সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

উপ-৮

১০৫


ইয়াজ্জাদের এখন সুসময়, লোকজনের কাছে সময়টা এখন মুক্তিযুদ্ধ, আর ওদের জন্য এই সময়টা হচ্ছে আখের গোছানো।এরা নদীপথে নৌকা নিয়ে ওৎপেতে বসে থাকে,অপরিচিত  নৌকায় লোকজন দেখলেই তাহাদের সর্বশ্য কাড়িয়া নেয়। 

রমা,বদর এবং টুনি রাত্রিতে খাওয়া দাওয়া শেষে মায়ের মুখে  নানার বাড়ি মাটিকাটার গল্প শুনতেছিল।হঠাৎই বাড়ির বাহিরে বাজানের কন্ঠ শোনা যায়।টুনি বলল, ঃমা- বাজানে আইছে।
বদর দ্রত ঘর থেকে বের হল। বাজানের নিকট দাঁড়াতেই সে কহিল,
ঃ মাটিকাটা আর মানুষ নাইরে বাবা, গ্রাম ফাঁকা অইয়ে গেছে।পাকবাহিনী শয়ে শয়ে মানুষরে গুলি কইরা মারতাছে। 

টুনি বাবার হাত ধরে এগিয়ে চলল বাড়ির উঠোনে।এরপর, মা বদনায় পানি দিল অজুর জন্য। রমা কোন কথা কহিতে সাহস পাইতেছিল না।  বাবার জন্য গামছা নিয়ে তাহার পাশেই দাঁড়িয়ে রইল।অজু শেষ করেই জিজ্ঞেস করিল,
ঃতুমি এহানে কবে আইছো?তোমার মায় বাপে কোনে?তোমগোর গেরাম তো শুনছি জ্বালায়ে দিছে।
ঃ  ওনারা ভারতে গেছে, কিন্ত আমি যাই নাই। 
টুনির মা কহিল,
ঃমাইয়াডা গেল না, ওর বাপ মায় আইছিল।
ঃহ-- মায়া ছারুন যায় না। বদরে অনেক বছর ওগো ওহানে থাকলো, আমাগো চাইতে অরাই  বেশী আপন অইয়া গেছে অর। 

বাবা রমার সহিত তেমন কোন কথা কহিল না। গামছা হাত থেকে নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ঘরে গিয়েই এশার নামাজ আদায় করল। যুদ্ধের বিভিষিকা এখানে আরো প্রকট কারন এটা নদী অন্চল, তাইতো রাতে বেশ কয়েকবার দুরে কোথাও গুলির শব্দ শোনা গেল। টুনি ও রমাদির গুলির শব্দে ঘুম ভেংগে য়ায়। রমাদি জিগাইল,
ঃ তোমার ভয় করতেছে না?
টুনি কিছু সময় চুপচাপ রহিল।তারপর রমাকে কহিল,
ঃ দিদি, জানি না,আমরা এই হানে থাকতে পারুম কি না,তয় তুমি ডরাইয়ো না।

দিনে খুব একটা গুলি শব্দ ভেসে আসে না কিন্ত রাত নামলেই চারদিক থেকে মুহমুহ গুলির শব্দ  শোনা যায়। গ্রামের উঠতি ছেলেগুলো গা ঢাকা দিয়েছে অনেক আগেই। নদীপথে মিলিটারীদের আনাগোনা দিনেরবেলা বেশ চোঁখে পরে, ভয়ে নদীর দিকে কেউ তাঁকায় না। মাত্র কদিনেই এ গ্রামটিও একটি ভূতরে পরিবেশে রুপ নিতে থাকল। বাবা ঘর থেকে বেরুতে সাহস পায় না।বদর দা সারাদিন আত্বগোপন করিয়া থাকে। 

এখানে আসবার পর প্রতিরাতেই রমাদির চোঁখে বাবার চেহারা ভেসে উঠে। মনে মনে ভাবে বাবা ঠিকঠাক পৌছেছে তো।আজ অক্টোবর এর সাতাশ তারিখ। রমাদি তার ডায়েরিতে রোজই মনে ভিতর জমে থাকা কষ্ট গুলো লিখতেছে। 

সেই সময় রাতেরবেলা বদরকে ডাকিয়া বাবা কহিল, 
ঃ রইজার ওহানে নাও নিয়া কাইলি একবার যা,  কইবি বাজানে পাঠাইছে  -- একঝালা ধান নিয়া আয়, 







১০৬

বদর বাজানের দিকে অনেকক্ষণ তাঁকিয়ে রইল। তারপর মনে মনে নিজের প্রতিও ঘেন্না ধরিল। কিন্ত তাহাকে কিছুই বলিতে পারল না। কারন ঘরের খাবার না থাকলে যে কারো পুরুষালি ভাবটা নষ্ট হইয়া যায়।এই সংসারে বর্তমান অবস্থাও ঠিক তেমনই। রমাদি টুনির নিকট ইহা জানিতে পারিয়া মাঝরাতে বদরদার কাচারী ঘরে প্রবেশ করিল।বদর তাহাকে দেখিতে পাইয়া কহিল,
ঃরমা-এত রাতে তুমি----!
রমা চৌকিত বসিয়াই বলল,ঃবদর দা আমার কানের দুল ওটা নেবে?
ঃনা, ইয়াইজার কাছেই যাব, বাবা শুনলে খুব রাগ করব।
ঃআমিও যাব, নেবে না আমায়?
ঃআমি তো ফজরের আজান কালে বের হব, 
রমা এবার চৌকি থেকে উঠে দাঁড়াইল কিন্ত যখন তাহার বুকে মাথা নোয়ালো। তখন আর কিচ্ছু বলতে পারল না।রমাদি কহিল
ঃআমার বদরদাকে ছেড়ে একমুহুর্ত কোথাও থাকতে চাই না
তারপর অনেকক্ষণ কাটিয়া গেল। বদর কহিল,
ঃবাজানে ঘরে, তুমি যাও -মরে যদি যাই তবে তোমাকে সংগে নিয়েই মরবো। ফজর কালে উঠিয়ো।

মুহুর্তে রমাদির মুখখানা অানন্দে ভরিয়া উঠিল, আর এরপর তাহাকে  আরো শক্ত করিয়া ধরিল, যেন ছাড়িবার কোন লক্ষন দেখা যাইতেছিল না। রমাদির কপোলে চুম্বন করিতেই রদরকে ছাড়িয়া টুনির ঘরে চলিয়া গেল।টুনি ঘরে প্রবেশ করা মাত্রই জানিতে চাহিল,ঃদাদার কাছে
ঃহি-হি-হি 

শেষরাতে বদর ও রমাদি যখন নৌকায় উঠিল, মা রমাকে বুকে জরিয়ে ধরে কাদতে লাগল, বাজানে কহিল,
ঃকাইন্দো না ওরা তো কাইলই আইবো মায়ের আচল ধরে টুনি ঠায় দাড়াইয়া রহিয়াছে।নৌকা লইয়া ইয়াইজাদের বাড়ি যাইতে যাইতে অনেক কথা হইল, তার বেশির ভাগই রমার মা আর মেষোকে লইয়া। ইয়াইজাদের বাড়ি পৌছাতে ভাটির পথ, তাইতো ভোর হইবার সাথে সাথে তাহাদের অাঙগিনার ঘাটে নৌকা পৌছাইল।ইয়াইজার মা, রমাকে দেখেই তাহার গলা জরিয়ে ধরল।কহিল,
ঃমাকে তগো মনে অইলো, কয়দিন যাইবার দিমু না
ঃমা দোস্ত মিয়া
ঃওরা আহে নাই, তয় আইবার সময় অইছে।তর বাপের শরীর ভালা আছে। টুনিরে নিয়া আইলিই পারতি।
ঃ মা--বাজানে তো বাড়ি থেকে বেরই হয় না। রাতে আমাকে বলল যা, তাই বাজানের কথা ফেলতে পারলাম না।
ঃ আগে ঘরে নু - তগো ঘরে খায়োন আছে?  তর কাকা মরার পর আর কেইরবাত যাইনারে বাজান। তয় যামু, যুদ্দু শ্যাষ অইলে তগো বাইত যামু।







১০৭


রমা ইয়াইজার মায়ের কথা বেশ মনোযোগী হয়ে শুনিতেছিল। ঘরের মাচা থেকে নারিকেল,মুড়ি আনলো। কহিল,
ঃনে নারকোল ডা ভাং, গ্যাদা আইলি গুর আনামু। বউ পিটা বানাইবার পারোস তো।তগো উপিল মা অমু,
(রমা লজ্জায় লাল হইয়া মুহুর্তে চেহারাটাও ফ্যাকাসে হইল), শরম পাইসনা -আইজা তগো কতা কইছে।
ঃমা -সত্যি আমায় মেয়ে বানাবেন তো?
ঃমায়াডা পাগলি নাহি রে, ওই বদর তর বাপে তরে কয় নাই।
ঃমা হাতদা দাও 
ঃওইডা থো আমার কথা হুন।তর বাপে তরে কয় নাই?
ঃ মা আমি বুঝতে পারতেছি না, কি বলতে চাইছো 
ঃকস কি, ভা'য়ে হেইদিন আইছিলো, কইলো রমারে হ্যার পছন্দ,তর বউ করবো, যুদ্দু থামলেই তগো বিয়া দিবো।
ঃবাবা বলছে,বাবা কি আমাদের বিষয়ে কিছু জানে। 
রমা শোনা মাত্রই হাসতে লাগল। বদরও রমাদির মুখের দিকে তাঁকিয়ে হাসতে লাগিল।রমা কহিল,
ঃ বাবা তো জানেই তবে আর দেরী করব না, আজই বিয়ে দাও
ঃআইজা আহুক দেখমু নে

বদর হাত দা দিয়ে বেশ কয়েকটা নারিকেলের খোসা ছাড়াইল, এর মধ্যেই বাড়ির ঘাটে ভিড়ল ডাকাতীর নৌকা। নৌকা থেকেই ইয়াইজা কহিল, 
ঃদোস্ত মিয়া কহন আইছোন।
ঃআপনে নৌকা থেকে নামেন তারপর বলতেছি,
ঃবাজানে পাঠাইছে তো অয় জানি,  বিশা ভাই দোস্ত মিয়ার বাইততে যায়োন লাগবো তারাতারি খাইদাই সারবি। এক নাও ধান দিয়া আয়। দোস্তরে কয়দিন যাইতে দিমু না, বাজানরে কইস।
ডাকাতী পেশা রমাদির পছন্দ না। সে জানে ডাকাতরা হিংস্র,অন্যের মালামাল লুট করে কিন্ত এক মুহুর্তেই ইয়াজার এই ব্যাবহার তাহাকে তার কাছে বিশাল বড়মাপের একজন মানুষ মনে হইল। কেননা এত পরিশ্রমের ডাকাতি মালামাল তাহা মুহুর্তে নির্দেশ দিল বদরদের বাড়ি পৌছে দিতে। নারিকেল আর মুড়ি খেয়ে বিশা নিজেদের নৌকা়র মালপত্র নিয়ে রওনা হইল বদরদের বাড়ি। আর ফিরে আসল ঠিক  সন্ধ্যার সময়। কিন্তু  রাতে শোবার জন্য একটা ঘর দরকার, তাইতো বিশাকে বদরদের নৌকা দিয়ে পাঠাইল অনত্র পরিচিত এক বাড়িতে রাতটুকু শুয়ে থাকতে। বিশা ভাইদের মধ্যে ছয় নম্বর। রাতে মা নারকেল,গুর,দুধ দিয়ে নাস্তা বানালো।গুুরের নাস্তা খাওয়ার পর গল্প করতে করতে অনেক রাত হলো তারপর এক একে সবাই যে যার ঘরের দিকে চলে যাইতেছিল। 




১০৮


মা বদরকে বললঃদুইজনে বিশার ঘরে হগা
ইয়াইজা এই যে কথাটা শোনামাত্র আস্তে আস্তে ঘর থেকে বাহির হইয়া ওর ঘরে চলিয়া গেল।ঃমা ও তোমার কাছে থাক
রমাদি মাকে কি বলবে তা ভেবে পাচ্ছিল না
ঃ বউ বদরের নিয়া যাও  বিছনা ঠিক করে শুয়ে থাকো গা ঃমা আমি 
ঃআহোতো আমার হাতে

সোওয়ারা জন্য মা নিয়ে গেল বিশার ঘরে। মায়ের ঘর থেকে মাত্র কুঁড়ি ফুট আড়াআড়ি। এই বাড়ির পূর্ব পাশে তিনটি ঘর এবং পশ্চিম পাশেও তিনটি ঘর। আর উত্তরপার্শের ঘরটিতে মা থাকেন।আমাদের জন্য যে ঘরটি দেয়া হলো,তার উত্তর পাশে মায়ের ঘর এবং দক্ষিণে ইয়াইজার থাকার ঘর।বিছানায় একটিমাত্র বালিশ।ছোনের ঝাটা দিয়ে মা বিছানা পরিস্কার করিয়াই চলিয়া গেল। বিছানায় বসে  বালিশ হাতে নিতেই মনে হইল যেন কাঁথার নিচে   শক্ত কিছু আছে কয়েকটি কাঁথা দিয়ে স্তর করা বিছানা উঁচু করতেই চোঁখে পরল,একটি বন্দুক।আর তার পাশেই ডজনখানেক 2 ইঞ্চির মতো লম্বা লম্বা গুলি।লম্বা রাইফেলটি দেখেই রমাদি ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগিল।
ঠিক সেই মুহুর্তে বদর ঘরে প্রবেশ করিয়াই কহিল,
ঃ সাবধান ওতে হাত দেবেনা
ঃআমার খুব ভয় লাগছে, বালিশের নিচে বন্দুক  এরা পুলিশের ভয় পায়না। 
ঃপুলিশ হা-হা-হা-হহহ, ওরা কাউকেও ভয় পায় না। বরং পুলিশ তারাই ভয় পা্য়।
ঃডাকাত দেখে পুলিশের ভয় বাববা ---আচ্ছা তুমি বন্দুক  চালাতে পারো,
ঃআমি চালাইনি তবে কিভাবে গুলি করতে হয় ওটা আমি জানি।
ঃআমায় দেখাবে-
ঃআমি ওগুলোতে হাত দিতে চাই না 
ঃতবু একবার আমার হাতে দিয়ে দেখাও না ---মিথ্যে মিথ্যে
ঃ রমা পাগলামী করো না। আমি ভাবছি তুমি আর আমি একই বিছানায় শোবো কি করে? 
ঃবরকে নিয়ে শুইব আমার কোন চিন্তা ভাবনা নাই, বাজানে তো জানেই, বর বউ খেলবে তো--হু-হু-হুহ-
 রমাদি নিচের ঠোটখানি কামরে ধরে হাসতে লাগল, হ্যাজাক লাইটে ঘরে প্রচুর আলো ছড়িয়ে পরেছে। শরীর হ্যাজাকের তাপে দুইজনই ঘামে ভিজে যাইতে লাগিল। কিন্ত বর বউ, বদর একথা শুনতেই মুহুর্তে চুলগুলো ভিজে কপালের ঘাম নাক মুখ ভিজে যাইতেছিল।  মূর্তির মতন হয়ে গেল, রমা আবারো কহিল,
ঃ  আমি কি পরনের কাপড় গায়ে রাখব?তুমি কিন্ত গরমে ভিজে যাইতেছ। হাত পাখা নাই,জামাটা খুলে ফেল।
ঃমা হাত পাখা আছে কি?









১০৯


ইয়াইজার মা ওঘর থেকে জানান দিল, যে চৌকির নিচে খুজে দেখতে। রমা চৌকির নিচে তাকাতেই দেখল, হাতে বোনা সুতার পাখা, কিন্ত ধুলো বালিতে ভরপুর। কাঠের চেয়ারে রাখতেই দেখল  লম্বা একটা কাঁচের বোতল, কিন্ত বোতলটা্ দেখতে যেন অবিকল মেয়ে মানুষের মতোন। রমা জিজ্ঞেস করল,
ঃএর মধ্যে কি জল?ঃনা ওটা বিদেশী মদ তুমি ছোবে না। 
ঃএকটু খেলে কি কিছু হবে?
ঃরাত অনেক হয়েছে কথা না বাড়ায়ে শুয়ে পর। আমি চেয়ারে বসেই রাতটা কাটায়ে দেবো -
ঃতুমি আমার পাশে শুইবে না। বদর দা- সেই ছোট থেকে তোমায় চিনি জানি। আমায়ও তো তুমি চেন। খুব বেশী হলে বড় জোর তোমাকে একটু না হয় জরিয়েই ধরব। 
ঃ আমি ভাবছি যদি তুমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পারো।
ঃতোমার বুকে মাথা রাখলেই দেখবে ঘুমিয়ে পরেছি।

এখন বর্ষাকাল এই বাড়িটির  চারদিকে জল সরোবরে। আশপাশের বাড়িগুলো অন্তত এখান থেকে আনুমানিক হাজার গজ দুরে। নৌকা হল বর্ষাকালের প্রধান বাহন। পোষা নৌকাটি ঘাটে বাঁধা। বাইরে ঝিরঝির বাতাস। এইঘরের  মধ্যে হ্যাজাকেন আলোতে  ঘরখানা আরো গরম হইয়া গেল। রমা হাত পাখা দিয়ে বাতাস করিতে ছিল।আমি শুইতে যাচ্ছি না বলে, ও শুইতে চাইছে না। 
ইয়াইজা, মা, মন্টু, ঝন্টু, রাজা, কামাল, জামাল, কারো ঘরেই আর আলো জ্বলছে না। এখন ওরা হয়তো সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। বাহিরে জলের মধ্যে দুরে কোথাও ডাহুকের প্রতিধ্বনিত শোনা যাইতেছিল।এই চার বিঘের বাড়িটি এখন নিরব। বদর চেয়ারে বসে আছে খালিগায়ে জামা অনেক আগেই খুলে ফেলেছিল। রমা কাঠের চৌকিতে বসে তাহার বুকের লোম গুলো দিকে তাঁকিয়ে হাতপাখা ঘোরাইতেছিল কিন্ত নিজের পরনের সাদা কামিজ ঘামে  ভিজে একাকার।
বদরে ভাবল,ওর গায়ের কাপড় খুলে ফেলা দরকার। পরনের গাঢ় ব্লু পায়জামা  অর্ধেক ভিছে গেছে। চোঁখে ঘুম ঘুম ভাব।বদর কহিল, 

:রমা তোমার গায়ের কাপড় ঘামে ভিজে গেছ।একা এখানে থাকতে পারবে? 
আমি না হয় নৌকায় শুয়ে থাকি।ঘরি দেখেছো এখন রাত পৌনে একটা, ঘন্টা তিনেক পর ফজরের আযান দেবে।
ঃএক পা নরবে না। আমি খালিগায় থাকলেও লজ্জা করবে না। বরের সামনে কেও লজ্জা পায়। এই আমি খুলে ফেলতেছি।

রমা কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যেই উঠে ঘুরে দাঁড়াল, তখন ওর শরীরে সাদা কামিজ ঘামে আটকে গিয়েছিল।







১১০

 ওটা খুলবার সময় মনে হইতেছিল জামাটা হয়তো ছিড়েই যাবে।কোনমতেই ওটা মাথা দিয়ে বের হইতেছিল না।রমাদি কহিল, ঃ জামাটা একটু খুলতে সাহায্য কর না--

পেছনের অর্ধপিঠ বেরিয়েই জামায় ঢেকে আছে মুখমণ্ডল। হাত দুটোও আটকে আছে জামার হাতাতে।বদর পিঠ থেকে কোমর অবধির দিকে তাঁকিয়ে হতভম্ব হয়ে যাইতেছিল। ঃবদর -দা ---
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে ওটাকে টেনে তুলল এরপর রমাদি জামাটি ছুড়ে মারল বিছানায়। বদর এর আগেও একবার এরকম অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিল। কিন্ত সেসময় তাঁর শরীরের দিকে ফিরেও তাঁকায়নি। কিন্ত আজ রমাকে এঅবস্থায় দেখে মুহুর্তে নিজের শরীরখানি যেন ভূকম্পন অনুভূত হইল।

বদর,পূজাপার্বণে দেবী মূর্তি বানাতে দেখেছে এবং তাহা রং করতেও। পালেদের দেখেছে দুহাত দিয়ে মূর্তি মসৃন করতে । নিখুঁত মাটির মূর্তি তখন যেন মনে হইত  ওর মধ্যেও প্রান আছে । কিন্ত আজ রমাদির জীবন্ত শরীর যেন তাহার নিকট মাটির মূর্তিই মনে হইতে লাগিল। রমাকে বিথী দুগগা কইতো, বদর দেখল রমা কারিগরের বানানো দূর্গার চেয়েও মসৃন তাহার দেহ। মাত্র এক হাত আড়াআড়ি দুজন মানুষ।রমা থরথর করে কাঁপছে। তাঁহার নিজের শরীর থেকেও ঘাম ঝরছে বারিপাতের মতন। কিন্ত মনের মধ্যেে একটা ভয় সন্চালিত হইতে লাগিল। রমা যেন দেবী দূর্গার রুপধারন করিয়া আজ তাহার সন্মুখে দাড়াইয়া আছে। 
 চোঁখের দিকে তাঁকাতেই  জরিয়ে ধরল। কপালে চুমু দিতেই দুর থেকে কারা যেন পরপর চার রাউন্ড গুলি ছুড়ল এই বাড়িতে। রমা শক্ত করে ধরে চিৎকার করল,
ঃবদর দা কে যেন মেরে ফেলতে চাইছে আমাদের।

রমাদির শরীর থেকে ছিঁটকে সরে দাঁড়াতেই ইয়াইজা চেঁচিয়ে উঠল, 
ঃএই কামাল গুলি বাইর কর,,, সালাগো আইজ গুলি পোতা দিয়া দিমু
দরজা খুলতেই চোঁখে পড়ল ওরা ছয় ভাই  বন্দুক দিয়ে একটার পর একটা গুলি ছুড়তেছে বাড়ির চতুরদিকে।দুর থেকে মাঝে মধ্যে দু একটি গুলি আসতে ছিল এবাড়িতে কিন্ত ওগুলো ঘরের টিনের বেড়ায় লেগে তাহা বিকট শব্দ হইতেছিল।বদর,ইয়াইজার মা, আর রমা খরের দারে বসে পরল। তখনো রমাদি বদরের  হাতটি শক্ত করে ধরে আছে। 

ইয়াইজারা এস,এল,আর- দিয়ে পাগলের মত গুলি ছুড়তে লাগল। প্রতি ম্যাগজিনে কুঁড়ি রাউন্ড গুলি। ভোর হতে হতে কয়েশ রাউন্ গুলি ছুড়ল এরা। ফজরের আযান দিতে বাহির থেকে আর কোন গুলি এবাড়ির দিকে আসল না।। ইয়াইজা জন্টুকে বলল,,
ঃমাগির ছাওয়ালরা পালাইছে যা ডুব দিয়া আয়,দেখমুনি কোন হালার পুতেরা গুলি ছুড়তাছিল ।











১১১

গোসল করতে নৌকাটার কাছাকাছি যেতেই চোখে পড়ল দুরে দুরে কিছু লোকজন দেখা যাইতেছে।  তারা একেক যায়গায় চার,পাঁচজন করে হাটু পানিতে দাড়িয়ে থাকতে। মন্টু রাইফেল নিয়ে বাড়ির ঘাটের কাছে কলাগাছের আড়ালে দাঁড়াল আর বলল ঃআইজা এইহানে  আয় 
ইয়াইজা,মা,আর বদর এগিয়ে গেলেও রমাদি যাইতে সাহস পেল না।আইজা কহিলঃ দোস্ত বন্দুক টা ধরেন, আমি দেখতাছি 

হাত দিয়ে ধরতেই দেখল, এখনও এস,এল, আর রাইফেলটি আগুনের মত গরম।।কলাগাছের সাথে দাড় করানোর চেষ্টা করিতেছিল। ইয়াইজা এবার ওর ঘর থেকে নিয়ে এল একটা এম টু স্টেনগান। ট্রিগার চাপতেই ঝাকে ঝাকে গুলি বের হল তা থেকে।
ঃ দোস্ত হালার পুতেরা আর আগাইব না, এইডা ওগো নাই।
ঃকারা এরা?
ঃমুক্তি বাহিনী এইবার বুঝলেন, দেখতাছোন না আমাগো বাড়ি ওরা ঘিরা রাখছে। অহন বাড়ি থোন বাড়ান যাবো না। চিন্তা কইরেন না গুলি ফুরাইবো না
  যাইন ডুব দিয়া দিদিরে নিয়া হুইয়া থাকোনগা। 
ইয়াইজা স্টেনগান হাতে দাঁড়িয়ে রইল ততক্ষণে তাদের ভাইয়েরা একজন একজন করে ঘাটে গোসল করলেন। সবশেষে  রমাদি মায়ের আঁচল ধরে নামলেন জলে। কারন নৌকের উল্টোদিকে পূর্বপাশে পুরোনো আমগাছর আড়াল, এখান থেকে তাদেরকে কহ দেখিবার ব্যাবস্থা নাই।স্নানের পর মা গুর মুরি নারিকেল দিল,  রমাদি ও বদরের সারারাতের ধকল সইবার শক্তি ছিলনা।

 বিছানায় মাথা দিতেই রমা বদরের বুকে মাথা রেখে নিরবে চোখের জল ফেলতেছিল। কিন্ত বদর বুঝতে পারছিল না, কিভাবে নিজেদের মুক্ত করবে। এই দুজন মানুষ একে অপরের খুব কাছে কিন্ত  কারো দিকে কারোর নজর নাই।
অনেক সময় অতিবাহিত হইবার পর রমা বলল
ঃ বদর দা ---মা বাবাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে, কাকাবাবু, টুনি,ছোটকা--আমার মনে হয় না আমি আর ওদের দেখতে পারবো। কিন্ত আমি আক্ষেপ করি না কারন আমি তোমার কাছেই থাকতে চাই বাচা মরা সব এক সাথে। বদর দা আমরা বেচে থাকব তো----যদি মরে যাই দাহ্ করো না, তোমাদের যা নিয়ম সেটাই করিও।

 বদরের চোঁখ দিয়ে টিপ টিপ করে জল ঝরতে ছিল। আঠারো বছরের এই সাবালিকা মেয়ে। তাঁকে সান্তনা দেবার ভাষা তাহার জানা নাই।তাইতো তাহার কন্ঠোরোধ করবার জন্য বুকের মধ্যে টেনে নিতেই রমাদি অবুঝ শিশুর মত গা এলিয়ে দিল।












১১২

দুজনে ঘরের কপাট বন্ধ করিয়া দুপুর অবধি ঘুমিয়ে আছে। বদরের ঘুম ভেংগে গেছে অনেক আগেই, কিন্ত রমা বামহাতে মাখা রেখে এখুনও ঘুমিয়ে আছে।তাইতো তাহার বিছানা থেকে উঠা সমভব হইতেছে না। তা ছাড়া রমাও তাহার বামহাত দিয়ে জরিয়ে ধরে লেপ্টে আছে।  বা হাতে ঘরিতে সময় দেখতে নরে উঠায় রমাদির হঠাৎ ঘুম ভেংগে গেল। বলল
ঃ ক'টা বাজে ঃদুপুর আড়াইটা ঃএখন বাড়ি যেতে পারব?
ঃওঠো দেখি বাইরের অবস্থা কেমন, তবে মনে হয় না যেতে পারব,ওরা তো উঠোনেই আছে কিন্ত বিশা ফেরে নাই,,, তার মানে বাহিরে গেলেই বিপদে পরবো। ঃখাবার খাবে না?
ঃসকালের গুর মুরি নারকেল ওথেকে কিছু খেয়ে নেব
তুমি খাও গে,, যাও --মার কাছে জিজ্ঞাস করিও আমরা এখান থেকে পালাতে পারব কিনা।
ঃখেতে না গেলে মা জিজ্ঞেস করবে, কি বলব তাকে ঃ বলবে ঘুমে আছে পরে খাবে। 


বিশা এখনো বাড়ি ফেরেনি, উঠোনে ওরা ছ ভাই রাইফেল তাক করে বসে আছে। ঘরের দরজা খুলতেই ইয়াইজা কহিল,
ঃদোস্ত মিয়া --

চোখদুটো লাল টকেটকে। মা  দক্ষিণের ঘরের চৌকাঠে দুই পা দুদিকে দিয়ে বসে আছে। চোঁখে পরল,মায়ের হাতের কাছেও একখানা এস,এল,আর রাইফেল।  মনে হইতে লাগিল, মা হয়তো অস্র চালাতে পারে, ঝন্টু মন্টু এই দুই ভাইি বিবাহিত। ঝন্টুএকছেলে মায়ের সাথে নানার বাড়ি ওরা। মন্টুর বউ গর্ভবতী বাচ্চা প্রসবের জন্য সেও তার বাপের বাড়ি।
সাত ভাইয়ের ছয় ভাই-ই উঠোনে রাইফেল নিয়ে দাঁড়িয়ে,
ইয়াইজার নিকট দাঁড়াতেই কহিল,
ঃএস,এল,আর চালাইতে অইব। শেখোন লাগব না, পুরা বিশটা কইরা গুলি খালি টানবেন।শও খানেক মুক্তিবাহিনী বাড়ি ঘিরা আছে। বাচোনের কোন রাস্তা নাই।
ওগো নাইন এম (নাইন এম টু)আছে  হাত গ্রেনেডো ---দোস্ত মিয়া আমরা মরার জন্য রেডি আছি, তয় রমাদিরে কেমনে বাচামু আপনেরে কেমনে বাচামু---
ঃআত্বসমর্পন করবেন যদি এতে আমরা বেচে থাকতে পারি।
 ঃবিশা বাইচা গেছে ওয় বাড়ি নাই। কিন্ত ওর অইয়াই আপনার নরতে অইব।
ঃআমি হাজারবার মরতে রাজি কিন্ত দেশের জন্য না হয় একবার মরলাম-- 
ঃদিদিরে ---
ঃ না হয় ওকে নিয়ে একসাথেই মরব।

দুপুরে এ বাড়িতে চুলো জ্বলায়নি। উঠোনে মাটির কলসে জল , তারপাশে একবস্তা চিড়া রাখা আছে, বস্তার মুখটি খোলা কিন্ত মনে হইল কেও তাহা মুখেও দেয়নি।
 ঃঝন্টু  মন্ট ওরা কিছু খেয়েছে?
ঃখায়োন কি আর পেটে যাইব,, দিদির জন্য চিরা পানি নিয়া যান, রাইতে ঘরে থাকুন যাইব না, খ্যারের পালাডার ওইহানে বইসা থাইকুন।










১১৩

জামাল আর কামাল এস,এল,আর নিয়ে ওত পেতে আছে আড়াআড়ি দুটো আম গাছের আড়ালে।বদর একমুঠ চিড়া মুখে দিয়েই পিতলের গ্লাসে জল ভরল। ঢকঢক করে গিলে ফেলল দ্রুত। মৃত্যুর সঙকা হাতছানি দিয়ে ডাকছে। নিজের অজান্তে চোঁখে  জল নেমে এল।এরপর চোঁখে মুছতে মুছতে ঘরে ফিরে এল। রমাদি চৌকিতে বসে উঠোনের সমস্ত কথা আড়িপেতে শুনেছে। মলিন মুখে তাইতো বদরকে বলল,
ঃ বদর দা আমি জানি, এ বাড়িতে আর কেউ বেচে থাকবে না। হয়তো আজ রাতেই---
ঃসাতরে পালাতে পারলে চেষ্টা করতাম, না হয় জলে ডুবেই মরতাম। কিন্ত তার আগেই গুলি করবে?

বদরের চোঁখে জলমল করিতেছিল, কিছুই আর বলার নাই। তাইতো রমাদিকে এইপ্রথম তার দুইহাত দিয়ে জরিয়ে ধরল। কিন্ত রমা কথা বলতেই লাগল
ঃবদর দা আমরা তো মরে যাবই আমার শেষ স্বপ্নটা পুরন করে দেবে?
ঃকি??ঃআসবার সময় মায়ের সিধুরের কৌটা নিয়ে এসেছি,আমার কাছেই আছে,ওথেকে একটু দিয়ে দাও না আমায়। সত্যি বলছি ওটা আমার কাছে আছে।
বদর অনেকক্ষণ চুপ রহিল, তারপরই ঘর থেকে বেরিয়ে আবার উঠোনে গেল। মিনিট পাচেক পর দোস্ত আর ইয়াইজার মাকে নিয়ে এল ঘরে। 
ঃ দোস্ত মিয়া আমি ওর শোষ স্বপ্ন পুরন করতে চাই,
মা বললঃ কি কস বাপজান ঃতুমি দাড়াও এখানে
এরপর ইয়াইজার মা রমাদিকে বুকে জরিয়ে ধরে অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করিল। ইয়াইজা কহিল,ঃ মা ওরে নিয়ে আয় আমি দুয়ারেই অাছি

ইয়াইজার লাল চোঁখে  যেনে লবনাক্ত জল টলমল করিতেছৈ।বাড়িটি যদিও মৃত্যুপুরীতে পরিনত তবু ইয়াজার হাসিমুখে ঘর থেকে বাহির হইল।বদর ফ্যালফ্যাল করে তাঁকিয়ে রইল। নিরবতা যেন তাহার কালের শাক্ষী হইয়া গেল। মা কহিল,বদরকে উঠোনে দাড়াইতে।অনেকক্ষণ এই দুটি মেয়ে মানুষের মধ্যে কি কথা হইল তা বোঝা গেল না। কিন্ত আসরের আযান দিবান কালে রমাকে নিয়ে মা বাহির হইল।উঠোনে মা তার ছয় ছেলেকেই ডাকলেন, 
তারপর সিধুরের কৌটা মা বদরের হাতে তুলিয়া দিলেন।রমাদি যদিও বদরের চোঁখের দিকে তাঁকিয়ে আছে কিন্তু  মনে হইল তাহার মধ্যে কোন হুশ নাই। বদর তাহার সিথিতে সিধুর ঢেলে দিতেই রমাকে জরিয়ে ধরে চিৎকার করিয়া কাদিতে লাগিল। ইয়াইজা মায়ের গলা জরিয়ে ধরে নিরবে কাদিতে লাগিল।
হিংস্র ডাকাত সেও যে একজন মানুষ তাহা মর্মে মর্মে উপল্দি করিলাম। 






১১৪

অনেকসময় অতিবাহিত হইয় গেলা। আস্তে আস্তে সূর্য পশ্চিমে হেলান দিতে লাগল। মনোবল ভেংগে গেছে সকলেরই, জীযন মৃত্যুর মুখোমুখি তাহা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। বদর আর রমাদি মায়ের পা ছুয়ে আশির্বাদ লইল, 
ঃসারাদিন ছুনছান নিরবতা কাটলেও রাত নামার সাথে সাথে মনে হল খুব কাছে থেকে মুক্তিফৌজ হ্যান্ডগ্রেনেড ছুড়ছে বোমার স্প্রিংযুক্ত  আলোর বিস্ফারণ হইতে লাগল রমা আর বদর একে অপরকে জরিয়ে ধরে নেমে পরল  পানিতে। কিন্ত মুখে টু শব্দ করিবার মত সাহস পাইতেছিল না। আকাশ ঝকঝকে পরিষ্কার। চাদের আলোতে পরিষ্কার দেখা যাইতেছিল সবকিছু। সাঁতরে যাইবার যো নাই কেননা নদীতে জল সরোবরে। সেই সমসাথে উজান থেকে নেমে আসা জলের তীব্র স্রোত। বদর যদিও নদীতে দক্ষ সাতারু কিন্ত সে ভাবল রমাকে নিয়ে সাঁতার দিলে হয় স্রোতে ভেসে যাবে। নয়তো দুজনেই তলিয়ে যাবে। টানা গোলাগুলি চলছে দুপক্ষ ইতিমধ্যে গ্রেনেড বিস্ফারণে মায়ের ঘরে আগুন লেগে গেছে।আগুনের লেলিহান শিখা ধোয়ার কুন্ডলী পাকিয়ে চলছে উপরের দিকে। আগুনের ধোয়া থেকে মাত্র হাত চল্লিশেক দুরে জলের মধ্যে এরা দুজন একে অপরকে আঁকড়ে ধরে আছে। আগুন ধরবার পরই  ইয়াইজা গুলি চালাতে নিষেধ করল, আনুমানিক রাত তখন বারোটা।ইয়াইজা হাক ছাড়ল,,
ঃহেই হেই হেই আমরা গুলি কো---রু--ম  না---- তোমরা আইতে পারো। হেই----হেই---হে--এই।আমরা বন্দুক ছাইরা দিছি।
দোস্ত উইঠা আহো 

ইয়াইজা  ভাইদের নিয়ে উঠোনে দাঁড়াইল মা ইয়াইজার পেছনে, ইয়াইজা কহিল,
যদি কেউ বাইচা থাকস এর শোধ নিস আর কিছু কইলাম না।

পনের মিনিটের মধ্যেই  চারদিক থেকে পাঁচ কিম্বা ছয়টি নৌকায় ত্রিশজনের মতন মুক্তি বাহিনী একটি দল, তাহাদের ঘিরে ধরল। বদর ভেজা কাপড়ে ওদের থেকে এক কোনায়  দাঁড়াইল। কিন্ত রমাদি তখনও জল থেকে উঠে নাই। রমাদি বোধহয় জল থেকে উ্ঠতে চাইছিল আর ঠিক সেই মুহুর্তেই একজন মুক্তিফৌজ তাহাকে লক্ষ করিয়া গুলি চালাইল,বদর ঝাপটে ধরল তাহাকে ঃ ওরে মারলি জানোস ও কে? হুহ করে কাদতে লাগল।
ঃবদর তুই এখানে বদর-- বদর-বদর

বদর মুহুর্তে অজ্ঞান হইয়া গেল।ইয়াইজা এইবার জিগাইল,
ঃ ওরে তুমরা কেমনে চেন?
ঃও আমগো বাড়িতে থাইক্যা পড়ালেখা করছে।




১১৫

ঃ আমরা মরবার লাইগা বইসা আছি  কিন্ত তুমি জানো ---কারো মাইরা ফালাইছো --ঃ তোমাদেরই কেও
ঃও তোমার বোইন,
বিপিন রমা বলিয়া তিৎকার করিয়া কাদিতে কাদিতে মুহুর্তে জলের মধ্যে নামিয়া পরিল।

মুক্তিযোদ্ধারদের একটি দল বদর ও ইয়াইজাসহ ছয় ভাইকে তাদের নিজ নৌকায় ঊঠাইল,নৌকায় তুলো হাত ও পা বাধা হলো প্রত্যেককে, কিন্ত তাহারা এতে কোন ওজোর আপত্তি করিল না। বদর কহিল,
:ঃ আমি রমাকে শেষবারে মত একবার শুধু দেখতে চাই, 

বেশ কয়েক বলিলেও তাহারা তাহার কথার কর্নপাত করিল না।ইয়াইজাদের বাড়ি থেকে নিয়ে চলল মাঝ যমুনা নদীতে
 ঐ সসময় আকাশের চাঁদ ডুবিয়া অন্ধাকার ঘণিয়ে যাইতেছিল। বদর ও ইয়াইজা উল্টোদিকে মুখ করে বসা, অন্ধাকার হওয়ার সাথে সাথে তাহার পেছনে বাধা ডান হাতখানি দিয়ে  বদরের হাতের দরি খুলিতে লাগিল। হাতের দরি খুলিবার পর কানের কাছে মুখ লাগাইয়া ফিসফিস করিয়া কহিল 
 ঃ এহানে পানি কম লাফ দেন।

একমিনিটের মধ্যেই বদর নৌকা থেকে লম্ফ মারিল।মুক্তিবাহিনী এই ক্ষুুদ্র দলটি অনেক খোঁজাখুঁজি করিয়াও তাহাকে আর খুঁজিয়া পাইল না।অবশেষে ইয়াইজাদে ছয় ভাইকে হাতপা বাধা অবস্থায় মাঝ নদীতে বিসর্জন দেয়া হইলে জয় বাংলা শ্লোগান দিতে দিতে তাহারা চলিয়া গেল।


বদর একজন দক্ষ সাঁতারু ছিল, তাইতো অন্ধকারে সে জলের মধ্যে মাছেদের ন্যায় 
এক ডুবে অনেকদুর গিয়াছিল। কিন্ত যখন পায়ে আমন ধানের মত মনে হইতে লাগিল পাইল তাহাতে আত্বগোপন করিয়া পানে  বাচিল, কিন্ত সে দুর থেকেই দেখিতে পাইল ইয়াইজাদের বাড়িটির লেলিহান শিখা। রমাদির কথা ভাবিতে ভাবিতে জলের মধ্যে সারারাত কাটিল।
ভোর হইবার কালে মাছ ধরিবার লোকজন তাহাকে দেখিয়া জেলে নৌকায় উঠাইল। 


       সমাপ্তি 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

রমাদি ১০

স্কুলে নিয়মিত এই পোশাকই পরে।বিপিন রীতিনীতিও সব শিখিয়ে দিল।বিপিনের বোন রমাও পাঠ্যে হিন্দুধর্ম শিক্ষা-র যেকোন বিষয় না বুঝলে, তা আলোচনার মাধ্যমে সহযোগীতা করতে থাকে আজকাল বদর, বিপিনের কাজ কর্মেও সহযোগীতা করে। রমার মা,বদরের এই আচার ব্যাবহারে নিজেও গর্বিত। শুরু থেকেই বিপিনের মাকে, বদর মা বলেই ডাকে।গোঁরা সমাজের লোকগুলোও তার আচার ব্যাবহারে সব কিছু ভুলে যায়।অল্পদিনেই স্কুলেও শিক্ষক থেকে শুরু করে সবার প্রিয় পাত্রে পরিনত হলএই ছেলেটি।প্রতিদিন বিকেলে বদর এখন স্কুল মাঠে ফুটবল খেলে হিন্দু ছেলেদের সাথে। রমার বান্ধবী বিথী প্রায় প্রতিদিনই দুই একবার রমাদের বাড়িতে আসে। আজও বদর এই সময় মাঠে ফটবল খেলিতেছে, এই ফাঁকে বিথী বদরের রুমে যায়, গিয়েই রমাকে বলে ঃএই রমা আমি বদরদার ঘরে রমা তখন ওদের বড় ঘরখানাতে ছিল, একদৌড়ে এসেই দেখে বদরের রুমে বিথী শুয়ে আছে ঃ বিথী তুই বদর দার বিছানায়! ঃ বদর নাই তাই ঃ দাদা দেখলে বকবে ঃ দাদাও নাই হি-হি-হি—হি অনেকক্ষন হাসাহাসি করে দুজনে।এক পর্যায় বিথী বলল, ঃবদরের বাবা,তোকে অনেক ভারি একটা মালা দিছে--তাই না? ঃ ওইটা মায়ের কাছে-যদি হারিয়ে যায়।চল তোকে দে্খাব এরপর,দুজনেই বদরের রুম থেকে বের হল, রম

রুদ্র ম আল-আমিন এর কবিতা, যন্ত্রণা

               " যন্ত্রণা "           রুদ্র ম আল-আমিন নিজেকে  নিজের মতন              বিসর্জন দিয়ে।                        আজি বেচে আছি                 এ -ওর ধার দেনা দিয়ে। কন্ঠনালী ছিদ্র আমার                               রপ্ত করেছি           ঝোড়ো হাওয়া উরতে চলা। আর্যছিলাম পালছেড়েছি              থাকতে দিসনি তোদের সাথে, তাই বলে কি হারিয়ে গেছি                সবার থেকে। বলছি কথা মোদের তরে বলছি নাকো ভুলে যেতে                                   যাচ্ছি তবে যাই। রাখবি মনে,, সকল যাতন রইবে প্রানে কাঁদবি তবে                 দিচ্ছি তোরে বর হাসবো আমি কাঁদবে তর, আপন যত, কার বা আপন কে করিল? বলতে পারিস?         নিখিল ভারত, রইল পরে কার বা তরে।

রমাদি ০৪

স্কুল ছুটি হয়েছে অনেকক্ষন কিন্ত তবুও হেডমাষ্টার মশাই চেয়ারে হেলান দিয়ে চোঁখ বন্ধ করে বসে আছেন। দপ্তরী নীলু বাহিরে বসে অপেক্ষা করছে কখন স্যার বের হবে।শেষমেশ প্রতিক্ষার প্রহর কাটলো, মাষ্টার মশাই বের হলেন, দপ্তরী পাশে দাঁড়িয়ে অফিস কক্ষ তালাও দিলেন, চাবি হাতে দিতেই দেখলেন , চোঁখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরতেছে।দপ্তরী ভাবল কিছু একটা বলি, আবার ভাবল না থাক। তবু আগ বাড়িয়েই বলল, ঃ বিপিনকে পাঠাবেন স্যার?ওর বোন রমা আর বদর, একই ক্লাসে পড়ে!  বিপিনকে ডেকে আনবো?বিপিনের ছোট বোন রমা একটু ব্যতিক্রমী,কিন্ত ওই একমাত্র বদরের সাথে কথা বলে।  নীলুর ধারনা বিপিনকে বদরদের বাড়ি পাঠালেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। নীলুর বকবকানি শোনার পর হেড মাষ্টার সাব কি যেন ভাবল, তার পরই নিলুকে বলল, ঃযাও ডেকে নিয়ে আসো!  নিলু দেরী না করে দ্রুত চলে গেলেন বিপিনদের বাড়ি। মাষ্টার মশাই ততক্ষণ স্কুল বারান্দায় পা- চারি করছিল।যেহেতু স্কুল এর পাশেই বিপিনদের বাড়ি, সেহেতু নীলুর খুব বেশী দেরী হল না বিপিনকে ডেকে আনতে।  বিপিন, স্যারের সামনে দাঁড়িয়ে নমস্কার করতেই স্যার বলল, ঃবদরদের বাড়ি চেন? ঃ স্যার, শুনেছি মাইল দশেক পশ্চিমে ঃতুমি কাল সকালে ওদের ওখানে একটু য