়ে গেছে। টুনিকে জরিয়ে ধরে ঘুমোনোর চেষ্টা করিতে লাগিল।ঘুমের ঘোরেই ভাবিত লাগিল বদর-দার জীবনের এ ক্ষত হয়তো কোন দিনও মুছিবার নহে।


সকালে টুনি ও রমাদি স্নান করিতে নদীতে যায়। বদর ঘুম থেকে জেগে মনে মনে খুব হাসিতে লাগিল এই ভাবিয়া যে,রমাদিকে সে কোনদিনও তাহার মনের মধ্যে জমে থাকা কষ্টের কথাগুলো বলিতে পারে নাই কিন্তু ইহা এখন তিনি জানিতে পারিবে। নিজেকে অনেকটা হালকা বোধ করিতে লাগিলেও একটা অশুভ ঝড় তাহার মনের মধ্যে দানা বাধিতে লাগিল।

  যখন তাহারা স্নান করিয়া বাড়ি ফিরিতেছে বদর সেইসময় বাড়ির বাহিরে অবস্থান করিতেছিল। রমাদি ভেজা কাপড়েই বদরের সন্মুখ দাঁড়াইল, টুনি বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করিতেই।রমাদি বলিল,,
ঃ আমি টুনির নিকট থেকে জেনে গেছি, জয়ার সহিত কি ঘটেছিল।
বদর হাসিমুখে ভ্রুক্ষেপ করিয়া রমাদির চোঁখের দিকে তাঁকাইল।
কিন্ত মুখে কিছুই বলিল না।
রমাদি কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে অবশেষে টুনির রুমে গিয়ে ভেজা কাপড় ছাড়িল।নতুন কাপড় পরিধেয় করিয়া উঠোনে দাঁড়াতেই দেখল বদর কাচারি ঘরে দাঁড়িয়ে আছে। এরপর কাচারি ঘরে প্রবেশ করেই বদরের পদধূলি মাথায় লইল কিন্তু সে ইহাতে কোন প্রকার বাধা প্রধান করিল না।

পদধূলি বলিতে আমরা যাহা বুঝি তাহা হইল গুরুজন কর্তৃক আশির্বাদ।
কিন্ত অনধিকাল হইতে ভারতবর্ষের ধার্মিক ও বিবাহিত মহিলাগণ,পুরুষের পায়ের ধূলো মাথায় লইয়া থাকেন। সেই সাথে পুরুষগণ মহিলাগণের কপাল তথা সিথি বরাবর চুম্বন করিয়া থাকে। 








৯৪

এবং এই অন্চলের বিবাহিত পুরুষগণ দুরদেশে ব্যাবসা কিম্বা ভ্রমনের জন্য যখন ঘর হইতে বাহির হইত তখুন মহিলাগণও ঘরের চৌকাঠে দাড়াইত, ঠিক সেই সময় পুরুষেরা তাহাদেরকে কপোলে চুম্বনশিক্ত করিয়া বিদায় লইত। ইহাই যেন বঙ্গীয় নারী পুরুষের রেওয়াজ রীতিতে পরিনত হইয়া রহিয়াছে।বদর নিজেও ইহা জানে যে, এই সংকৃতি মানব মানবীর ভীত অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।বদর রমাদিকে পছন্দ করে, রমাদিও বদরকে পছন্দ করিয়া থাকে। কিন্ত  তাহারা বিবাহিত নয়। সে কারনেই যততত্র তাহার সহিত ঘনিষ্ঠতা জরাতে ভয় পাইয়া থাকে। শেষমেশ বদর যখন রমাদির মুখখানি দুহাত দিয়ে ধরে কপালের মাঝ বরাবর মুখ লাগাইল, ঠিক তখনই মা দক্ষিনের ঘরের চৌকাঠ হইতে তাহাদের দেখিয়া ফেলিলেন।
 মা উহা দেখিয়া মনে মনে ভাবিতে লাগিলেন, বদর কি তাকে বিবাহ  করিয়াছে?
দুজনেই  দেখিতে পাইল যে  মা তাহাদের এতটা কাছাকাছি দেখিয়া ফেলিয়াছেন। তখন তাহারা দুজনেই হতভম্ব হইয়া গেল।রমাদি  দেখিল মায়ের চোখে জল গরিয়ে পরিতেছে তখন নিজেকে অপরাধী মনে হইতে লাগিল।মায়ের এই বিমূর্ত রুপ দেখিয়া,, তাহার এখুন কি করা উচিত তাহা ভাবিতে লাগিল, এর পর রমাদিকে বলিল, তুমি মায়ের কাছে গিয়ে দাড়াও। রমাদিও ধীরপায়ে এগুতে লাগিল আর তখনই মা পা বাড়াইল রন্ধনশালার দিকে। 


মায়ের নিকট আর যাইতে সাহস হইল না। টুনিকে জরিয়ে ধরতেই তাঁর দুইচোখ জলের ফোয়ারা প্রবাহিত হইতে লাগিল। টুনি বারংবার  জিজ্ঞেস করিতে লাগিলঃ দিদি কি অইছে ? কি অইছে দিদি?
 টুনিকে তেমন কিছুই বলিল না।


বদর চিন্তা করিল, কি করিয়া মায়ের মুখোমুখি হইবে।রমাদিও ঘর থেকে আর বাহির হইল না। দুপুর গরিয়ে গেলো তখনও ঘুমিয়ে রইল। মা ঘরে প্রবেশ করিয়া রমাদিকে মনের মত করে আরো একবার দেখিতেছিল।হঠাৎ টুনি প্রবেশ করিতেই বলিল,ঃমাইয়াডা ঘোমায়া আছে, খাইবোনা,বেলা গড়ায়ে গেল।
টুনি দিদি দিদি বলিয়া ডাকা ডাকি করিতেই তাহার ঘুম ভেংগে গেল। রমাদি দেখিল, মা তাহার পাশে দাড়িয়ে ।তাড়াতাড়ি বিছানা ছাড়িয়া মাটিতে পা রেখেই মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে লাগিল।কিন্ত টুনি এই কান্নাকাটির অর্থ কিছুই বুঝিতে পারিল না।


টুনি মায়ের নিকট বেশ কয়েকবার জানিতে চেষ্টা করিয়াও সফল হইল না।
মনে মনে ভাবিল, দাদা হয়তো বা তাহার সাথে খারাপ আচরন করিয়া থাকিতে পারে। 






৯৫


যাহা হোক, তাহারা সকলেই দুপরের খাবার সম্পন্ন করিলেও বদরের কোন সন্ধান মিলিল না। রাতে  বদর ফিরিয়া কাচারি ঘরে প্রবেশ করিল টুনি গিয়ে দাদার নিকট জানিতে চাহিল ঃসারাদিন কোথায় ছিলি?। বদর উল্টো টুনিকে বলিল,ঃরমা ঘুমিয়ে পড়েছে?
ঃ মায়ের ঘরে কতা কইতাছে।
দিদিকে আইতে কমু?
ঃ বাজান কোথায়?
ঃহ্যায় উত্তর পাড়া রমিজের বাড়ি।
বদর কিছুক্ষণ নিরব থাকিয়া আবার বলিল
ঃ রমাকে পাঠায়ে দে?
রমাদি যখন কাচারি ঘরে আসিল তখুন বদরকে মহা চিন্তিত দেখা যাইতেছিল। তাহারা মুখোমুখি হইতেই জিজ্ঞেস করিল,ঃ মা তোমায় কিছু বলেছে?
রমাদি দুষ্টুমি করিয়া, নানান কথা বলিতে লাগিল।বদর বেশ চিন্তায় পড়িয়া গেলে রমাদি ভাবিল আর মিথ্যে বলা চলিবে না। তাইতো বদরের মাথায় হাত বোলাইতে বোলাইতে বলিল,,ঃ এবার কি করিবে?
বদর রমাদির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রমাদি হাসতে লাগল। হাসির শব্দ এত জোরে হইতে লাগিল যে টুনি ও মা তাহা শুনিতে পাইল।
রমাদির মুখখানি চেপে ধরতেই বলল,
ঃ লাগছে তো,,,,,, আমি মার মেয়ে হয়ে গেছি হ--হু-হু-হু-----
বদরের জমে থাকা মনের হাসি মনের মধ্যেই রয়ে গেল, এবং বুঝিতে পারিল যে, মা তাহাদের সম্পর্ক মোটামুটি মেনে নিয়াছে।

এরপর, গভীর রাতে  কাচারিতে বসিয়া মা ছেলে অনেক কথা হইল, এবং রমাকে কতটা পছন্দ করে তাহা লইয়াও চুলচেড়া বিশ্লেষন করিল। কিন্তু মাকে বলিল যে, বাবা যেন ইহা জানিতে না পারে।পরের দিন যখন রমাদিদের বাড়ি পৌছাল কিন্ত বাড়ি গিয়ে দেখল তাহার বাবা ঢাকায় চলিয়া গেছেন।বাবার সাথে তাহার শেষ দেখা হইল না বলিয়া মনে মনে খুব কষ্ট পাইলেও ইহা ভাবিয়া খুশি হইল যে আর যাহাই হোক না কেন। বদরের মা তাহাকে পছন্দ করিয়া মেয়ে সম্ভদন করিয়াছে ইহাতে তিনি নিজেকে পরম আনন্দিত মনে করিতে লাগিল।রমাদি বাড়ি ফিরিয়া তাহারা দুইজনে নিয়মিত কলেজে যাইতে লাগিল। বদর তাহার বাবা মায়ের সংসারের চিন্তা কিছুটা হ্রাস পাইল। এবং তিনি মনে করিলেন তাহার পড়ালেখা হয়তো আর ব্যাঘাত ঘটিবে না। কিন্তু রমাদির মধ্যে ততক্ষনে অনেক পরিবর্তনের ছাপ লক্ষ করা গেল।







৯৬

রমাদি বদরের সহিত নিয়মিত ক্লাস করিলেও কলেজে নিজেকে বদরকে স্বামী বলিয়া পরিচয় দিতেও কুণ্ঠাবোধ করিত না। তাহা লইয়া হাসি ঠাট্টা মসকরা করিয়া তাহারা কেবল সময় পার করিতেছিল। কিন্তু সমস্যা হইল কলেজে ছাত্র রাজনীতির উত্তাপ একে একে ছড়িয়ে পড়তে লাগিল।
এবং প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে অংশ লওয়ায় ছাত্রদের মাঝে রাতারাতি একটা পরিবর্তনের হাওয়া বইতে লাগিল। বদর দেখিতে পাইল ছাত্র ইউনিয়নের রফিক ও সিরাজ সহ অনেকেই ইহা লইয়া আর কোন কথা বলিতেছে না। বরং রফিক বদরকে কাছে ডাকিয়া আরো বলিল,,
ঃবদর, আমরা কিছু করতে পারি আর না পারি, একসাথে থাকতে তো পারি।
এর তুই কি ভাবিস?

বদর ছাত্র ইউনিয়নের তেমন কোন নামধারী ছাত্র নেতা নয়।
কিন্ত এই রফিকের হাতধরেই ছাত্র ইউনিয়নে নিজেকে জরিয়ে ফেলেন। এরপর মিছিল মিটিংয়ে  উপস্থিতি তেমন একটা না থাকলেও সিরাজ ও রফিকসহ অনেকেরই বাবার পরিচিতি সম্পর্কিত ধারনা আছে। আর সে কারনেই,বদরের স্থান তাহাদের বুকে।
প্রাদেশিক নির্বাচনে কে সামনে রেখে কলেজ শাখার ছাত্র ইউনিয়ন নেতাদের তেমন কোন জোরালো ভুমিকা দেখা গেল না। 


হইহই রইরই করিতে করিতে নির্বাচন ঘনিয়ে এলো। বছরের শেষ সময় হওয়ায় কলেজও তেমন একটা খোলা রহিল না। যথা রীতি নিয়ম মোতাবেক ডিসেম্বর এর সাত তারিখ নির্বাচন লইয়া সর্বত্র আলোচনা সমালোচনায় টাংগাইল মহকুমা সহ আশপাশ মুখরিত হইয়া গেল।
এবং সাত তারিখেই প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইর


এই সাধারন ছেলেটা কলেজ ক্যাম্পাসে রাতারাতি বদলে গেল ।
কিন্তু রমাদি রয়ে গেল পূর্বের ন্যায়। কারন, কলেজ জীবনের শুরু থেকেই ছাত্র রাজনীতি মোটেই তাহার পছন্দ নয়। ইচ্ছে আইনশাস্র অথবা মেডিকেল অধ্যায়ন এর মধ্যে একটা কিছু করার।

 দেশের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় 
কলেজ নিয়মিত খোলা থাকলেও ক্লাসের হেরফের ঘটিতে থাকল। রমাদি অলস সময় পার করিলেও বদর হয়ে গেল ব্যাস্ততায় ভরপুর।
মিটিং মিটিং দেখতে দেখতে তাহার বদরের উপর ঘৃনা ভরে গেল। 
ইতিমধ্যেই তাহাদের মধ্যে একটা বিচ্ছেদের ডামাডোল শুরু হয়ে গেল। রমাদি নিজেকে ঘুটিয়ে নিতে শুরু করলেন।  যেন তাঁকে আর মনে মনে সহ্যই করতে পারছেন না।






৯৭


 বদর কিছু একটা জিজ্ঞেস করলেই সাধারন ব্যাপারেই  রমাদি ক্ষিপ্ত হতে থাকেন।
এভাবে তর্ক বিতর্কের মাঝে কাটতে লাগল বেশ কিছুদিন। রমাদি দেখল তাহাকে এই রাজনীতির ময়দান থেকে  ফেরানো তাহার সম্ভব নয়।

কিন্ত রমাদি চায় সাধারন একটা জীবন,যে জীবন রমাদি পছন্দ করে তাহা হইল
সাদাসিধে হাস্যজ্জল একজন মানুষ, যেমনটা বদর পূর্বে ছিলো।
সে মনে মনে ভাবল,তাঁর খেলার সাথাী বদর হয়তো চিরকালের জন্য এখুন তাঁর থেকে চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে। যেন তাহাকে ফেরানোর আর কেহ নাই।মার্চ মাসের মাসের মাঝামাঝি সময় হঠাৎই সকালবেলা তাহার সাথে বাড়ির উঠোনে বাকবিতণ্ডা ঘটে গেল। রমার মা বুঝতে পারল না,
তাঁহার কি করা উচিত, কিন্ত  মা ইহা বুঝতে পারল যে, বদরের মধ্যে একটা দ্রত পরিবর্তন ঘটে গেছে।তাঁকে বোঝানোর সক্ষমতা তাহার নাই।

এই মাঝবয়সী মহিলার যথেষ্ট বুদ্ধি থাকিলেও বদরকে কি বলিবে, তাহা ভেবে পাইল না। এই বাকবিতণ্ডার জের ধরে রমাদির সাথে প্রায় কথা বলাই ছেড়ে দিল। সেই সাথে রমাদিও কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিল। শুরু হইল বদরের একলা চলো নীতি। বদর কলেজে সারাদিন হৈচৈ করে বাড়ি ফিরলেও সেসব বিষয় নিয়ে আর জানতে চায় না
বেশকিছুদিন পর মা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগল,,
বদর মায়ের কথায় তখনো কোন সারা দিল না।

  উপায়ন্তর না পেয়ে একদা রমাদিকে বলল
ঃ একদিন কলেজে গিয়ে দ্যাখতো বদর কি করে?
 মাকে কিছুই বলল না।কিন্তু রমাদির মধ্যে একটা বোবাকান্না বয়ে গেল। রমাদির কেবলই মনে হইতে লাগিল, কেন বদরকে তিনি ভালোবাসলেন? তাহার নিজের ভাবনা কি তবে ভূল ছিলো। ইহা লইয়া রমাদি বিস্তর গবেষনা করিতে লাগিল।

 নিজের মনের সহিত যুদ্ধ করিয়া শেষমেষ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইল যে, বদর দার সহিত শেষবারের মত আরো একবার কথা কহিবে। এবং নিজে জানিতে চাহিবে যে কেনই বা রমাদিকে একদিন ভাল বেসেছিলে?
মেয়ে মানুষের একটা সহজাত সৃংখলিত আছে আর, উহা হইল,পুরুষেরা যখন তাহাদের অবজ্ঞা বা ঘৃনা ভরে দেখেন তখন তাহারা, বন্ধনের জোর বা আপত্তি খাটাইতে ব্যাস্ত হইয়া পড়েন।






৯৮


 কিন্তু ইহা জানে যে, শুধু ভালবাসার জোরে তাহার উপর কোন প্রকার দাবী করিলেই তাহা পাওয়া যায় না।
কারো উপর জোর করিতে গেলে তাহার মাথে বৈবাহিক কিম্বা রক্তের সমপর্ক থাকতে হয় ইহা তিনি খুব ভালো করিয়াই জানেন কারন তিনি একজন প্রাপ্ত ব্য়স্ক।
 তবু ভাবিল, তাহার যত টুকু বদরের উপর জোর আছে তাহা দিয়েই তিনি রাজ্নীতি থেকে তাহাকে বের করিতে চেষ্টার ক্রুটি রাখিবেন না।  রাত যখন গভীর হইল, সেসময় বাড়ি ফিরিতেই তাহার মুখোমুখি হইল। বদর কোন কিছু না বলিয়া সোজা চলে গেলেন তাহার রুমে।
রমাদি মাকে বলিল,,,,
ঃমা,, আমি বদর দার ঘরে যাচ্ছি,,,

মা তেমন কোন কথা না বাড়িয়ে চলে গেলেন ঘরে।
রমাদি  বদরের রুমে গিয়ে হাজির
হল দেখল তাহার গায়ের কাপড় চোপড় পরিবর্তন করিতেছে। সন্তর্পণে চেয়ারটাতে জড়সড় হয়ে বসলো।  রমাদিকে দেখেই জানিতে চাহিল
ঃ কিছু বলবে আমাকে?
বদরের মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাঁকিয়ে  কেবলই মনে হইতে লাগিল,
যেন কতকাল পরে দেখছে তাকে।মাত্র ক'দিনেই যেন হাজার বছর পেরিয়ে গেছে। দ্বিতীয়বার আবার বলল,
ঃ রমা কিছু বলবে?
রমা একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ল, মুখ থেকে মনের অগোচরেই বেরিয়ে এলো হু---
ঃহ্যা বলো কি বলবে?
ঃআমি মা আজকাল কেমন আছি, জানতে ইচ্ছে করে না--বদর দা-- আমায় এত সহজেই ভুলে গেলে? 
ঃ তা কি করে হয় রমা?
ঃ তুমি আজকাল একা একা চলতে পারো।আমার কথা একবারও মনে হয় না।
তোমার জানতে ইচ্ছে করে না, আমি কেমন আছি?

রমার চোঁখের দিকে তাঁকাতেই বদর দেখল, রমার চেহারার সেই জৌলুশ আর নেই। হাসি খুশি তার মধ্য থেকে বোধ হয় চিরতরেই হারিয়ে গেছে। বদরের মনে হলো সে আর যাহাই করুক রমাকে দুরে রাখা তাঁর মোটেই ঠিক হয়নি।
বদর অনেকক্ষন চুপ রহিল, রমাদি বদরকে আবারো কহিল,






৯৯

ঃ বদরদা তুমি মুসলমান ইহা আমি ভাবিনি,আমি তোমাকে বর ভেবেছি, আমার ভাবনার মুল্য তোমার কাছে এত তুচ্ছ? বদর দা--

বদর রমাদির মুখটি চেপে ধরার চেষ্টা করল, কিন্তু রমা তাহার মুখের কথা থামাতে চাইল না। এরপর বদর রমাদিকে অনেকটা জোরপূর্বক বুকে জরিয়ে নিলেন তারপর কহিল
ঃ রমা আমি তোমায় খুব ভালবাসি--খুব--


সেই রাত্রে বদর ও রমাদির মধ্যে দুরত্ব কিছুটা কমিয়া গেল। কিন্ত বদর রাজনীতির ময়দান থেকে সরে দাড়াবে কি না, তাহা স্পষ্ট করে কিছুই বলল না। 

বদর সকালে রমাকে শুধু একবার জিজ্ঞাসা করিল কলেজে যাইবে কি না?
কিন্ত রমা তেমন কিছু না বলাতে, বদরও দ্বিতিয় বারের মত আর কোন প্রশ্ন করিল না।এর পর, রমা বাড়িতে মনমরা হয়ে সারাদিন কাটাইল।
এবং সারাদিন উপোস থাকিয়া ভাবিল যে, বদরদা বাড়ি ফিরলে তবেই একসাথে রাতের খাবার খাইবে। দুপুরবেলা  মা অবশ্য একবার রমাকে খাবার খাওয়ার জন্য পিড়াপিড়ি করিল, কিন্ত তাহাতে কোন প্রকার সায় মেলিল না। রাত যতই গভীর হইতে লাগিল, রমা ততই চিন্তিত হইল। সে রাত্রে বদরের কোন হদিস মেলিল না,,
একে একে দুইদিন দুই রাত কাটিয়া যাইবার পর, রমা ও রমার মা, বদরের জন্য ব্যাকুলা হইয়া পড়িল। কারন, রমাদের বাড়িতে পুরুষ মানুষ বলিতে একমাত্র বদর, রমার ভাই বিপিন দীর্ঘ দিন ধরেই বাড়ির কোন খোজ খবর রাখে না।
তাছাড়া বিপিন কোথায় থাকে তাহাও তাহাদের জানা নাই। বদরের নিরুদ্দেশ একে একে সারাগাঁ ছাপিয়ে যুগনির হাটের লোকজনের মুখে মুখে রটিয়া গেল। রমাদি গত দুদিন ধরে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে পাগল প্রায়।
বদরের নিরুদ্দেশে,প্রতিমার মত দেখতে এই মেয়েটির মনে এখুন হাজারো প্রশ্নবানে জর্জরিত।কিন্তু বদর দার কোন সন্ধান নেই।বদরের নিরুদ্দেশ, রতন-কা হাটের লোকমুখে শুনে ছুটে আসে রমাদের বাড়ি।
রতন-কাকা (রমার ছোটকাকা) রমাদি ও রমার মাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে। কিন্ত রমা ব্যাপারটি সহজ ভাবে মেনে নিতে পারে না।
সে একবার ভাবে যে, হয়তো তাহার উপর রাগ করিয়াও বা নিজেকে আত্বগোপন করিতেও পারে 










১০০

যাহা হোক, রতন-কা কহিল, যত দ্রুত সম্ভব বদরকে আমি খুজিয়া বাহির করিবো আর তা ছাড়া বদর তো বাচ্চা ছেলে না, যে সে হারাইয়া যাইবে।

রমার মা, মনকে শক্ত করিয়া ভাবিল কথা তো মন্দ না, বদর তো অনেক বড় হয়ছে ।রতনের দিকে ফ্যালফাল করে তাকিয়ে বললঃ
ওদের বাড়িতে খবটা দিতে হয় য়ে রতন।
রমা সেসময় বারান্দার খামখানায় মাথা হেলান দিয়ে বসে ছিল।

 রমার মাথাভরা চুলগুলো উস্কখুস্ক, রতনের মনে হইতেছিল রমার বোধহয় পেটে দানাপানি কিছুই মেলেনি। মাকে জিজ্ঞেস করিল 
ঃ রমা কি দুপুরের ভাত খেয়েছে?
মায়ের মুখ থেকে কোন কথা বের হল না। রতন বুঝতে পারল মেয়েটা কিছুই খায়নি। বৌদিকে বলল,
:ঃতোর রতন কা মরে যায়নি, দেখবি দুদিনের মধ্যেি ওকে খুজে বের করব। তোরা চিন্তা করিস না। তারাতারি খেয়ে নে, তোকে নিয়ে মাঝিবাড়ি  যাব।

রমা কোন কথা কহিল, তার একটু পরেই কাকার সাথে হেটে চলল মাঝিবাড়ি



হঠাৎই দেশে যুদ্ধ বেধে গেল।ঢাকায়  অফিস আদালত বন্ধ হইতে লাগিল।

এরপর উপায়ন্তর না পেয়ে রমাদির বাবা ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরিল। উঠোনে দাড়িয়েই বলল, ঃরমা কোথায়রে 
ঃরতন  আজই নিয়ে গেছে। 
কোনমতে ঘরে বসেই বাবা বলল,
ঃশহরে মিলিটারীতে ভরে গেছে। লোকজন যে যার মত ছুটে পালাইতেছে।বিপিনের সাথে দেখা হয়নি, ওর সাথে অনেকদিন ধরেই যোগাযোগ নাই। জানিনা ও কেমন আছে।
বদর কোথায় ? 
: দুইদিন ধরে দেখছি না।রতনও ওকে খুজতেছে কি করা যায়। ওর বাবাকে খবর পাঠাইবেন।
ঃবলো কি, আচ্ছা দেখি কি করা য়ায়।রমা কি আজ ফিরবো।
:তুমি কি রতনদের ওখানে যাবে?
সবে ফিরলাম সন্ধাবেলায় দেখবো নে। 
ঃঢাকার অবস্থা কি খুব খারাপ?
ঃ আমি ভাবতেছি  যাবো কোনদিকে, জানো স্বাধীনতা মানেই রক্ত। কে কার জীবন কেড়ে নেবে বলা তো যায় না। রমাও বেশ বড় হয়েছে,
অফিসের পিয়ন বনমালী আসবার সময় কানে কানে ফিসফিস করে কহিল,
ঃবাবু এই দেশে থাইকেন না, পারলে আমার সাথে উত্তর দিনাজপুর চলেন।
এইটে হিন্দু মুসলিম রাইটস।








১০১

জানো, আগেরদিন অফিসের সমস্ত হিন্দু আসল না পরেরদিন অফিস গেটে তালা ঝুলছে। 
বাড়ি ফিরতেছিলাম কিন্ত বনমালীর কথা কানে ঝনঝনিয়ে বাজতেছিলে। বাসের মধ্যে দেখলাম ঘটিবাটি নিয়ে লোকজন গ্রামে ফিরতেছে। 
 আমিও ভেবে পাইলাম না, আমি কি করব।

মা সাদামাটা মানুষ, বাবার মাথায় হাত বোলাইতেছিল। বাবার সামনে এমনিতেই কম কথা বলে, আর স্বাধীনতা এনিয়ে মার কোন উচ্চবাচ্চ্য নাই তাইতো মা বলল,
ঃআপনে চিন্তা কইরেন না, ওসব গ্রামে আইব না।
বাবা এরপর চুপ রহিল। মাথার নিচে আগে থেকেই বালিশ রাখা ছিল। এরপর আরো একটা বালিশ দিতে কহিল।দুটো একত্র করেই চোখ বন্ধ করার চেষ্টা করিতে দেখা গেল। মার সাথে আর কোন কথা কহিল না। 
কিন্ত বাবা ঘুমোল না কিছুক্ষণ শুয়ে থেকেই সে  বিছানা ছাড়িল।তখন সন্ধের পূর্ব মুহুর্ত মাকে বলিল,
ঃএই রমার মা আমি রতনদের ওখানে গেলাম।
বাবা মাঝিবাড়ি গিয়ে দেখল রতন বাড়ি নাই। রমা বাবাকে দেখেই গলা জরিয়ে ধরল।এর কিছুক্ষণের মধ্যে রতনও এলো। রতন আগে থেকেই জানত যে, ঢাকা শহর পাকিস্তানি মিলিটারীতে ভরে গেছে। তাইতো দাদাকে দেখেই বলল
ঃ দাদা আমরাও তো হিন্দু, আমরা কি এদেশে থাকতে পারব?যদি বিপদে পরি তবে বদরদের ওখানে থাকা যাওয়া যাইব কি?
ঃ ওদের  অবস্থা তো আগের মত নাই, তুই ওসব নিয়ে মাথা ঘামাস না, দুই, চারদিন যাক, তারপরে ভেবে দেখব,
রমা তারাতারি তৈরি হ ---
রতন কাকা আমাদের পিছনে কিছুদূর এলো। তারপর বলল,
ঃদাদা, আমি খবর নিয়েছি, বদর ওদের বাড়ি গেছে। ওসব নিয়ে ভেবো না।
ঃছেলেটা বলে গেলেই পারতো। রমার মা তো চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে। আর দিনকাল তো ভাল না। দেখছিস না বিচার শালিস ওঠে গেছে। আবার অনেকে  মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিতেছে।
ঃ দাদা বিপিন কবে আইব?
ঃঅনেকদিন ধরেই দেখা সাক্ষাত নাই, খোঁজখবরও জানি না,  শুনছিলাম ওই মেয়েটির সাথে আছে।
কিন্ত কোথায় কিভাবে  আছে তাও জানি নারে। রতন তুই বাড়ি যা। বৌদির খেয়াল রাখিস। 
 রতন কা আসি বলেই বিদায় নিল, রমাদি বাবার হাত ধরে হাটতেছিল, রাত ঘুটঘুটে অন্ধাকার, বদর ওদের বাড়ি আছে, কাকার মুখ থেকে শুনতেই মনটা খুশিতে ভরে উঠেছে
পথঘাট অন্ধকার হওয়ায় রমার হাসি মুখ বাবা দেখতে পেল না । 







১০২

প্রায় দুই সপ্তাহ কেটে গেলেও বদর আর ফিরল না।রমাদি আজকাল খুব একটা কারো সহিত কথা বলে না। কিন্তু একে একে গন্ডগোল সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবার মধ্যে একটা প্রজ্জ্বলিত আগুনের মতো দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকলো।
বিথী ও তার মা বাড়িঘর ছেড়ে এবার রওনা হলো ভারতের পথে।যাইবার সময় রমিদিকে বলল, দেইখে শুনে থাকিস দেশের পরিস্থিতি ভালো না যে কোন মুহূর্তে একটা কিছু হয়ে যেতে পারে।
গ্রামের অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে ভারতের স্বরনার্থী শিবিরে।বিথীরা যাইবার পরই তারা নিজেরা কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না। মা-বাবাও এনিয়ে সারাক্ষণ চিন্তা করতে লাগল। রতন কাকাও  এসেছিল বাবার সাথে শলা পরামর্শ করতে। কি করা যায় এভাবে তারে ভাবে টিকে থাকতে পারবে কিনা তাহা জানতে।রতন বাবাকে কহিল ঃ এভাবে এইদেশে থাকলে হয়তো বড় কোনো দুর্ঘটনার সামিল হতে পারি।
ঃ দেখি কি করা যায়
এই কয়দিনে, এই গোঁড়া হিন্দু সমাজের অনেকেই চলে গেছে ভারতে কারণ তার ঠিকঠাক নিরাপদ একটা আশ্রয়ের জন্য।গ্রাম এখন অনেকটাই পুরুষশূন্য, কেউ ঘর থেকে বের হতে চায় না কারণ মুক্তিযোদ্ধা আর মিলিটারী  এখন চতুর্দিকে অস্ত্র হাতে। ।বাবা শেষমেষ রতন কাকার সাথে আলোচনা করিল তাহারাও ভারতের স্বরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নেবে। রতন অমত করিল না কারণ রতন কি করবে তা ভেবে পাচ্ছিল না। আর এদেশে এভাবে থাকাও সম্ভব না।রতন বদরদের গ্রামের বাড়ি যেতে চাইল ওখানে থাকবাবর জন্য।  কিন্তু বাবা তাতে সায় দিলেন না। শেষমেষ বাবা সিদ্ধান্ত দিল যে তাহারা া উত্তরদিনাজপুর যাবে   কারণ এখানে তাহারা কেউই নিরাপদ নয়।
রমাদি রাতে বাবাকে বদরদের বাড়ি যাওয়ার কথা বলল। ওদের সাথে একবার দেখা করার পর না হয় আমরা উত্তরদিনাজপুর যাব। কিন্তু বাবা বলল, না ওদের ওখানে যাওয়ার দরকার নাই এরপর বাবার সাথে আর কথা কহিল না।রমার মনে মনে ইচ্ছে ছিল বদরের সাথে না দেখা করে সে কোথাও যাবেনা।শেষে বাবাকে মা বোঝাতে সক্ষম হইল



পরের দিন সকালবেলা উঠে তাহারা তিনজন রওনা হইল বারবয়লা গ্রামের পথে। সেখানে গিয়ে দেখল বদরের বাবা বাড়ি নেই কারণ তিনি গা-ঢাকা দিয়েছেন।টুনি  রমাকে কাছে পেয়ে অনেক না বলা কথা সে গুলো আজ বলে লাগল। গভীর রাতে বদর বাড়ি এলো
বদর ফিরে এসে মা মেষো মশাইকে বেশ খাতির যত্ন করতে লাগল। 






১০৩

রমা জানতে চাইল ঃতুমি এতদিন ধরে আমাদের খোঁজখবর কেন রাখো না
মা বলল ঃতুই আমাকে ভুলে থাকতে পারিস এই অসময় আমরা কি করব ভেবে পাচ্ছি না, তাই তোদের বাড়ি এলাম তোদের সাথে পরামর্শ করার জন্য।

মেসোমশাই তেমন কিছু বলো না শুধু একবার বলো ঃবদর তুমি ভালো আছো 
রমাদি বদরের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল
বদর মুখটা নিচু করে বলল আমি আপনাদের ছেড়ে দূরে থাকি কিন্ত
বাবা ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আমি কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না।ভাবছিলাম যুদ্ধে যাবো। তাই আপনাদের জানাইনি,চেয়েছিলাম বাবাকে একনজর দেখে যাই কিন্ত এখানে  এসে দেখি বাড়ি আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল না তাই তো আর ফিরে যাওয়া হল না কোথাও। 
রমা কহিল,
 মা-বাবা উত্তর দেশে যাইতে চায়, স্বরনার্থী হয়ে কিন্তু আমার যেতে ইচ্ছে করে না।রমাদি বদরের মাকে বলল,
 মা আমি টুনির কাছে থাকতে চাই 
আমাকে রাখবেন?বাবা উত্তর দিনাজপুর যেতে চাইছে কিন্তু আমি যাবনা আমি আপনাদের কাছে থাকবো।
মেসোমশাই কহিল,
 এখানে কিভাবে থাকবি!  

মা চিন্তা করিল, তারা শরণার্থী হয়ে দেশের বাইরে যাচ্ছে, ওখানে কিনা কি হয,় মেয়েটাও সাবালিকা তাকে ওদের কাছে রেখে গেলেও মন্দ হয় না। 
তাই তো রমার মা কোন কথাই কহিল না 
কিন্তু রমার বাবা কোনমতে প্রস্তাব মানতে রাজি ছিল না অনেকটা রাগ করতে লাগলো কিন্তু মা এতে বিচলিত হলো না।

সে রাতে বদরদের বাড়িতে তর্ক-বিতর্ক অনেক হইল কিন্তু রমাদিকে কোনো মতেই বোঝানো গেল না অবশেষে রমাদি সেখানে রহিয়া গেল।

 বাবা সহজভাবে মেনে নিতে পারছিল না বিষণ্ণ মনে বাড়ী ফিরল কিন্ত পথে মায়ের সাথে কোন কথা কইল না।
রতকে বাবা আগে থেকেই বলে রেখেছিল। সন্ধের সময় রতন বৌদিকে নিয়ে বাঘিল এলো। শেষ রাত্রির দিকে  
রতন, জেঠিমা, বাবা-মা সবাই রওনা হইল উত্তর দিনাজপুরে যাইবার জন্যে।
জেঠিমার বয়স হইয়াছিল তাইতো অন্ধকারে ঠিকমত হাটতে পারছিল না।
কিন্তু বাবার মনের মধ্যেই একটা সমস্যা রয়ে গেল, ার তাহা হহইল এইযে রমার কোন খোঁজ খবর রাখার মত ব্যাবস্থা নাই।




১০৪

মা যাইবার সময়  এটুকু বলেছিল উত্তরিনাজপুরে তাহার  দুরসম্পর্কে এক আত্বিত্বোর সন্ধান করিবে। মায়ের ওটুকুআ ভরসা মাত্র।  

দু দিনেই টুনির সাথে সম্পর্ক অনেক গুন বেড়ে গেল
আজকাল রমাদির ব্যবহার দেখে মনে হয় না ও একটা হিন্দু বাড়ির মেয়ে। মনে হইতে রাগিল যেন এ বাড়িতে জন্ম নিয়েছে সে।
রামাদি এবাড়িতে নিজেকে নিজের মতো করে সাজাতে লাগলো। বাড়ি ঘর থেকে শুরু করে কাপড় চোপড় ় সমস্ত কিছু ধুয়ে পরিষ্কার করতে থাকে। 
রান্নাবান্না ঘর গোছানো ও সমস্ত তার নিজ হাতে করতে লাগল। 

বদর নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে নিতে লাগল সে আজকাল রমাদির সাথে খুব একটা কথা বলার চেষ্টা করো না। তার সামনে খুব একটা ধারণা খাবারের সময় সে থাকলে কাছে যেতে চায় না

মা মনে মনে চাইছিল রমা যদি  মুসলমান হয় তবে তাকে এ বাড়ির বউ করে রাখবে।
কিন্ত মাত্র কয়েকদিনেই মা যখন তাহার উপর নির্ভরশীল হইয়ে পরলো  তখন একদিন মা রমাদিকে জিজ্ঞাস করিল,ঃতুই বাড়িতে কিভাবে থাকবি? 
রামা কহিল মা আমি বদর-দাকে পছন্দ করি, আমি জানিনা বদর দাও আমাকে
মা-বাবা কিছুই জানে না আমি জানি না আমি কিভাবে থাকবো তবে আমি ওর খুব কাছাকাছি থাকতে চচাই মা
মা রমাদির কথা গুলো সহজ ভাবে নিচ্ছে কারণ মা জানে বদরও খুব পছন্দ করে।
রমাদি বদরের মায়ের মধ্যে কথা হচ্ছিল সেইসময়  টুনি ঘরে এলো।মা তখন চুপ রইল
টুনি আগে থেকে আন্দাজ করেছিল যে বদরদাদা তাকে এবং সেও পছন্দ করে এবং তাদেরর হাবভাব দেখে তা অনুমান করেছিলো কিন্তু কখনো বলা হয়নি কিন্তু আজ মায়ের কথা শুনে সে বুঝিতে আর বাকি রইল না
টুনি লাজলজ্জা ফেলে মাকে বলল মা আমি বদরদার জন্য দিদিকে চাই
মা খুব একটা কথা বাড়ালো না এবার বললো যে কাল থেকে তুই শাড়ি কাপড়-চ় পরবি।

,

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

রমাদি ১০

স্কুলে নিয়মিত এই পোশাকই পরে।বিপিন রীতিনীতিও সব শিখিয়ে দিল।বিপিনের বোন রমাও পাঠ্যে হিন্দুধর্ম শিক্ষা-র যেকোন বিষয় না বুঝলে, তা আলোচনার মাধ্যমে সহযোগীতা করতে থাকে আজকাল বদর, বিপিনের কাজ কর্মেও সহযোগীতা করে। রমার মা,বদরের এই আচার ব্যাবহারে নিজেও গর্বিত। শুরু থেকেই বিপিনের মাকে, বদর মা বলেই ডাকে।গোঁরা সমাজের লোকগুলোও তার আচার ব্যাবহারে সব কিছু ভুলে যায়।অল্পদিনেই স্কুলেও শিক্ষক থেকে শুরু করে সবার প্রিয় পাত্রে পরিনত হলএই ছেলেটি।প্রতিদিন বিকেলে বদর এখন স্কুল মাঠে ফুটবল খেলে হিন্দু ছেলেদের সাথে। রমার বান্ধবী বিথী প্রায় প্রতিদিনই দুই একবার রমাদের বাড়িতে আসে। আজও বদর এই সময় মাঠে ফটবল খেলিতেছে, এই ফাঁকে বিথী বদরের রুমে যায়, গিয়েই রমাকে বলে ঃএই রমা আমি বদরদার ঘরে রমা তখন ওদের বড় ঘরখানাতে ছিল, একদৌড়ে এসেই দেখে বদরের রুমে বিথী শুয়ে আছে ঃ বিথী তুই বদর দার বিছানায়! ঃ বদর নাই তাই ঃ দাদা দেখলে বকবে ঃ দাদাও নাই হি-হি-হি—হি অনেকক্ষন হাসাহাসি করে দুজনে।এক পর্যায় বিথী বলল, ঃবদরের বাবা,তোকে অনেক ভারি একটা মালা দিছে--তাই না? ঃ ওইটা মায়ের কাছে-যদি হারিয়ে যায়।চল তোকে দে্খাব এরপর,দুজনেই বদরের রুম থেকে বের হল, রম

রুদ্র ম আল-আমিন এর কবিতা, যন্ত্রণা

               " যন্ত্রণা "           রুদ্র ম আল-আমিন নিজেকে  নিজের মতন              বিসর্জন দিয়ে।                        আজি বেচে আছি                 এ -ওর ধার দেনা দিয়ে। কন্ঠনালী ছিদ্র আমার                               রপ্ত করেছি           ঝোড়ো হাওয়া উরতে চলা। আর্যছিলাম পালছেড়েছি              থাকতে দিসনি তোদের সাথে, তাই বলে কি হারিয়ে গেছি                সবার থেকে। বলছি কথা মোদের তরে বলছি নাকো ভুলে যেতে                                   যাচ্ছি তবে যাই। রাখবি মনে,, সকল যাতন রইবে প্রানে কাঁদবি তবে                 দিচ্ছি তোরে বর হাসবো আমি কাঁদবে তর, আপন যত, কার বা আপন কে করিল? বলতে পারিস?         নিখিল ভারত, রইল পরে কার বা তরে।

রমাদি ০৪

স্কুল ছুটি হয়েছে অনেকক্ষন কিন্ত তবুও হেডমাষ্টার মশাই চেয়ারে হেলান দিয়ে চোঁখ বন্ধ করে বসে আছেন। দপ্তরী নীলু বাহিরে বসে অপেক্ষা করছে কখন স্যার বের হবে।শেষমেশ প্রতিক্ষার প্রহর কাটলো, মাষ্টার মশাই বের হলেন, দপ্তরী পাশে দাঁড়িয়ে অফিস কক্ষ তালাও দিলেন, চাবি হাতে দিতেই দেখলেন , চোঁখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরতেছে।দপ্তরী ভাবল কিছু একটা বলি, আবার ভাবল না থাক। তবু আগ বাড়িয়েই বলল, ঃ বিপিনকে পাঠাবেন স্যার?ওর বোন রমা আর বদর, একই ক্লাসে পড়ে!  বিপিনকে ডেকে আনবো?বিপিনের ছোট বোন রমা একটু ব্যতিক্রমী,কিন্ত ওই একমাত্র বদরের সাথে কথা বলে।  নীলুর ধারনা বিপিনকে বদরদের বাড়ি পাঠালেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। নীলুর বকবকানি শোনার পর হেড মাষ্টার সাব কি যেন ভাবল, তার পরই নিলুকে বলল, ঃযাও ডেকে নিয়ে আসো!  নিলু দেরী না করে দ্রুত চলে গেলেন বিপিনদের বাড়ি। মাষ্টার মশাই ততক্ষণ স্কুল বারান্দায় পা- চারি করছিল।যেহেতু স্কুল এর পাশেই বিপিনদের বাড়ি, সেহেতু নীলুর খুব বেশী দেরী হল না বিপিনকে ডেকে আনতে।  বিপিন, স্যারের সামনে দাঁড়িয়ে নমস্কার করতেই স্যার বলল, ঃবদরদের বাড়ি চেন? ঃ স্যার, শুনেছি মাইল দশেক পশ্চিমে ঃতুমি কাল সকালে ওদের ওখানে একটু য